আরো ২০৫ টন চাল প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
Published : 18 Nov 2024, 05:51 PM
পুরোপুরি শুল্ককর প্রত্যাহার করে নেওয়ায় পর ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে।
সোমবার সকালে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে তিনটি ট্রাকে ১০৫ টন চালের প্রথম চালান এসেছে বলে বেনাপোল শুল্ক ভবনের কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা আবু তাহের জানান।
তিনি বলেন, “যশোরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘মাহাবুবুল আলম ফুড প্রোডাক্ট’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ‘সুধর্ম আয়াতনির্যাত প্রাইভেট লিমিটেড’ এর মাধ্যমে ১০৫ মেট্রিক টন (এক লাখ ৫ হাজার কেজি) নন-বাসমতি চাল আমদানি করেছে।”
বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে চাল খালাসের দায়িত্বে রয়েছে ‘হোসেন অ্যান্ড সন্স’ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট।
এজেন্ট প্রতিনিধি জিয়াউর রহমান বলেন, “আমদানি করা চালের দাম ৪৫ হাজার ১৫০ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৪ লাখ ১৮ হাজার টাকার সমান। এতে প্রতি কেজি চালের দাম পড়েছে প্রায় ৫২ টাকা। এরপর পরিবহন, বন্দরের ভাড়া, ব্যাংক খরচসহ অন্যান্য খরচ রয়েছে। সেই হিসাবে প্রতিকেজি চাল ৫৫ টাকা পড়ে যাবে।”
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) কাজী রতন বলেন, “কাস্টমস থেকে শুল্কায়নের পর কাগজপত্র দেখে চাল দ্রুত ছাড় দেওয়ার জন্য সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একই আমদানিকারকের আরো ১০৫ টন চাল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া অর্ক ট্রেডিংয়ের আরো ১০০ টন চালের গেটপাস করা হয়েছে। এগুলোও খুব দ্রুতই বন্দরে ঢুকবে।
আমদানিকারকরা জানান, দেশের বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে সোমবার থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। ভারতও চাল রপ্তানিতে মূল্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় আমদানি বাড়বে। এতে দেশের বাজারে চালের দাম দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তারা আশা করছেন।
রোববার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৯২টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে। তারা ভারত থেকে দুই লাখ ৭৩ হাজার টন সিদ্ধ চাল এবং এক লাখ ১৯ হাজার টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছে। সবাই চাল আমদানি করতে পারবে কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। কারণ, ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে সমুদয় চাল আমদানি করে বাজারজাত করতে হবে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী হেমন্ত কুমার সরকার জানান, ২০২৩ সালের ২০ জুলাই থেকে দেশের বাইরে সিদ্ধ ও আতপ চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত সরকার। তার আগে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ ছিল। সেই সময় চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে চালের উপর ৬২ শতাংশ শুল্ককর আরোপ করা হয়। এরপর থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আর চাল আমদানি হয়নি।
হেমন্ত কুমার সরকার জানান, তাদের কাছ থেকে শুধু একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান (মাহাবুবুল আলম ফুড প্রোডাক্ট) প্রথম চালানের ১০৫ টন চালের আইপি সার্টিফিকেট নিয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানের আরো ১০৫ টন চাল সোমবার বেনাপোল বন্দরে ঢোকার কথা রয়েছে বলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি জানিয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের শর্তে বলা হয়, বরাদ্দ পাওয়া আমদানিকারককে ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে সমুদয় চাল বাংলাদেশে বাজারজাত করতে হবে। আমদানি করা চালের পরিমাণ, গুদামজাত ও বাজারজাতকরণের তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে অবহিত করতে হবে। বরাদ্দের অতিরিক্ত আইপি ইস্যু করা যাবে না, আমদানি করা চাল অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে পুন:প্যাকেটজাত করা যাবে না। আমদানি করা চাল বস্তায় বিক্রি করতে হবে।
চলতি বছরে ২১ মার্চ ও ১৬ এপ্রিল দুই ধাপে দেশের ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ৭ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। চাল রপ্তানিতে ভারত সরকারের শুল্ককর আরোপ ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকটের কারণে অনুমতি থাকলেও এতদিন চাল আমদানি করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক কাজী রতন জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ৬৫ ভাগ শুল্ককর দিয়ে মাত্র ২৮০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছিল।