গত অর্থবছরের এ সময়ে রপ্তানি আয় এসেছে ৩৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
Published : 26 Jul 2024, 12:33 AM
রপ্তানি কমলেও আমদানি নিয়ন্ত্রণের প্রভাবে গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মে সময়কালে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে প্রায় ২৩ শতাংশ; অর্থের হিসাবে যা ছয় বিলিয়ন ডলার।
সবশেষ হিসাবে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম এগার মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২৬ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ২২ দশমিক ৮২ শতাংশ।
রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ নিয়ে জটিলতার মধ্যে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম এগার মাসের (জুলাই- মে) আর্থিক লেনদেনে ভারসাম্যের তথ্য প্রকাশ করে।
এতে দেখা যায়, গত অর্থবছরের ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি কমলেও আগের মাসের চেয়ে মে মাসে ঘাটতি বেড়েছে ১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার; শতকরা হিসাবে ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। এপ্রিল মাসে এর পরিমাণ ছিল ১৮ দশমিক ৭০ দশমিক বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানি কমলেও জুলাই থেকে মে মাসে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ আমদানি কমায় বাণিজ্য ঘাটতির চাপ কমেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ৫৭ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময় যা ছিল ৬৫ দশমিকি ৮৮ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানিও কমেছে
রপ্তানি পণ্য আয়ের তথ্য নিয়ে দীর্ঘদিনের আলোচনার মধ্যে এ হিসাবে সমন্বয় করে গত অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল ১০ মাসের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই পদ্ধতিতে আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১০ মাসের হিসাবও প্রকাশ করা হয়। এতে আগের অর্থবছরের রপ্তানি আয় কমে যায়। হিসাবে বড় ধরনের রদবদলের ফলে দেশের বিভিন্ন আর্থিক পরিসংখ্যানও ওলট-পালট হয়ে যায়।
এরমধ্যেই বৃহস্পতিবার জুলাই থেকে মে সময়ের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, জুলাই-মে সময়ে রপ্তানি আয়ও কমেছে প্রায় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ৩৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৯ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার।
কী বলছেন অর্থনীতিবিদরা
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকমকে বলেন, “আমদানি কমানো হচ্ছে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। আমদানি কমালে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ বাঁচানোর জন্য আমদানির ঋণপত্র খোলায় নানা রকমের নিষেধাজ্ঞা ও কড়াকড়ি আরোপও করেছিল। এভাবে এত আমদানি কমালে অর্থনীতির জন্য খারাপ।”
এতে সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি কমছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা যতদিন ঋণাত্মক থাকবে ততদিন এর অর্থ হল রিজার্ভে পতন ঘটছে। আগের চেয়ে তা কমলেও সার্বিক লেনদেন ভারসাম্য ইতিবাচক করতে হবে।
বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “ আমদানি সংকোচিত করে ব্যালেন্স অব পেমেন্টকে উন্নতি দেখানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। আবার রপ্তানিও কমেছে। এজন্য এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে ঘাটতি বেড়েছে।”
তিনি বলেন, “আমদানি ও রপ্তানি কমা অর্থনীতির জন্য ভালো কোনো কিছু নয়। এই দুই প্রধান সূচক কমায় বাণিজ্য ঘাটতি এপ্রিল মাসের চেয়ে মে মাসে বেড়েছে।”
সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যেও ঘাটতি কমেছে
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে সার্বিক লেনদেনেও ঘাটতি কমেছে। এ সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল (ঋণাত্মক) ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি (ঋণাত্মক) ছিল ৮ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে
গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে কমেছে মোট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও। এ সময় বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এ সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময় যা ছিল ৪ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার।