সিটি করপোরেশন বলছে বিজনেস হাব হবে। কিন্তু সেটি কেমন সে বিষয়ে ধারণা নেই কর্মকর্তাদেরই। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত রুটি রুজি নিয়ে।
Published : 07 Apr 2024, 01:43 AM
ঢাকার কেন্দ্রস্থলে কৃষিপণ্যের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত কারওয়ান বাজারে উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের এক সরকারি বার্তা এসেছে; যার ফলে পাঁচ যুগের বেশি সময়ের এই বাজারটি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
অবশ্য এখান থেকে বাজার উচ্ছেদের ঘোষণা এটাই প্রথম নয়, আর উচ্ছেদের পর এখানে কী হবে, সে প্রশ্নের স্পষ্ট কোনো উত্তর কখনও মেলেনি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মনে করছে, এই বাজার রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অফিসপাড়ার পরিবেশ নোংরা করছে এবং বাজারের কারণে পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করায় তা যানজট বাড়িয়ে দিচ্ছে। সে কারণে এই বাজারকে শহরের প্রবেশমুখে গাবতলী নিয়ে যাওয়া হবে।
পরে কারওয়ান বাজারে বহুতল ভবন নির্মাণ করে সেখানে ‘বিজনেস হাব’ গড়ে তোলা হবে। অবশ্য প্রচলিত একটি ব্যবসাকে সরিয়ে নতুন করে কী ধরনের ‘বিজনেস হাব’ করা হবে তা জানাতে পারেনি নগর কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই বাজার সরালে মানুষের কাঁচাবাজারের অভ্যস্থতায় বড় ধাক্কা লাগবে। ব্যবসায়ীরা পথে বসবেন, ক্রেতারাও কম দামে পণ্য কেনার সুযোগ হারাবেন। গাবতলী বা অন্য বাজার থেকে পণ্য কিনে নিয়ে এলে খরচ পড়বে বেশি, পণ্যের বাড়তি দাম দিতে হবে ক্রেতাদের।
দুশ্চিন্তায় খলিলরা
যে আড়ৎ সবার আগে ভাঙা হবে বলে শোনা যাচ্ছে সেখানে ২০ বছর ধরে আলু পেঁয়াজের ব্যবসা চালাচ্ছেন মোহাম্মদ খলিলুর রহমান। দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন তিনি।
খলিল বলেন, “দোকান ভাইঙা দিলে ভিক্ষা ছাড়া কোনো পথ থাকবে না আমার। ঢাকাসহ সারা দেশে আমার পাওনা আছে কোটি টাকার মত। মার্কেট বন্ধ হইলে কোনো টাকাই পাওয়া যাইব না আর।”
তিনি বললেন, “বাজার উচ্ছেদ দোকান মালিকদের থেকে, দোকান ভাড়া নিয়ে যারা ব্যবসা করেন, তাদের ক্ষতি বেশি হবে। ধরেন আমার দোকানের বাজার মূল্য আছে হয়ত ৫০ লাখ টাকা। আমি অ্যাডভান্স দিছি ১০ লাখ। ভাঙলে আমার পুরা টাকাটাই মাইর যাইব।
“মাঠে চাষিদের কাছে দাদন আছে। ৮০ লাখ টাকা আছে অরিজিনাল বাকি। এই দোকান দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা করে লোন নিয়েছে এমন লোকও আছে। তারা লোন শোধ দেবে কেমনে?”
এই দোকান থেকে মালিক মাসে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ভাড়া পায়। আমিন বাজারে গেলে এ রকম একটা ঘর থেকে ১০ হাজার টাকা ভাড়াও পাওয়া যাবে না বলছেন তিনি।
“ওইখানে কে যাইব?”- এই প্রশ্নও আছে তার।
দাদনের কী হবে
আলমগীর হোসেন নামের একজন আড়তদার বলেন, “আমরা চারটা ভাই এই বাজারে ব্যবসা করে খাই। যদি এই বাজার উচ্ছেদ হয় তবে বংশসুদ্ধা রাস্তার ফকির হয়া যাব। আমার মত আরও হাজার হাজার পরিবার আছে এই বাজারে।
“প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকূল আবেদন, উচ্ছেদ কইরা আমাদের মাইরা ফালায়েন না।”
এই উচ্ছেদের ঘোষণায় তার উৎকণ্ঠার আরেক কারণ হল, এখানে যেন পণ্য পাঠায়, সেজন্য কৃষক বা ব্যবসায়ীদের দেওয়া মূলধন বা দাদনের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা।
তিনি বলেন, “দাদন বাবদ আমাদের কোটি কোটি টাকা ইনভেস্টমেন্ট রয়েছে। মার্কেট গেলে সব যাইব। ব্যাংকে লোন নিতে গেলে প্রচুর কাগজপত্র জমা দিতে হয়। আর আমরা কৃষকদের টাকা দিই কোনো কাগজপত্র ছাড়া। আমাদের সাথে কৃষকরাও জড়িত।”
কী হবে খুচরা বিক্রেতাদের
কাঁচামাল আড়তের দক্ষিণ পাশে টিনশেডে দিনের বেলায় খুচরা সবজি বিক্রি করেন ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের বাসিন্দা মোহাম্মদ রাসেল। রাতে এই আড়তেই চলে পাইকারি বেচাকেনা।
দিনের অর্ধেক সময় ব্যবসা করার জন্য মাসে ভাড়া দিতে হয় ছয় হাজার টাকা। গত নয় বছর ধরে এই ব্যবসায় মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি।
তার বিবেচনায় এই কাজ করলে কারও লোকসান, ক্রেতাদেরও লোকসান।
তিনি বলেন, “এই বাজারের মত সুখ কোনোহানো (কোথায়) পাইত না। এইখানে ব্যবসা কইরাও লাভ আর যারা কিনতে আয়ে তাদেরও লাভ।”
তাহলে কী করবেন?- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরারে উঠায়া দিব শুনতাছি। ভাইঙা দিলে কি সরকারের লগে জোর করে থাকতাম পারবাম?”
টিনশেডে গত ২০ বছর ধরে আলু-পেঁয়াজের ব্যবসা করছেন মো. জাহাঙ্গীর। উচ্ছেদের খবরে তার কপালেও পড়েছে দুশ্চিন্তার ছাপ।
“যে এই কাওরান বাজার ভাঙব, হের ওপরে আল্লার গজব নাজিল হইব। কাঁচাবাজার থাকলে পরিবেশ তো একটু নোংরা হইবই। এই বাজার যেইখানে নিব সেইখানেই হইব। এর জন্য কি বাজার তুইল্যা নিতে পারে? এইটা কী জ্ঞানের কথা?”
কীভাবে গড়ে উঠল কারওয়ানবাজার
ঢাকা জেলার সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মোট ৫০ একর জমি জুড়ে রয়েছে কারওয়ান বাজারের বাণিজ্যিক ব্যস্ততা। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে আম্বর শাহ জামে মসজিদের পাশে কিছু ব্যক্তির উদ্যোগে শাক সবজি ও অন্যান্য তাজা কৃষিপণ্যের পসরা নিয়ে এই বাজার বসতে শুরু করেছিল।
শহরের কলেবর বৃদ্ধির পাশাপাশি জনবসতির ঘনত্বও এখন অনেক বেড়েছে। ফলে কারওয়ান বাজারকে কেন্দ্র করে এখানে দিনরাত ক্রেতা, বিক্রেতা, শ্রমিক, পণ্যপরিবহনের গাড়ির ব্যস্ততা লেগেই থাকছে।
খন্দকার মাহমুদুল হাসানের ‘ঢাকা অভিধান’ বইয়ে আছে, কারওয়ান বা কারাভ্যান সরাইখানা থেকে কারওয়ান বাজার কথাটি এসেছে।
মুঘল যুগে সড়কের পাশে যে সরাইখানা ছিল তা থেকে স্থানটির এই নাম হয়েছে। এখানে খাজা আম্বারের সেতু ও খাজা আম্বরের মসজিদ আছে, সবই সুবেদার শায়েস্তা খানের আমলে নির্মিত হয়েছিল।
এই সব ঘিরে তৈরি হলেও এখানকার বাজারটি এত প্রাচীন নয়। বাজারের বর্তমান ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত শতকের মাঝামাঝিতে এখানে নিম্নাঞ্চল ভরাট করে ও জঙ্গল পরিষ্কার করে জায়গার দখল নিয়ে ব্যবসায়ীরা উদ্যোগী হয়েই ধীরে ধীরে আড়ত গড়ে তোলেন। আদতে নামটি কারওয়ান হলে লোকমুখে তা কাওরানবাজার হয়ে গেছে।
আড়তদার সাইফুর রহমান জানান, ১৯৬০-এর দশকে কারওয়ান বাজারে কাঁচাপণ্যের ব্যবসা জমে উঠে। অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চল, জঙ্গলসদৃশ ও আবর্জনার ভাগাড় হিসাবে একটি গুরুত্বহীন অঞ্চলে হোগলাপাতার ছাউনি দিয়ে অস্থায়ী ব্যবসা গড়ে তুলতে শুরু করেছিলেন কিছু উদ্যোক্তা। ব্যবসায়ীরা মাটি এনে ভরাট করেছেন।
“আমরা ব্যবসায়ীরা ১৯৮৩ সালে ৩ লাখ টাকা করে সালামি দিয়ে ডিআইটির কাছ থেকে আড়ত বরাদ্দ নিয়েছিলাম। তারা আমাদেরকে সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। ১৯৯০ সালের দিকে এই ভবনের কাজ শুরু হয়। ১৯৯৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসায়ীদেরকে বিল্ডিং বরাদ্দ দেওয়া হয়।
“বছরে এখনও ৩৬ লাখ টাকা করে খাজনা দেওয়া হয়। ৪০০ বর্গফুট করে জায়গায় ৬৩ জন ব্যবসায়ীকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।”
সবজির মূল আড়ত ভবন ছাড়াও দুই পাশে দুটি টিনশেডে ৩৫৬ জন ব্যবসায়ীর আড়ত রয়েছে, যারা সরাসরি ট্রেড লাইসেন্সধারী। এছাড়া ফলপট্টি, আবু সাঈদ মার্কেট নামের আরও অনেক আড়ত রয়েছে। সব মিলিয়ে আড়াই থেকে তিন হাজার ব্যবসায়ী রয়েছেন সেখানে।
সবজির আড়ত ছাড়াও কারওয়ান বাজারে রয়েছে মাছের আড়ত, মুদি মালের পাইকারি বাজার, কিচেন মার্কেট। একেকটি দোকানে একাধিক লোক ব্যবসায়ী হিসাবে রয়েছেন। এর সঙ্গে ট্রাক চালক, ভ্যান ড্রাইভার, কুলি, দিনমজুর মিলিয়ে এখানে ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের জীবিকা রয়েছে এখানে।
যেভাবে চলবে উচ্ছেদ
যে ভবনের নিচতলায় সবজির আড়ত, তার দ্বিতীয় তলাতেই ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ কার্যালয়। দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত ওই আড়ত ভবন দিয়েই শুরু হবে উচ্ছেদ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিটি করপোরেশনের অফিস চলে যাচ্ছে মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ সংলগ্ন কমিউনিটি সেন্টারে। ইতোমধ্যে মালপত্র সরানো হয়েছে।”
ঈদের পর ভবনটি ভাঙার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে স্থায়ী বরাদ্দ পাওয়া ১৭৬টি দোকান সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে ভবনের দক্ষিণ সাইটে ১১৮টা এবং উত্তর সাইটে ৬২টি মোট ১৮০টি একসনা বন্দোবস্তের দোকানকে গাবতলীতে নিয়ে যাওয়া হবে। পরে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ভবনগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে। এখানে কোনো বাজারই থাকছে না।”
তিনি জানান, কারওয়ানবাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো নিরাপদ করতে ২০১০ সালে বুয়েট থেকে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। তাতে স্থায়ী ভবনগুলো রেট্রোফিটিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এটি অনেক ব্যয়বহুল।
পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে যাত্রাবাড়ী ও আমিন বাজারে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১০ সালের সেই প্রকল্পই পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে, এখন বরাদ্দ দেওয়া বাকি।
২০১৩ সালে কারওয়ান বাজারসহ ১৩টি মার্কেট পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ছয় বছর পর বিভাগীয় কমিনারের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে কারওয়ান বাজারকে স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়।
গত বছর জুনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের উপস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটা সভার পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ১৫ সদস্যের একটা কমিটি করে। সেই কমিটি কারওয়ান বাজার, গাবতলী, আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়ীর স্থানগুলো পরিদর্শন করে। সেই পরিদর্শনের ভিত্তিতেই সব কিছু হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
পুরো কারওয়ান বাজারে ৩৮ বিঘা জমির ওপর একটি বিজনেস হাব করার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবে।”
চূড়ান্ত নয় বিজনেস হাবের পরিকল্পনা
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলমও ‘বিজনেস হাব’ এর পরিকল্পনা নিয়ে কিছু জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, এজন্য পরামর্শক নিয়োগ করে পরিকল্পনা করা হবে।”
“পৃথিবীর সব সভ্য দেশে বাজারগুলো শহরের প্রবেশমুখে থাকে। ঢাকার একেবারে কেন্দ্রে এমন একটি বাজার শোভন নয়। এখানে একটা বিজনেস সেন্টার হবে, সেটা আমাদের পার্টনারশিপে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলে পরে আরও বিস্তারিত বলা যাবে।”
কারওয়ান বাজার সরালে ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের ধারাবাহিকতার ব্যাঘাত ঘটবে বলে যে অভিযোগ রয়েছে এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কারওয়ান বাজার মোটেও প্রতিষ্ঠিত কাঁচাবাজার নয়, বরং আমিন বাজারে যেখানে বাজারটি স্থানান্তর হতে যাচ্ছে সেখানে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। আরও যা যা সুযোগ সুবিধা দেওয়ার দরকার সেটা সিটি করপোরেশন দেবে।”
ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এক জায়গায় দীর্ঘদিন ব্যবসা করলে সেখানে সুনাম তৈরি হয়। নতুন জায়গায় গেলেও আস্তে আস্তে হবে।
“কারওয়ান বাজারে যখন প্রথমে শুরু করা হয়েছিল তখন তো এত সুনাম ছিল না, আস্তে আস্তে হয়েছে।”
সিটি করপোরেশনের ‘যুক্তি’ নাকচ ব্যবসায়ীদের
কারওয়ানবাজার আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান এসব বক্তব্য মানছেন না।
তিনি বলেন, “উচ্ছেদের জন্য তারা (সিটি করপোরেশন) দুইটা কারণ হাজির করেছে। একটা হচ্ছে যানজট-আবর্জনা, আরেকটা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। তৃতীয়ত তাদের ইচ্ছা হচ্ছে এখানে ‘বিজনেস হাব’ করা হবে এবং এটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।
“ঝুঁকির বিষয়ে আমরা বলতে চাই, পাথরের ঢালাই দিয়ে মাত্র ৩০ বছর আগে ১০ তলা ফাউন্ডেশনের এই মার্কেটটা নির্মাণ শুরু হয়েছিল। মাত্র এক তলা উপরে উঠেই শেষ। তাহলে এত অল্প সময়ে যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় এর দায় কার?
“এত অল্পদিনের মাথায় ২০১৫ সালের পর থেকেই দোতলা এই ভবনকে কীভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়? তারা ঝুঁকিপূর্ণ বললেও নিজেদের অফিসটা দ্বিতীয় তলায় ঠিকই রেখে দিয়েছিল। তাহলে আমরা কীভাবে বিশ্বাস করব যে, এটা ঝুঁকিপূর্ণ?”
বাজারের জন্য যানজট হয়- এই কথাটিও মানছেন না এই ব্যবসায়ী নেতা।
তিনি বলেন, “আমাদের ট্রাকগুলো আসে রাতে। সকাল হওয়ার আগেই ব্যস্ততা শেষ। রাস্তা কারা দখল করে আছে? রাস্তা নোংরা করছে কারা? তারা কি আড়তদার? তাদের কারা বসায়? এটা কি সিটি করপোরেশন জানে না?
“জনতা টাওয়ার থেকে পেট্রোবাংলা পর্যন্ত এলাকা দখলমুক্ত করে না কেন? উনারা খামোকা উনাদের লস প্রজেক্টে আমাদের নিয়ে যেতে চান। কারণ, সেখানে কেউ যেতে চাচ্ছে না।”
‘উপযোগী নয় গাবতলী’
আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, “গত জানুয়ারি মাসে বর্তমান মেয়রের সঙ্গে আলোচনায় যাত্রাবাড়ীর বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে গত ১৮ মার্চ সিটি করপোরেশন চিঠি দিয়ে আমাদেরকে আমিনবাজার বা গাবতলী চলে যাওয়ার কথা বলেছে।
“সেখানে রয়েছে ১০০ বর্গফুটের ছোট ছোট দোকান। এসব দোকানে পচনশীল সবজি রক্ষা করা যাবে না, আলোবাতাসের আসা-যাওয়া কম। কারওয়ান বাজারে আমাদের ৪০০ বর্গফুটের একেকটি আড়ত। প্রতিটি আড়তের পাশ দিয়েই ১০ ফুটের রাস্তা রয়েছে। দুটি ভ্যানগাড়ি এখানে চলাচল করতে পারে। ওইখানে এ সবের কিছুই নেই।
“উনারা বলছেন ভেঙে বড় করে দেবেন। কিন্তু ভাঙলেও হবে না। রাতে যে ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাক ঢুকবে ওই জায়গাটা কই সেখানে? এর বাইরে সেখানে রয়েছে বালু মহাল, ইট মহালসহ আরও অনেক ব্যস্ততা। কারওয়ান বাজারে তো ঢোকা ও বের হওয়ার জন্য ১২/১৩টা রাস্তা রয়েছে। সেখানে এই সব নেই।”