বাংলাদেশের পোশাক শিল্প তুলা ও সুতার জন্য ব্যাপকভাবে ভারতের ওপর নির্ভরশীল। উত্তেজনার মধ্যেও এসব পণ্য আমদানি স্বাভাবিক। আবার বাংলাদেশ ভারতের সপ্তম শীর্ষ রপ্তানি বাজার।
Published : 06 Dec 2024, 01:57 AM
বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা স্পষ্ট হওয়ার পর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্কে কী প্রভাব পড়বে, এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।
এরমধ্যেই স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মত পাকিস্তানের সঙ্গে শুধু বাণিজ্যিক সমুদ্র রুট চালু নয়, দেশটি থেকে পণ্য আমদানি বাড়ানোর খবর আসছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর সীমান্ত লাগোয়া ভারতের কিছু রাজ্যে বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হওয়ার খবরও আসছে।
এ নিয়ে দুই দেশের মানুষদের মধ্যে যেমন আলোচনা আছে, তেমনি ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ আছে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দুই দেশের গত ৫৩ বছরের সম্পর্ক নিয়ে ভিন্নভাবে আলোচনা হচ্ছে। দুই দেশই একে অন্যের পদক্ষেপে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি দিচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিঘ্নিত হওয়ার খবরও আসছে। আবার ভারতীয় দূতাবাস ভিসা সীমিত করেছে, এর প্রভাব পড়েছে বিশেষভাবে পশ্চিমবঙ্গের কিছু এলাকায়।
অবশ্য সুতা, তুলা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পণ্য আমদানি স্বাভাবিক থাকার তথ্য মিলেছে, যা দেশের মোট আমদানির সিংহভাগ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাংলাদেশের জন্য বেশি সুবিধাজনক।
তিনি বলছিলেন, “চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্যহীনতায় যখন বাজারে সংকট তৈরি হয় যেমন পেঁয়াজ, সে সময় বাড়ির কাছের দেশ হওয়ায় খুব কম সময়ে ও তুলনামূলক কম খরচে আমদানি করা যায়।”
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “এখন যদি মনে করা হয়, পেঁয়াজ মিশর থেকে আমদানি করব, করা যাবে তবে সময় খানিকটা বেশি লাগবে, একটু ‘এক্সপেন্সিভও’ হবে।”
সরকার পতনের পর অগাস্টের ধাক্কা কাটিয়ে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য অনেকটাই স্বাভাবিকই ছিল। তবে নভেম্বরের শেষে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার, বাংলাদেশে ভারতীয় পতাকাকে পা দিয়ে মাড়ানো, ভারতের আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিড়ে ফেলার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে উত্তেজনা বেড়েছে।
এর মধ্যে ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনলাইনে স্লট বুকিং বন্ধ করে দেওয়ায়’ দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আলু আমদানি বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম।
হঠাৎ করে না জানিয়ে এভাবে বন্ধ করে দেওয়ায় ‘বিশাল সমস্যা’ হচ্ছে বলে তার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি ৯০০ টন আলুর এলসি খুলেছি। হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও উত্তর প্রদেশ থেকে আসছে এসব। আমি তো পশ্চিমবঙ্গ থেকে আনছি না। তাহলে তাদের সরকার বন্ধ করবে কেন।”
যে ‘অস্থিরতা’ তৈরি হয়েছে তার কারণে বন্দর দিয়ে ভবিষ্যতে যাতে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত না হয়, সেটি উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের চাওয়া বলেও মন্তব্য করেন হিলি ল্যান্ড পোর্ট আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের এই ভাইস প্রেসিডেন্ট।
তবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বিশ্বাস করেন রাজনীতির এসব ঘটনা বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে না।
তার ভাষ্য, “রাজনীতিবিদরা কী বলেন সেটা ব্যবসায়ীরা দেখবেন না। তারা প্রয়োজনে রাজনীতিবিদদের কথার প্রতিবাদ করবে। প্রয়োজনের তুলনায় উৎপাদন বেশি হয়ে গেলে তারা তো বিক্রি করবেই।”
ভারত থেকে কেন খাদ্যপণ্য আমদানি বেশি হয়, সে প্রশ্নে গত ১৬ নভেম্বর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে এক সেমিনারে তিনি ডিম আমদানি প্রসঙ্গে বলেন, “থাইল্যান্ড থেকে ডিম আনলে আপনি খেতে পারবেন? একেকটা ডিম ৫০ টাকা হবে। ওগুলো আবার বাস্তবতা একটা জিনিস।… এগুলো কিছু বাস্তব ব্যাপার আছে।”
ভারত-বাংলাদেশে বাণিজ্য কত
খাদ্যপণ্য নিয়েই আলোচনা বেশি হলেও ভারত থেকে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি আসে তুলা ও সুতা যা দেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাতের কাঁচামাল। দেশের চাহিদার ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশই মেটানো হয় ভারত থেকে।
আসে বিদ্যুৎ ও পরিশোধিত ডিজেলও, যা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখে। এই বাণিজ্য হয় সরকার থেকে সরকারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৩ পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশ যত সুতা আমদানি করেছে তার মধ্যে ভারত থেকেই এসেছে ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ।
অন্যদিকে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য বছরে তুলা আমদানিতে ব্যয় হয় তিন বিলিয়ন ডলারেরও কিছু বেশি। এর মধ্যে ভারত থেকেই আসে মাসে কম বেশি ২০ কোটি ডলারের, ফলে বছরে আড়াই বিলিয়ন ডলারের কিছু কম। অর্থাৎ মোট আমদানির প্রায় ৮০ শতাংশের মত আসে ভারত থেকেই।
খাদ্যপণ্যের মধ্যে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, মরিচ, ফসলের বীজসহ কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেও ভারতের ওপর বেশি নির্ভর করে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে আমদানি হয়েছে সাড়ে ১১ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চারমাসে আমদানি হয়েছে প্রায় ৭৫ লাখ টন পণ্য; যার মূল্য ছিল ২৯ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাসে গড়ে আসছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার পণ্য।
জুলাইয়ে আমদানি হয় ৮০ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের পণ্য, আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৭২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের।
এ সময় সবচেয়ে বেশি ২০ কোটি ৩২ লাখ ডলারের তুলা আসে, সুতা আসে ১ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের, বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি আমদানি হয়েছে ১১ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের। সবজি ও খাদ্য আমদানি হয় ৪ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের।
অগাস্টে ক্ষমতার পালাবদলে তৈরি হওয়া সংকটে আমদানি ব্যাহত হয়। গত অর্থবছরের এই মাসে যেখানে ৯৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়; সেখানে এবার তা দাঁড়ায় ৭৬ কোটি ৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ কমে ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
এই মাসে তুলা আসে ১৮ কোটি ৭ লাখ ডলারের, সুতা আসে ২ কোটি ১৫ লাখ ডলারের, জ্বালানি আমদানি হয় ১৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের আর সবজি জাতীয় পণ্য আসে ৪ কোটি ৬২ লাখ ডলারের।
সেপ্টেম্বরে আমদানি হয়েছে ৮৬ কোটি ৮ লাখ ডলারের পণ্য যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ০২ শতাংশ কম।
এই মাসে তুলা আসে ২০ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের, সুতা আসে ২ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের, জ্বালানি আমদানি করা হয় ১৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের আর সবজি ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বাংলাদেশ থেকে জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছে ১৬ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের পণ্য; আগের বছরের একই মাসে যা ছিল ১৫ কোটি ৯৬ লাখ ডলার; অর্থাৎ বেড়েছে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এ সময়ে ভারতে ৪ কোটি ৪২ লাখ ডলারের পোশাক খাতের অ্যাকসেসোরিজ পাঠানো হয়। বিমান ও মহাকাশযানের খুচরা যন্ত্র যায় ২ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের।
অগাস্টে ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ কমে ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হলেও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি ২৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২০ কোটি ৬২ লাখ ডলার।
রপ্তানির তালিকায় সবচেয়ে বেশি ছিল তৈরি পোশাক।
ব্যবসায় বিঘ্ন চান না ব্যবসায়ীরা
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তা ফতুল্লা অ্যাপারেলসের মালিক ফজলে শামীম এহসান মনে করেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ব্যবসার গতি বাধাগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা ব্যবসায়ী মানুষ, সব দেশের সবার সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো। রাজনৈতিক ডামাডোলের বাইরে সবার সাথে ব্যবসা করতে চাই।”
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৈরিতা থাকলেও তাদের নিজেদের স্বার্থেই বাণিজ্য চলমান রাখে জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা তুলা ও সুতা আনি গুজরাট ও আহমেদাবাদ থেকে। তাদের ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হোক, তাদের সরকারও তো চাইবে না। ফলে ব্যবসা বন্ধ হবে না।”
তা যদি হয়ও তাহলেও বিকল্প আছে উল্লেখ করে এ ব্যবসায়ী জানান, “ইন্দোনেশিয়া আছে, তুরস্ক আছে, পাকিস্তান থেকে সরাসরি জাহাজে আমদানি করা যাচ্ছে। ফলে হয়ত কিছুটা সরবরাহ চেইনে সমস্যা হবে, ৩-৪ দিন সময় লাগবে কিন্তু সমস্যা হবে না।”
নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “যদি সুতা ও তুলা আমদানি বন্ধ হয়, কিছু সমস্যা তো হবেই, সেটা খুব বড় প্রভাব হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ, আমরা ইউএস থেকে আনি, আফ্রিকা থেকে আনি, অস্ট্রেলিয়া থেকে সুতা আসে।”
তবে ভারত থেকে আমদানিতে সমস্যা না হোক, সেই কামনাই করছেন এই শিল্প মালিক। বলেন, “প্রত্যেক দেশেই রাজনৈতিক যত টানাপড়েন হোক, ব্যবসা বন্ধ হয় না।”
বাংলাদেশে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৬৫ লাখ টনের মত। এর মধ্যে অপশোধিত তেল আমদানি হয় ১৫ লাখ টনের মত। বাকিটা মেটে পরিশোধিত তেল আমদানি করে।
ভারত থেকে আমদানি করা হয় পরিশোধিত ডিজেল। এর পরিমাণও বছরে ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টন আমদানি করা হয় এ দেশটি থেকে। আর গত অর্থবছরে ভারত থেকে বিদ্যুৎ এসেছে এক বিলিয়ন ডলারের।
তবে আলোচনা ও সংকট তৈরি হয় মূলত খাদ্য পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে।
বিকল্প বাজারে ‘খরচ বাড়বে‘
দুই দেশেরই স্বার্থ থাকায় ‘অস্থিরতা’ স্থায়ী হবে না বলে আশা করেন কমনওয়েলথ সচিবালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির সাবেক প্রধান এম এ রাজ্জাক।
বিকল্পের সন্ধান যদি করতেই হয়, তাহলে কী হবে?-এই প্রশ্নে বলেন, “বাংলাদেশের বাণিজ্য একদম ধ্বংস হবে তা না, কিন্তু এক্সপেন্সিভ হবে।”
তার মতে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ভারতের স্বার্থের অনুকূলও। তিনি বলেন “তারাও আমাদের ওপর নির্ভরশীল। ভারতের সপ্তম রপ্তানি বাজার বাংলাদেশে। এর মাঝে কিন্তু অনানুষ্ঠিক খাত যেমন স্বাস্থ্য, পর্যটন ও শিক্ষা নাই।”
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভাষাগত বাধা থাকে না মন্তব্য করে করে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট চেয়ারম্যান বলেন, “যেখানে ভাষার বাধা নাই, সেখানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়ে।”
স্থল বন্দরের কী হালচাল
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ-বিএলপিএর তথ্য বলছে, দেশে স্থলবন্দরের সংখ্যা ২৪টি। এর মধ্যে লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়।
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোলে গত সোমবার বিক্ষোভ হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক সাজেদুর রহমান।
তিনি বলেন, “চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তারা ট্রাক আটকে দেয়। বন্দর অফিসে চা চক্র করে এবং বেনাপোল দিয়ে আলু-পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখারও হুমকি দেওয়া হয়।”
তবে ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন সাজেদুর।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মুক্তি না দিলে পেট্রাপোলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী এ মাসে পাঁচ দিন বেনাপোল দিয়ে আলু-পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখার হুমকি দেন। জানুয়ারি থেকে পুরোপুরি অচল করে দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
সিলেটের জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন নিয়ে মঙ্গলবার থেকেই আমদানি-রপ্তানি বন্ধ। ফেনীর বিলোনিয়া দিয়েও আসছে না পণ্য।
সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে বন্ধ রয়েছে কয়লা ও পাথর আমদানি। ভারতে বাধা ও পণ্য পরিবহন জটিলতায় সিলেটের স্থল ও শুল্কস্টেশনও বন্ধ।
সিলেটের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মো. তাসনিমুর রহমান বলেন, “সব স্থল ও শুল্কস্টেশনে অফিস খোলা রয়েছে। তবে পণ্য আমদানি-রপ্তানি না হওয়ায় কার্যক্রম হচ্ছে না।”
দিনাজপুরের হিলির আমদানিকারক শহিদুল ইসলামের ভাষ্য, এখন এলসি খোলায় সংকট নেই।
বেনাপোল দিয়ে আমদানি করা সাজেদুর রহমানেরও একই ভাষ্য। তিনি বলেন, “এখন ব্যাংকে এলসি খোলার আবেদন করলে পরেরদিনই খুলতে পারছি।”
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুদ্দিন আহমেদ বলেন, “ফল ভারত থেকে আমদানি কম। কারণ, খরচ অনুযায়ী লাভও কম। তবে আমাদের (সংগঠনের) যারা এখনও ভারত থেকে আমদানি করে ব্যবসা করছে তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।”
তবে বেনাপোলের আমদানিকারক রফিকুল ইসলাম রয়েলর ভাষ্য, তার ব্যবসা গতবছরের তুলনায় কমেছে ৭০ শতাংশ।
তিনি বলেন, “কাঁচামাল আমদানি করে লাভ হচ্ছে না।”
‘বাংলাদেশের বাজার ভালো না’ উল্লেখ করে কারণ হিসেবে তিনি বলেন ডলারের উচ্চমূল্যের কথা।
“চাউলের ডিউটি কমাইছে সরকার কিন্তু চাউলের প্রাইস ইন্ডিয়াতে বেশি। পেঁয়াজের ডিউটি কমছে কিন্তু ইন্ডিয়াতে পেঁয়াজের দাম বেশি। তাই লাভ হচ্ছে না।”
জ্বালানি তেল আমদানির কী অবস্থা
রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে জিটুজি চুক্তির মাধ্যমে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে।
“ডলার সংকটে কিছুটা সমস্যা হলেও এখন কেটে গেছে”, বলেন বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আগে ঋণের বিপরীতে ব্যাংক থেকে কনফার্মেশনের মাধ্যমে আমদানি করা যেত। পরে ওরা (এনআরএল) বলেছিল স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে আমদানি করতে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিতে ডলার ক্রাইসিস থাকায় আমরা অন্য ব্যাংকের কথা বলি।
“এখন অপর বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে আমদানি করতে যাচ্ছি।”
৪ হাজার টন জ্বালানি আমদানির প্রক্রিয়াধীন জানিয়ে তিনি বলেন, “আশা করি আমাদের তরফে কোন সংকট হবে না।”
ভারতের এ প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ প্রতি বছর চুক্তি অনুযায়ী ৬০ হাজার (কম বেশি ১০ হাজার) মেট্রিক টন জ্বালানি আমদানি করতে পারে।
মোরশেদ হোসাইন আজাদ বলেন, “এ বছর ইতোমধ্যে ৫৫ হাজার টন আমদানি হয়েছে আর এই মাসে সাকূল্যে ১৫ হাজার টন আমদানির কথা রয়েছে।”
তবে এনআরএল এর ব্যবস্থাপনায় দেরি হয় জানিয়ে বিপিসি বিকল্প বের করেছে বলেও জানান মোরশেদ।
দুই দেশে সম্প্রতি কী ঘটছে?
সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধসহ আট দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দিয়ে আসা চট্টগ্রাম পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গত ২৫ নভেম্বর ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
পরের দিন কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তাকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। জামিন আবেদন নাকচের পর সংঘাতে এক আইনজীবীর মৃত্যু হয়।
চিন্ময়কে গ্রেপ্তার ও জামিন না দেওয়ার ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় ভারত সরকার। বাংলাদেশ আবার দেয় পাল্টা বিবৃতি।
এর মধ্যে ঢাকায় ভারতের জাতীয় পতাকা মাড়ানোর ভিডিও ছড়ায় সামাজিক মাধ্যমে। পরে ২ ডিসেম্বর ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনের প্রাঙ্গণে ‘হামলা’ চালায় একদল মানুষ। তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলে বলে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়।
বিক্ষোভ ও উত্তেজনাকার পরিস্থিতির এ ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ বলে বিবৃতি দেয় ভারত সরকার। পরে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের খবরও এসেছে সংবাদ মাধ্যমে।
পুরনো খবর:
বেনাপোলের বিপরীতে 'সনাতনী মঞ্চের' বিক্ষোভ, আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক
রাজনীতি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে 'প্রভাব ফেলবে না': অর্থ উপদেষ্টা
চিন্ময় দাশকে গ্রেপ্তারে 'গভীর উদ্বেগ' ভারতের
আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনে 'হামলা', ভারতের দুঃখ প্রকাশ
২% অগ্রিম আয়কর রেখে চাল আমদানিতে শুল্ক-কর প্রত্যাহার
পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার
শুল্ক প্রত্যাহারের পর ভারত থেকে প্রথম চালানে এল ১০৫ টন চাল
লোকসানের আশঙ্কায় চাল আমদানিতে অনীহা ব্যবসায়ীদের