“সংস্কার ছাড়া ভ্যাট-ক্রেডিট জটিলতা এবং ব্যবসার উপর আর্থিক চাপ অব্যাহত থাকতে পারে,” বলছে সংগঠনটি।
Published : 10 Jun 2024, 04:44 PM
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তাতে ব্যবসার ওপর চাপ বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)।
সংগঠনটি বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এনবিআরকে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে, তা অর্জন করা কঠিন হবে, কেননা ট্যাক্স, ভ্যাট এবং শুল্ক প্রশাসন স্বয়ংক্রিয় করার জন্য, কর সংগ্রহকে সহজ করার জন্য এবং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বা নির্দেশনার ‘অভাব’ রয়েছে।
ফিকির সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, “ওই সংস্কার ছাড়া ভ্যাট-ক্রেডিট জটিলতা এবং ব্যবসার উপর আর্থিক চাপ অব্যাহত থাকতে পারে।”
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৪.২ শতাংশ। বাজেটে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫০ শতাংশের মধ্যে রেখে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬.৭৫ শতাংশ।
বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা, যার ৬০ শতাংশের মত এনবিআরের মাধ্যমে আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।
এনবিআরের আয়কর বিভাগ কর আদায়ের একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে। ওই রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বাড়তি রাজস্বের ২২,৬৯০ কোটি টাকা বা ৮৫ শতাংশই ‘ট্যাক্স ডিডাকশন অ্যাট সোর্স’ (টিডিএস) হিসেবে আদায় করতে চায় সরকারি সংস্থাটি।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ফিকির সভাপতি জাভেদ আখতার তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, টিডিএস কমপ্লায়েন্সে পরিবর্তন, যেমন ১০ কোটি টাকার উপরে সত্ত্বাকে উইথহোল্ডিং অথরিটির অধীনে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে ফিকি।
“ডিজিটাল ট্যাক্স ইন্টিগ্রেশনের উদ্যোগের লক্ষ্য ট্যাক্স প্রক্রিয়া সহজ করা এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা। এই সংস্কারগুলো, যেমন এনবিআরের তিনটি শাখাকে একীভূত করা (আয়কর, ভ্যাট এবং কাস্টমস), সংগ্রহ বিভাগকে নীতি বিভাগ থেকে আলাদা করা এবং ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (এনএসডব্লিউ) প্রকল্প বাস্তবায়ন আইনটি যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে সহায়তা করবে।”
এছাড়া, ট্যাক্স এবং ভ্যাট প্রক্রিয়াগুলিকে প্রবাহিত করতে, প্রশাসনিক বোঝা কমাতে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করার জন্য এই সংস্কারগুলি প্রয়োজন বলে মনে করে ফিকি।
জাভেদ আখতার বলেন, গৃহস্থালী আয় সমীক্ষা অনুসারে, জনসংখ্যার ১০ শতাংশ জাতীয় আয়ের ৪০ শতাংশ অবদান রাখে কিন্তু এনবিআরের তথ্য অনুসারে দেশের মাত্র ১০ মিলিয়ন নিবন্ধিত করদাতা রয়েছে। তাই জনগণকে ট্যাক্স নেটের আওতায় আনতে আরো অনেকদূর যেতে হবে। যেহেতু সরকার এ ব্যাপারে কাজ করছে, তাই সামনে ফলাফল পাওয়া যাবে বলে ফিকি আশা করছে।
এ ব্যাপারে সেক্টরভিত্তিক রাজস্ব বিশ্লেষণ এবং করদাতার ভিত্তি বাড়ানোর মত উদ্ভাবনী পদ্ধতি নেওয়ার পরামর্শ দেন জাভেদ আখতার।
তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আয়কর হার বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব নিয়মিত করদাতাদের কাছে ‘অন্যায়’ মনে হতে পারে এবং কর ফাঁকি দিতে ‘উৎসাহিত’ করতে পারে।
“ট্যাক্স স্ল্যাবে এই ধরনের পরিবর্তনগুলি অনুগত করদাতাদের নিরুৎসাহিত করবে। কারণ তাদের বেশি উপার্জনের জন্য জরিমানা করা হচ্ছে।”
ফিকি সভাপতি বলেন, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্য নিয়েই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন হয়েছে বলে তারা মনে করেন।
মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা বাজেটে ধরা হয়েছে, তা ‘উচ্চাভিলাষী’ হলেও কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে তা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করছে ফিকি।
জাভেদ আখতার বলেন, “চেম্বার প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থবিলে উপস্থাপিত কয়েকটি প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে তারা টেলিকম, কার্বনেটেড বেভারেজ, ওয়াটার পিউরিফায়ারের উপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক এবং ট্যাক্স নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।”
সংবাদ সম্মেলনে ফিকি সরকারকে আর্থিক খাতের সংস্কারের ওপর নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেছে, একটি শক্তিশালী এবং স্থিতিস্থাপক আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্যই আর্থিক খাতের সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ।
শিল্পের কাঁচামালের ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন সহজ করার জন্য ফিকির প্রস্তাব বাজেটে গ্রহণ করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জাভেদ আখতার।
তিনি বলেন, “এগুলোর পাশাপাশি মাসিক উইথহোল্ডিং ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য সময় বাড়ানোর বিষয়টি অর্থবিল ২০২৪-এর মাধ্যমে গৃহীত হয়েছে বলে সাধুবাদ জানাচ্ছি আমরা।”
কর ব্যবস্থাকে সরল করার জন্য প্রস্তাবিত কর সংস্কারের প্রশংসা করেছে ফিকি। কিন্তু উচ্চ কার্যকরী করের হার শিল্পের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয় বলে সংগঠনটি মনে করছে।
অন্যদের মধ্যে ফিকির নির্বাহী পরিচালক নুরুল কবির, উপদেষ্টা রূপালী হক চৌধুরী, শেহজাদ মুনীম, ট্যাক্স কো-অর্ডিনেটর স্নেহাশিস বড়ুয়া, পরিচালক রুবাবা দৌলা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।