বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু সম্পূরক প্রশ্নে ব্যাংকটির ‘মালিকানা পরিবর্তন’ নিয়ে জানতে চান।
Published : 09 May 2024, 10:06 PM
অনিয়ম ও খেলাপি ঋণে জর্জরিত ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পর্ষদের দায়িত্ব নেওয়ার মধ্যে প্রথম প্রজন্মের এ ব্যাংকের ‘মালিকানা পরিবর্তন’ নিয়ে সংসদে ওঠা এক প্রশ্নে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেছেন, বিষয়টি তার ‘খুব বেশি স্পষ্ট নয়’।
বৃহস্পতিবার সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু এক সম্পূরক প্রশ্নে ব্যাংকটির ‘মালিকানা পরিবর্তনের’ বিষয়ে জানতে চান।
জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী আরও বিস্তারিত জেনে এ বিষয়ে বলতে পারবেন বলে সংসদকে অবহিত করেন।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদের প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে গত ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ৯ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে।
এদিন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে হয় এ প্রশ্নোত্তর পর্ব। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে জবাব দেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী।
সম্পূরক প্রশ্নে চুন্নু বলেন, “একটি দেশের অর্থনীতির প্রাণ হল ব্যাংক খাত। দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক খুবই দুর্বল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক অন্য কয়েকটি সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তার মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক অন্যতম।
“হঠাৎ করে দেখলাম একীভূত হবার প্রক্রিয়ার মধ্যেই ন্যাশনাল ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন হল। তাহলে কি ব্যাংকটি একীভূত হবার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে?”
জবাবে ওয়াসিকা আয়শা বলেন, “একাদশ সংসদে ব্যাংকিং কোম্পানি রিলেটেড একটি আইন মার্জার অ্যাকুইজিশন অ্যাক্ট পাস হয়েছে। গত ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন ইস্যু করেছে।
“ব্যাংক দুর্বল হলে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে মার্জার হওয়ার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, সেই গাইডলাইন অনুযায়ী যদি কোনো ব্যাংক মনে করে তারা আরেকটি ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ হবে, তাদের শেয়ারহোল্ডাররা যদি মনে করে, তখন এজিএম থেকে শুরু করে সব প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে।
“এটা এমন না যে আজ মনে করলাম ব্যাংক ‘এ’ এর সঙ্গে ব্যাংক ‘বি’ মার্জ হবে এবং তাদের একসঙ্গে করে দিলাম। পদ্ধতিটা কিন্তু সে রকম না।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মাননীয় সদস্য (মুজিবুল হক), একটি ব্যাংকের কথা বলেছেন। সেটার মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে বলতে দেখলাম। ওনাদের (ন্যাশনাল ব্যাংক) তো বোর্ড পরিবর্তন হয়েছে, নতুন বোর্ড এসেছে। নতুন বোর্ডে ব্যাংকের শুরু থেকে যারা ছিলেন তাদের অনেকেও আছেন। মালিকানা পরিবর্তনের বিষয়টি আমার কাছে খুব স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জেনে মাননীয় সদস্যকে জানাব।”
এর আগে অর্থমন্ত্রীকে সংসদ সদস্যদের করা লিখিত প্রশ্নগুলোর লিখিত জবাব সংসদে দেওয়া হয়।
অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করা প্রসঙ্গে
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন সম্পূরক প্রশ্নে আগামী অর্থবছরে অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হবে কি না জানতে চান।
জবাবে মন্ত্রী বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেটে এটা আছে কি না আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। বলা সম্ভব নয়। বাজেট প্রস্তাব এখনও ফাইনাল হচ্ছে। আগের বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ থাকলে আগামী বাজেটেও সেই সম্ভাবনা আছে।”
সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই
লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা এ মুহূর্তে সরকারের নেই।
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর
সিলেট-৩ আসনের হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর। এ জন্য সকল প্রকার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সরকার।
এরই মধ্যে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিকে অনেকাংশে সংযত করা গেছে দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও যুদ্ধকেন্দ্রিক নিষেধাজ্ঞার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাস ও সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যাপক মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন সংকট অনুভূত হয়েছে।
“পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতের ফলে এ সংকট ঘনীভুত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।”
কোনো কৃষি ঋণ মওকুফ হয়নি
সংরক্ষিত আসনের শাম্মী আহমেদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদসহ চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত কোনো কৃষি ঋণ মওকুফ করা হয়নি। এ সংক্রান্ত কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। ব্যাংক আমানতকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ কৃষকদের মধ্যে ঋণ হিসেবে বিতরণ করে থাকে। আমানতকারীদের সুদসহ অর্থ ফেরত দিতে হয়, বিধায় ব্যাংকের পক্ষে কৃষি ঋণ মওকুফ করা সম্ভব হয় না।“