আগের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসক বৃহস্পতিবার দায়িত্ব নেবেন, বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা।
Published : 21 Aug 2024, 09:58 PM
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি নগদে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক; যিনি আগামী এক বছরের জন্য ডাক বিভাগের এ ডিজিটাল লেনদেন সেবা তত্ত্বাবধান করবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পদমর্যাদার এ প্রশাসককে সহায়তার জন্য নগদ ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে আরও ছয় কর্মকর্তাকে নিয়োগ করা হয়।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ আদেশে এ নিয়োগ দেওয়ার কথা জানানো হয়।
এদিন নগদের আগের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, “নতুন প্রশাসক আগামীকাল বৃহস্পতিবার দায়িত্ব নেবে। প্রশাসকরা দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্থিক নিরীক্ষার পর নগদের ভবিষৎ সম্পর্কে জানা যাবে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক প্রশাসক নিয়োগের তথ্য জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারাই এখন থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাবে।
প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক বদিউজ্জামান দিদারকে, যিনি এখন চট্টগ্রাম অফিসে কর্মরত রয়েছেন।
আদেশে বলা হয়েছে, “তাকে প্রধান কার্যালয়ে বদলিপূর্বক এক বছরের জন্য প্রশাসক নিয়োগ করা হল।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সস ডিপার্টমেন্ট-১ এর অভ্যন্তরীণ এ আদেশে প্রশাসকের সহায়ক কর্মকর্তা হিসেবে ছয় কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।
তারা হলেন- পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ হাবিবুর রহমান, যুগ্ম পরিচালক আনোয়ার উল্ল্যাহ, পলাশ মন্ডল, উপ-পরিচালক চয়ন বিশ্বাস, মোঃ আইয়ুব খান এবং মতিঝিল অফিসের যুগ্ম পরিচালক আবু ছাদাত মোহাম্মদ ইয়াছিন।
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে নগদ। পরে এই এমএফএস কোম্পানিকে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের পাঁচ বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়ার দুই দিনের মাথায় এখন নগদে প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে প্রশাসক নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন নগদ এর সদ্য সাবেক ও প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক।
নগদ এর জনসংযোগ বিভাগের মাধ্যমে পাঠানো প্রতিক্রিয়ায় মিশুক বলেন, ”বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। নগদকে জড়িয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে অপপ্রচার চলছিল এর মাধ্যমে তার অবসান হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
“গত কয়েক দিন অপপ্রচারের এ সকল বিষয় নিয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছিলাম। অবশেষে তারা প্রশাসক নিয়োগের মতো একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের ক্যাশলেস যাত্রায় একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে বলে আমরা মনে করি।“
এর আগে কয়েকটি ব্যাংকসহ দেশের আর্থিক খাতের বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি এবং শীর্ষস্থানীয় মোবাইল অপারেটরেও সরকার প্রশাসক নিয়োগ করার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে একটা গোষ্ঠী নগদ নিয়ে যেভাবে চক্রে মেতে উঠেছিল তা বন্ধ হবে। নগদ বিশ্বাস করে গত পাঁচ বছরের গ্রাহক সেবায় নগদ যেভাবে শীর্ষে ছিল সেভাবেই শীর্ষেই থাকবে।“
এর আগে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেওয়ার আড়াই মাস পার না হতেই নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও শেয়ারধারীদের তথ্য খতিয়ে দেখার পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ক্ষমতার পালাবদলের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নতুন গভর্নর নিয়োগের সপ্তাহখানেকের মধ্যে ডাক বিভাগের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি হিসেবে প্রচার পাওয়া নগদের বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর গত সোমবার নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের তথ্য জানতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
চিঠিতে উদ্যোক্তা কোম্পানিগুলোর নিবন্ধনপত্র যুক্ত করে সেগুলোর তথ্যাদি যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে সংগ্রহ করে জমা দিতে বলা হয়।
ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন সেবা দিতে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি হিসেবে ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে নগদ। পরে চলতি বছর জুনে নগদকে ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন তফসিলি ব্যাংকের তালিকায় যুক্ত করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ২৮ মে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় নগদকে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে গত বছরের ৮ আগস্ট নগদ এবং কড়িকে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার নীতিগত অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর যাত্রা ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ। শুরু থেকেই বলা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সেবা। তবে ডাক বিভাগের সঙ্গে অংশীদারত্ব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া এমএফএস সেবা দেওয়া নিয়ে শুরু করে আপত্তি ও সমালোচনার মুখে পড়ে কোম্পানিটি। কার্যক্রম শুরুর পর সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এ নিয়ে আপত্তি উঠতে থাকে। এ অবস্থায় নগদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক অনুমোদন নিয়ে এমএফএস হিসেবে সেবা পরিচালনা করছে নগদ। নগদে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের কোনো মালিকানা নেই, তবে ডাক বিভাগের সেবা হিসেবে ব্যবসা করার লাইসেন্স রয়েছে। এ জন্য নগদ থেকে রাজস্ব ভাগ পায় ডাক বিভাগ।
প্রতিষ্ঠানটিকে অনুমোদন দেওয়ার ধাপ হিসেবে নানা প্রক্রিয়া শেষে গত বছরের এপ্রিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নগদ ফাইন্যান্স পিএলসির অনুমোদন দেয়।
এরপর গত মে মাসে এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, নগদ ফাইন্যান্স পিএলসিকে বাংলাদেশে অর্থায়ন ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স প্রদান করা হয়। তবে কিছুদিন পর নগদ নিজে থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে এ লাইসেন্স ফিরিয়ে দেয়।