বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের ঘাটতি কমে আসলেও ফাইন্যান্সিয়াল একাউন্ট এবং ওভার অল হিসাবে ঘাটতি আগের বেড়েছে।
Published : 03 Jul 2023, 10:23 AM
ডলার সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানামুখী উদ্যোগ অব্যাহত থাকায় গত অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আরও কমে এসেছে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যেও ঘাটতি কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।
বাণিজ্য ঘাটতির এই পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৪ দশমিক ৩২ শতাংশ কম। ২০২২ সালের জুলাই-মে সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।
এই ১১ মাসের হিসাবে চলতি হিসাব ভারসাম্যে ঘাটতি কমেছে ৭৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে যেখানে ১৭ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি ছিল, সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে তা কমে হয়েছে ৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।
চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা মানে নিয়মিত লেনদেনে কোনো ঋণ করতে হয় না দেশকে। আর ঘাটতি থাকলে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
জুলাই-মে সময়ে আমদানি হয়েছে ৬৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের ওই সময়ে ৭৫ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।
জুলাই-মে সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪৭ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা আগের অর্থবছরের আলোচিত সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসে রপ্তানি থেকে আয় ছিল ৪৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার।
রেকর্ড ৩৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি এবং বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে ১৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছর শুরু করেছিল বাংলাদেশ।
এই প্রেক্ষাপটে ২০২২ সালের জুলাই থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার প্রভাবে চলতি হিসাব ভারসাম্যের ঘাটতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।
তবে ১১ মাসের হিসাবে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট এবং সামগ্রিক লেনদেনে (ওভারঅল ব্যালেন্স) ঘাটতি বেড়েছে, যা অর্থনীতিতে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি করছে।
মে শেষে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ২০২২ সালের মে মাসে ১৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
আর ১১ মাসে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালেন্স) ঘাটতি রয়েছে ৮ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৫ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, এক বছরে ঘাটতি বেড়েছে ৫৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ঘাটতি বেড়ে গেলে বিনিময় হারে চাপে পড়ে। টাকার মান কমে গেলে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ পরিশোধে খরচ বেড়ে যায়। তাতে রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি হয় এবং আমদানি ব্যয় বেড়ে গিয়ে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দেয়।
ডলার সঙ্কটের মধ্যে রিজার্ভ কমে আসায় সরকার আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অর্থায়ন পাওয়ার চেষ্টা শুরু করে।
এর অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এর কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। এর প্রথম কিস্তি হিসেবে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার গত ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকেই বাংলাদেশ ব্যাংক হাতে পেয়েছে। অবশিষ্ট অর্থ ২০২৬ সালের মধ্যে কয়েক কিস্তিতে পাওয়া যাবে।
এছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে ৫০৭ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণে দিচ্ছে ৪০ কোটি ডলার। জুন মাসেই জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সঙ্গে দুই হাজার ২৭৩ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।
পাইপ লাইনে থাকা এসব ঋণ ছাড়ের সঙ্গে সঙ্গে চলতি হিসাব ও ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের ঘাটতি কমতে থাকবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ। মে মাস শেষে তার ইংগিতও মিলতে শুরু করেছে।
গত এপ্রিল শেষে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ঘাটতি ছিল ৩ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। মে মাস শেষে তা কমে হয়েছে ২ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার।
আমদানি-রপ্তানির ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখা রেমিটেন্স এর প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের ১১ মাসে এক হাজার ৯৪১ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। যেখানে আগের অর্থবছরের ১১ মাসে পাঠিয়েছিলেন এক হাজার ৯১৯ কোটি ডলার। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ।