নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রম ও অনিয়মের কারণে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, বলেন তিনি।
Published : 23 Aug 2024, 01:15 AM
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি নগদে প্রশাসক বসানোর পরদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বললেন, কোম্পানিটি অবৈধভাবে ডিজিটাল মানি তৈরি করেছে, যা কোনোভাবেই ‘সঠিক কার্যক্রম নয়’।
তার ভাষ্য, নগদে যে পরিমাণ টাকা জমা আছে, তার চাইতে বেশি পরিমাণ ডিজিটাল মানি তৈরি করা হয়েছে।
ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন পরিচালনাকারী এ কোম্পানির ডিজিটাল লাইসেন্স ‘পর্যালোচনা’ করার কথাও বলেছেন গভর্নর।
‘নিয়মবহির্ভূত ও অনিয়ম সংঘটিত হওয়ার কারণে’ আমানতকারীদের স্বার্থ রুক্ষায় নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদ সম্মেলনে এসে নগদ প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন আহসান এইচ মনসুর।
আগের দিন বুধবার পর্ষদ ভেঙে গিয়ে নগদে প্রশাসক এবং তার সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ছয়জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিন গভর্নরের সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে নগদের বিষয়টি সামনে আসে। একজন সাংবাদিক জানতে চান, ‘নগদ সম্প্রতি ডিজিটাল ব্যাংকিং লাইসেন্স পেয়েছে, তাই ডিজিটাল ব্যাংকিং লাইসেন্স নগদের জন্য বলবৎ থাকবে কি না?“
এ প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ”এই পর্যায়ে বলব আমরা আবার নগদের ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রসেস রিভিউ করব। তাই সেই কনটেক্সটে এটা বিবেচিত হবে।
"নগদকে যদি পুনর্গঠন করা হয়, নগদ যদি আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তাহলে আবার ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য হবে।"
নগদে প্রশাসক দিল বাংলাদেশ ব্যাংক
লাইসেন্সের ২ মাস না যেতেই নগদের মালিকানা যাচাইয়ের উদ্যোগ
এ সময় সেই সাংবাদিক আবার প্রশ্ন করেন, ‘তাহলে কি আমরা বলতে পারব নগদের ডিজিটাল ব্যাংকিং কার্যক্রম হল্টেড (স্থগিত), এটা বলা যায়?’ জবাবে গভর্নর বলেন, "হ্যাঁ, আমরা তাদের ডিজিটাল ব্যাংকিং লাইসেন্স নিয়ে আবার রিভিউ করব। যদি যোগ্য হয় তাহলে আবার নতুন করে লাইসেন্স দেওয়া হবে।"
ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে সরকার পতনের পর ক্ষমতার পালাবদল হলে বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেন। তিনি আর্থিক খাতে অনিয়ম দূর করে সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।
এরমধ্যেই গত ২০ অগাস্ট ডাক বিভাগের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি হিসেবে প্রচার পাওয়া নগদের ডিজিটাল ব্যাংকের পাঁচ বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়ার খবর আসে। এর দুই দিনের মাথায় নগদে প্রশাসক বসানো হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে সংবাদ সম্মেলনে এসে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর নগদের ‘মালিকানার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন’ আছে বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “তাছাড়া নগদের আইনগত রেজিস্ট্রেশন বা সার্টিফিকেট পুরোপুরি ছিল না। এভাবেই কয়েক বছর ধরে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু এটা কোনোভাবেই কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা নয়। তাছাড়া সাধারণ মানুষের টাকা এ প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে। তাই আমানতকারীর স্বার্থ বিবেচনা করেই প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।”
তিনি বলেন, “নগদকে আমরা ধবংস করতে চাই না। নগদকে বিকাশের মতই স্বচ্ছ ও সব আইনকানুন মেনে আন্তর্জাতিকমানের একটি আইকনিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে উঠতে হবে। আইকনিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিকাশ। তাই আমরা চাই নগদকে হয়ে উঠতে হবে বিকাশের মত।”
গভর্নর বলেন, “এ রকম একটি প্রতিষ্ঠানকে লাভে নিতেই ১০-১২ বছর লেগে যায়। নগদ কত লাভ করেছে তা আমরা এখনও জানি না। তাদের যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছিল তা নসাৎ করা হয়েছে।
“আমাদের একটা অডিট করতে হবে। কারণ পরিস্থিতি কী ছিল তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।"
নগদ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে তুলে ধরে তিনি বলেন,“প্রধান উদ্দেশ্য সরকারিভাবে এটা দেখানো হয়েছিল নগদ ডাক বিভাগের একটি প্রতিষ্ঠান। আবার ডাক বিভাগের বড় শেয়ার এখানে রয়েছে। তাই সরকার ডাক বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল। অর্থাৎ নগদের নিয়ন্ত্রণ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।
“আমানতকারীরা যদি কোনো রকমের ক্ষতির মধ্যে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যোগ্য প্রতিযোগিতা করে মার্কেটে তাদের টিকে থাকতে হবে। অন্যায়ভাবে ব্যবসা করা যাবেনা। নগদকে অনেক রকম বিশেষ সরকারি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যা পক্ষপাতিত্ত্য ছিল। এটা ঠিক নয়। কারণ সবাইকে সমানভাবে সুবিধা প্রদান করতে হবে।”
তিনি বলেন, নগদের সব কার্যক্রম যেভাবে চলছে ঠিক সেভাবেই চলবে। কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটবে না। তাই কোন ধরনের পরিবর্তন এ মূহুর্তে হচ্ছে না। গ্রাহকরা আগের মতই সুবিধা প্রদান দেওয়া হবে।
আহসান মনসুর বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা আগামীতে নগদকে যোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। তাদের কাছ থেকে টেকনিক্যাল সহায়তা পাওয়া যাবে। আমরা যদি নগদকে নিয়ে গর্ব বোধ করতে পারি।
”ড. ইউনুস বলেছেন যে নগদকে একটি আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলা। ভোক্তাদের খরচ কমিয়ে আনার মাধ্যমেই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে এবং আমরা এটাই চাই। প্রতিযোগিতা বাড়লে এ খাত আরও বেশি সমৃদ্ধ হবে।”
তিনি বলেন, “এ মূহুর্তে নগদ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে এটা টেক ওভার করা হয়েছে। পরবর্তীতে সরকার এখান থেকে শেয়ার বিক্রি করবে।
”ডাক বিভাগের অংশ দেখিয়ে নগদ সেবা প্রদান করছিল। আবার ডাক বিভাগের অংশ দেখিয়ে এখানে দুর্ভাগ্যবশত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বাইরে থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানকে আগেই হস্তান্তর করা উচিত ছিল। তাও সঠিকভাবে কার্যক্রমক পরিচালনা করলেও সেটা মানা যেত। কিন্তু তারা তাদের কার্যক্রম আইনের মধ্যে পরিচালনা করেনি।”
চলতি বছর মে মাসে নগদের ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তারা এক সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আবার আরেক সময় ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন করেছে। তাদের লক্ষ্য কিংবা উদ্দেশ্য কোনটাই ঠিকছিল না।
“নগদকে নিয়ে একটা অডিট করতে হবে। নগদ লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল না। নগদকে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে রাখা হবে না। আমরা চাই নিয়মনীতির মাধ্যমে এটাকে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া।”
আরও পড়ুন: