সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী; তবে কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও মুরগির দাম।
Published : 16 Aug 2024, 10:15 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে অস্থিরতার সময় বেড়ে যাওয়া চালের দাম আরও বেড়েছে; দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি বাড়তি গুণতে হচ্ছে ৪ থেকে ৬ টাকা।
একইসঙ্গে বেড়েছে সবজি ও কাঁচামরিচের দাম। তবে পেঁয়াজ ও মুরগির দাম কিছুটা কমেছে।
রাজধানীর খুচরা বাজারে মোটা যেকোনো চাল প্রতি কেজি এখন ৫৩ থেকে ৫৪ টাকার নিচে মিলছে না। ১৫ দিনের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৬ টাকা।
শুক্রবার কারওয়ান বাজার, তেজকুনিপাড়া বাজার ও চালের বৃহৎ আড়ত বাবুবাজারে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাবুবাজারের অন্তু-সেন্টু রাইস এজেন্সির বিক্রেতা আব্দুল জলিল বলেন, মোটা চালে দুই ধাপে দাম বাড়ছে। মাসখানেক আগে একবার বাড়ছিল। গত ১৫ দিনের ভিতরে আরেকবার দাম বাড়ছে। মোট ৪ থেকে ৫ টাকা দাম বাড়ছে।
কারওয়ান বাজারে খুচরায় মিনিকেট চালের দর গত কয়েকদিন ছিল ৭৫ টাকা কেজি। বিআর-২৮ ৬০ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পাইজাম ৬০ টাকা, হাইব্রিড মোটা চাল, গুটি স্বর্ণা ও গুটি ৫৩ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাড়া মহল্লার দোকানগুলেতে দাম এর চেয়েও বেশি।
খুচরা এই দামের চেয়ে বড় বাজারগুলোতে চালের পাইকারি দর দুই থেকে তিন টাকা কম।
কারওয়ান বাজারের ঢাকা রাইস এজেন্সির বিক্রেতা মো. সায়েম বলেন, আগে মিনিকেট ছিল ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি, এখন হইছে ৭৫ টাকা। সব ধরনের চালে গত ১৫ দিনে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে।
দাম বাড়ার কারণ জানত চাইলে তিনি বলেন, ”এটা তো আমরা বাড়াই নাই। বাড়াইছে মিলাররা। তাদের ধরেন কেন বাড়াইছে। তারা আমাদের জানাইছে যে ধানের দাম নাকি বেশি গেছে এবার।”
নতুন করে চালের দাম বাড়ায় ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন সীমিত আয়ের ক্রেতারা। বেশি ভোগান্তিতে আছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন।
তেজগাঁও এলাকার রিকশাচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ”আমাগোর ডাল-ভাতের দাম কমান লাগব। এইগুলো খাইয়াই আমরা বাঁইচা থাকি।”
নতুন সরকারের কাছে দাম কমানোর দাবি তুলে ধরে তেজকুনিপাড়া বাজারে আজগর আলী নামে এক ক্রেতা বলেন, সবার আগে চালের দাম যেন কমায়। কারণ ভাত প্রধান খাবার। চালের দাম বেড়ে যাওয়া ভালো লক্ষণ না। গরিবের পেটে লাত্থি লাগবে দাম না কমালে।
পেঁয়াজে কমল ১০ টাকা
রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকার মত কমেছে। পাইকারিতে ফরিদপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০২ টাকা ও পাবনার পেঁয়াজ ১১২ টাকা। খুচরায় এর চেয়ে ৫ থেকে ৭ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে খুচরায় বিক্রি হতো কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ-রসুন বিক্রেতা আব্দুল জব্বার বলেন, তিন-চারদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ৮ টাকা কমছে। কিন্তু এই দাম যৌক্তিক না। গত বছর অনেক কম দামে বিক্রি হইছে। পেঁয়াজের আমদানি ভাল হইলে দাম আরও কমানো যাবে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের এই সময়ে পেঁয়াজের দর ছিল ৫৫ টাকা থেকে ৮০ টাকার ভেতরে। আর তাদের দেওয়া তথ্য মতেই বর্তমান দর ৯০ থেকে ১১০ টাকা।
আলুর দাম কমেছে কেজিতে তিন টাকা। পাইকারিতে লাল ও সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি দরে। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লায় দাম কমার প্রভাব খুব একটা দেখা যায়নি। আগের মতোই ৬০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম কমলেও বাজারে চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে রসুন। দেশি ও আমদানি রসুন কিনতে হচ্ছে কেজি প্রতি ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। আদা বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে।
মুরগির দামে স্বস্তি
ব্রয়লারে ৫ টাকা দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা কেজি দরে। সোনালি মুরগিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি দরে।
কারওয়ান বাজারের বাংলা চিকেন হাউজের বিক্রেতা হাসান মাহমুদ বলেন, আন্দোলনের কয়েকদিন সোনালি মুরগির সরবরাহ আটকে থাকার পর এখন মুরগি বেশি আসায় দাম কমেছে।
বাজারে লাল ও সাদা ডিম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা হালি ও হাঁসের ডিম ৭০ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা বাহার উদ্দিন বলেন, ডিমের দাম কমে আবার বাড়ছে। এখন ডজনপ্রতি লাল ডিম ১৪৫ টাকা। কয়েকদিন আগে যা ১৪০ টাকা ছিল।
তবে মাসখানেক আগে ডিমের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা হালিতেও বিক্রি হয়েছে।
চড়া কাঁচামরিচের দর
রাজধানীর খুচরা বাজারে বেশির ভাগ সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে কিনতে পারছেন ক্রেতারা। তবে এখনও চড়া কাঁচামরিচের দাম। খুচরায় প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতা আল আমিন বলেন, বর্তমানে কাঁচা মরিচ, গাজর, টমেটো এগুলোর আমদানি বন্ধ। যে কারণে দাম বাড়ছে। এখন বাজারে সবজির দামও একটু বাড়তির দিকে।
আমদানি বন্ধ থাকলে দাম আরও বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আজ তো ৩০০ টাকা, কাল ৪০০ হইতে পারে। আমদানিকারকদের কাছে শুনছি তিন দিন মাল আমদানি বন্ধ থাকবে।“
আগের দিন বৃহস্পতিবারও এ দোকানি মরিচ বিক্রি করেছেন সর্বোচ্চ ২৬০ টাকায়। বুধবারের দর ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে।
সবজির দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বৃষ্টি ও গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা জানালেন তিনি।
বাজারে মানভেদে বেগুন প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিচিঙ্গা ও পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স কেজিপ্রতি ৫০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, বরবটি ও ধুন্দল কেজি প্রতি প্রতিটি লাউ ৬০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৫০ ও দেশি শসা ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বাহার মিয়া ৭৫০ টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনে বিক্রেতা আল আমিনের দোকানে মরিচ কিনতে গিয়ে হিসাব মেলাতে পারছিলেন না।
হতাশার সুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ”সবজির দাম অনুয়ায়ী মনে হচ্ছে মাংস খাওয়াই ভাল। টমেটোর দাম চায় ১৮০ টাকা। মরিচ নাকি ৩০০ টাকা। এটা কোনো কথা হইলো নাকি? দুইদিন আগেও তো মরিচ ছিল ২০০ টাকা।”
ইলিশের দাম কমেছে?
ভরা মৌসুম চলছে রূপালি ইলিশের। এ সময়ে দাম বেশ কম থাকার কথা থাকলেও ইলিশের দাম তেমন কমেনি। এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনতে গুণতে হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার টাকা। ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম পড়ছে ১৩০০ টাকা।
মাঝারি আকারের রুই ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি, পাঙ্গাস ১৮০ থেকে ২০০, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা।
আব্দুল আওয়াল বলেন, ইলিশের দাম এখনও কমে নাই। সরবরাহ এখনও তেমনভাবে শুরু হয় নাই। অন্য মাছের দাম আগের মতোই আছে। কোনো পরিবর্তন হয়নি এখন পর্যন্ত।
”মাছ হচ্ছে দ্রুত পচনশীল। রপ্তানি না হইলে দাম অনেক কমবে। যদি ইলিশ বেশি ধরা পড়ে তাহলে দাম সর্বনিম্ন হবে ১ হাজার টাকা। এর চেয়ে কমবে না।”
ইলিশ মাছ কিনতে বাজারে এসেছেন শাহ মো. খালিদ বিন মজিদ। তিনি ভেবেছিলেন দাম কিছুটা কমে পাবেন। কিন্তু দাম না কমায় আর কেনা হয়নি তার। বললেন, ইলিশের দাম এক টাকাও কমে নাই। বরং কোনো মাছের দাম কমে নাই।
”আশা ছিল হয়ত কমবে। কিন্তু বাজারে এসে দেখছি উল্টো চিত্র। আসলে সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে দাম কমানো সম্ভব না। অনেকগুলো হাত বেয়ে বাজারে মাছ আসে।”