“৫ টাকার বিস্কুট, কেক, চকলেটে আমরা লাভ করি না। এটা করি মার্কেটে ঢুকতে। এখন দাম বাড়ালে তো ১০ টাকার বিস্কুটেও লাভ সম্ভব নয়”, বলেন আকিজ ফুডস অ্যান্ড বেভারেজের পরিচালক সৈয়দ জহুরুল আলম বলেন।
Published : 16 Jan 2025, 08:24 PM
প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে অতিরিক্ত ভ্যাট প্রত্যাহার করা না হলে সচিবালয়ের সামনে সমাবেশ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ‘বাংলাদেশে অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাপা সভাপতি এম এ হাশেম বলেন, “ভ্যাট বাড়ালেই রাজস্ব আদায় বাড়ে না। রাজস্ব বাড়ানোর অনেক উপায় আছে।
“ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরকার না সরলে সচিবালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব। কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি খাত নিয়ে ব্যবসা করি, যার সঙ্গে সরাসরি শ্রমজীবী ও কৃষক জড়িত। আমরা যদি টমেটো না কিনি তাহলে কৃষকরা তা কোথায় বিক্রি করবেন।”
সম্প্রতি শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ায় সরকার। ভোক্তা পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ৫ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়। এসব পণ্যের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাবারও আছে।
এ অবস্থায় ‘প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে বর্ধিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রস্তাবিত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে’ রাজধানীর একটি ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডাকে বাপা।
সেখানে ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাবারে ভ্যাট বাড়লে বাজারে ১০ টাকার নিচে কোনো খাদ্যপণ্যে মোড়ক পাওয়া যাবে না। ভ্যাট অপরিবর্তিত রেখে রাজস্ব বাড়ানোর বিকল্প উপায় রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
বিকল্প সম্পর্কে এক সাংবাদিক জানতে চাইলে প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, “সরকার যদি আমাদের সঙ্গে বসে, আমরা জানিয়ে দেব, দেখিয়ে দেব; আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক। আমরা বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বসতে চাই।”
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, ভ্যাটের হার বাড়ায় বিস্কুট, কেক, আচার, চাটনি, টমেটো পেস্ট, টমেটো কেচাপ, টমেটো সসসহ প্রকিয়াজাত খাবারের দাম বেড়ে যাবে।
ফলের রস, কোমল পানীয়, কৃত্রিম ঘ্রাণ ও নন-কার্বোনেটেড পণ্যর দামও বাড়বে। খাদ্যপণ্যে ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হওয়া প্যাকেটজাত পণ্য।
আহসান খান বলেন, “এনবিআর তো কোম্পানির কাছে ভ্যাট চায়; পণ্যর দামের সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত থাকে। এখন ভ্যাট বাড়ালে পণ্যর দামও তো বাড়াতে হবে, নইলে ওজন কমাতে হবে।’’
আকিজ ফুডস অ্যান্ড বেভারেজের পরিচালক সৈয়দ জহুরুল আলম বলেন, “৫ টাকার বিস্কুট, কেক, চকলেটে আমরা কোনো লাভ করি না, হয় না। আমরা এটা করি মার্কেটে ঢুকতে। এখন দাম বাড়ালে তো ১০ টাকার বিস্কুটেও লাভ করা সম্ভব নয়।”
এনবিআর রেস্তোরাঁ শিল্পেও ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করেছিল। রেস্তোরাঁ মালিক ও শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে বৃহস্পতিবার আবার তা ৫ শতাংশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ভ্যাট হার আগের অবস্থায় না ফেরানো হলে সড়কে নামার হুঁশিয়ারি দিয়ে সৈয়দ জহুরুল আলম বলেন, “এটা জনবান্ধব সরকারের সিদ্ধান্ত নয়। তারা (এনবিআর) তো আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারত। সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর অনেক পথ আছে।”
এনবিআরকে উদ্দেশ করে বাংলাদেশ বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভুইয়া বলেন, “রাজস্ব বাড়ানোর অনেক পথ আছে, আমরা দেখিয়ে দেব; আমাদের সঙ্গে বসেন।”
এসিআই অ্যাগ্রো বিজনেসের প্রেসিডেন্ট এফ এইচ আনসারি বলেন, “কৃষি প্রধান দেশে খাদ্যপণ্যে ভ্যাট তুলে দেওয়া উচিত। কৃষিতে বাণিজ্যের কারণে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। আমরা যে পণ্য বানাই তা সাধারণ মানুষ খায়; ধনীরা খায় না। দাম বাড়ালে সাধারণ মানুষের উপর পড়বে।’’
সারা দেশে বাসায় সদস্য সংখ্যা চারশত। এর বাইরেও প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান প্রক্রিয়াজাত খাবার উৎপাদন করছে বলে জানানো হয়।
দেশে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাবারের কাঁচামালের ৮০-৯০ শতাংশই অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়। এসব পণ্যর রপ্তানি বাজার বতর্মানে এক বিলিয়ন ডলার।
বাপা সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হকের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে এসএমসি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ নাসির, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের চিফ অপারেটিং অফিসার পারভেজ সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।