স্মার্ট বিজিএমইএ গড়তে ফোরামের ১১ দফা প্রতিশ্রুতি

ভোটার তালিকা নিয়ে আপত্তি থাকলেও ‘শিল্পের স্বার্থে’ ভোটের মাঠ ফাঁকা না ছেড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকার কথা বলেছেন এ প্যানেলের নেতারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2024, 05:56 PM
Updated : 26 Feb 2024, 05:56 PM

পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে ইশতিহার ঘোষণা করতে গিয়ে ‘অযাচিত ভোটার তালিকা’ নিয়ে আবারও আপত্তি তুলেছে ফোরাম নামের প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল।

তবে এর মাঝেও ‘শিল্পের স্বার্থে’ ভোটের মাঠ ফাঁকা না ছেড়ে দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকার কথা বলেছেন এ প্যানেলের নেতারা।

সোমবার ঢাকার হোটেল র‌্যাডিসন ব্লুতে ফোরাম এর ইশতিহার ঘোষণা করার সময় এসব কথা বলা হয়।

নির্বাচনে ফোরামের দলনেতা ফয়সাল সামাদ স্মার্ট বিজিএমইএ গঠনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের এ অংশের ১১ দফা তুলে ধরেন তিনি।

এ সময় সংগঠনের সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা, আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ ও রুবানা হক বক্তব্য রাখেন।

ফোরামের সভাপতি এম এ সালাম বলেন, “আমাদের নেতারা যতবার ক্ষমতায় এসেছে যথাসময়ে ক্ষমতা হস্তন্তর করেছে। রাইট টাইম কোয়ালিটি সার্ভিস আমরা বারবার দেখিয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের বন্ধুরা বারবার এক্সটেনশন নিয়েছেন।“

ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “এবার হালনাগাদ ভোটার তালিকায় ৪০০ ভোটার বাড়ল। আমরা দেখলাম সেখানে ৪৪৭ জনের ব্যবসায়িক টিআইএন নেই। আমরা অভিযোগ দেওয়ার পর আপিল বোর্ড ৬৭ জনের ক্ষেত্রে তা গ্রহণ করে তাদের বাদ দিয়েছে। কিন্তু বাকিদের বিষয়ে উত্তর কই?

“আমরা যে স্বচ্ছতার কথা বলি এখানে সেটা কোথায়? আগামী ৯ মার্চ পর্যন্ত সময় আছে বিষয়টি সুরাহা করার। আমরা সেই অপেক্ষায় থাকব।“

সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা বলেন, বিজিএমইএ পোশাক খাতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এখানকার নেতৃত্বও গুরুত্বপূর্ণ। ইতোপূর্বে ফোরাম নেতৃত্বে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে।

“যে ৩৫ জনকে প্রার্থী হিসেবে নিয়ে এসেছি এটি সব দিক থেকে ব্যালেন্সড পর্ষদ। ফয়সাল সামাদ খুবি প্রফেশনাল পার্সন। তাকে সুযোগ দিলে তিনি আপনাদের আশা আকাঙ্খার মূল্য দেবেন।“

সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, বিজিএমইএ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে কারখানা মালিকরা স্বস্তিতে থাকতে পারে। এজন্য লিডারশিপ খুবই শক্ত ভূমিকা রাখতে পারে। নির্বাচনের মাধ্যমে সঠিক নেতৃত্ব বেছে নেওয়া যেতে পারে।

ফোরামের নেতৃত্বে বিজিএমইএ পরিচালিত হওয়ার সময় বন্ডেড ওয়ারহাউজ, চাইল্ড লেবার ইস্যু, টার্মিনাল হ্যান্ডেলিং চার্জ কমিয়ে আনা, জিএসপি সুবিধা নিয়ে আসাসহ অন্যান্য সুবিধাগুলোর কথা তুলে ধরেন তিনি।

সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, যে শিল্পখাত বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যায় সেটার নির্বাচন প্রক্রিয়া কেন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এখানে বারবার অনিয়ম হলেও প্রতিবাদ করা থেকে বিরত থাকতে হয়। কারণ, বলা হয় একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এখানে চুপ করে থাকার সংস্কৃতি চালু হয়েছে।

দায়িত্ব পালনের শেষ পর্যায়ে একটি মহলের ‘গুন্ডামির’ শিকার হয়েছিলেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ফোরামকে জয়ী করলে শিল্পের জয় হবে। কোভিডের সময় মাথা স্থির করে কাজ করতে হয়েছে। পরবর্তীতে কিছু ইউডিতে অনিয়ম দেখে সেখানে হাত দেওয়া হয়। সেখানে বহু কেলেঙ্কারি দেখতে পাওয়া যায়।

“একদিন দেখলাম বাইরে অনেক গুন্ডা ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এমনটি করা হয়েছিল। কিন্তু বিজিএমইএ তো কোনো গুন্ডামির জায়গা নয়।“

কী আছে ইশতিহারে

ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ বলেন, “বিগত ১১টি পর্ষদে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। সেই সব অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। এবার যদি সঠিক নেতৃত্ব ঠিক করা না যায় তাহলে বার্ষিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের এই শিল্প তা অবস্থান ধরে রাখতে পারবে না।“

তিনি বলেন, ফোরামের নেতৃত্বে থাকাকালে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের হাত থেকে বিজিএমইএ প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে আরএসসি গঠন করা হয়েছে। দায়িত্ব পেলে আরএসসিকে আরও শক্তিশালী করা হবে।

“বর্তমানে বায়ার মার্কেট হিসাবে আমরা কাজ করছি। এটাকে সেলার মার্কেটে রূপ দেওয়ার কাজ করব। তিন মাস পর পর সদস্যদের কাছ থেকে আমাদের কাজের মূল্যায়ন নেব। নির্বাচিত পরিচালকদের বসিয়ে না রেখে সবার মাঝে দায়িত্ব ভাগ করে দেব।“

ফোরামের প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে-স্মার্ট বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠা, স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠা, পোশাক শিল্পের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন, ক্রেতার জবাবদিহিতা ও পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, শিল্পের নিরাপত্তা, শ্রম অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষা, রুগ্ন শিল্প এবং ব্যবসা থেকে সম্মানজনক প্রস্থানের নীতি প্রণয়ন।