Published : 22 Apr 2020, 01:54 AM
নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই জানি, যারা বিদ্যুৎ বিভাগে চাকরি করেন তাদের প্রায় সময় লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। অনেকে তো রাগারাগিও করে থাকেন। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রসঙ্গের অবতারণা করতে এই লেখা। লোডশেডিং কী তা জানার পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয় আমাদেরকে জানতে হবে; যেমন শাট ডাউন ও অটো ট্রিপ ।
চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনের সামঞ্জস্যতা মেইনটেইন করা অনেক দরকার। সাধারণত গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। প্রচুর ফ্যান ও এসি চলে। যেহেতু সব কিছুরই সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তাই অনেক সময় উৎপাদন বেশি থাকলেও গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় না। কারণ, সঞ্চালন লাইনে বা অন্যান্য ঘাটতি থাকতে পারে।
ধরে নেওয়া যাক, শীতকালে কোনো এলাকার লোড মোট ৫ মেগাওয়াট এবং যে লাইন ও সাবস্টেশন (পাওয়ার হাউজও বলা হয়) ক্যাপাসিটি আছে তাতে সর্বোচ্চ ১০ মেগাওয়াট বহন করা যাবে। অথবা বিদ্যুৎ সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে বলে দেওয়া হলো যে, কোনো ভাবেই ১০ মেগাওয়াটের বেশি লোড দেওয়া যাবে না।
যেহেতু শীতকালে লোড ৫ মেগাওয়াট সুতরাং এ সময় কোনো লোডশেডিং নেই। আবার ধরা যাক, গরম কালে লোড বেড়ে ১২ মেগাওয়াট হয়ে গেল। এখন স্থানীয় কন্ট্রোল রুম এই অতিরিক্ত ২ মেগাওয়াট কোথায় পাবে? তখন লোড ১০ মেগাওয়াটের মধ্যে আটকে রাখার জন্য ভাগে ভাগে আলাদা আলাদা এরিয়াকে কিছুক্ষণ বিদ্যুৎবিহীন রাখতে হয়। এটাই লোডশেডিং।
লোডশেডিং সচারচর ১৫-২০ মিনিট হয়না। অন্তত ৪৫ মিনিট থেকে ৬০ মিনিটের বেশি সময় ধরে লোডশেডিং হয়ে থাকে। এখন সারা দেশে লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ যায়না বললেই চলে। তাহলে বিদ্যুৎ তো যাচ্ছে কেন?
বিদ্যুৎ যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো ম্যানুয়াল শাটডাউন বা অফ। মানুষের যেমন শরীরে রোগ হলে ডাক্তার দেখাতে হয়, তেমন বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ও মেইনটেনেন্স দরকার হয়। যখন কোনো সাবস্টেশন মেইনটেনেন্স হয় তখন ওই এলাকায় সাধারণত মাইকিং করে জানিয়ে দিয়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে কাজ করা হয়; যদি সেটা শহরকেন্দ্রিক হয়।
আবার মাঝে মাঝে এমন হয়, কোনো একটি ফিডারে (গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী মোটা তার) গাছের ডাল এসে লাগার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তখন ওই ফিডার বন্ধ রেখে গাছ কাটা হয়ে থাকে। তখনও বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। গ্রাম অঞ্চলের বেশির ভাগ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বেলায় এমন ঘটে থাকে। এছাড়া নতুন কোনো গ্রাহক তৈরি হলে তাকে ফিডার থেকে সংযোগ দিতে সাময়িক বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়।
বিদ্যুৎ সিস্টেমের কোথাও এর লোড বৃদ্ধি করতে হলে ট্রান্সফরমার বদল করার দরকার হয় তখন বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হয়। এমন আরও অনেক কারণ রয়েছে যেগুলো আসলে করা হয় গ্রাহককে কোয়ালিটি বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিতে।
সাধারণ দেখা যায় যে, সকাল বেলা তেমন কোনো লোড নেই। এসি বা ফ্যানও চলছে না; তাও বিদ্যুৎ চলে গেল। গ্রাহকরা মনে-মুখে একটু গালিও দেন এসময়; এই সকাল বেলাও লোডশেডিং!
পেছনের কারণটা ভিন্ন। ধরা যাক, হালকা একটু বাতাসে ১১ তলায় শুকাতে দেওয়া কাপড় এসে ফিডারের উপর পড়ল, সাথে সাথেই লাইন বন্ধ হয়ে যাবে। আবার হালকা বাতাসে যদি কোনো গাছের ডাল এসে তারের উপর পড়ে তাহলেও ফিডার অফ হয়ে যাবে। কোনো কারণে বিদ্যুৎ সিস্টেমে কোনো গোলযোগ দেখা দিলে লাইন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বন্ধু হয়ে যায়। তখন ফল্ট খুঁজতে হবে এবং খুঁজে সেটা রিমুভ করে লাইন চালু করতে হবে।
যারা পল্লী বিদ্যুৎ বা গ্রাম এলাকায় থাকেন তাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। কারণ তাদের এলাকা থেকে অফিস অনেক দূরে হয়। লোক আসতে আসতে ও ফল্ট খুঁজতে অনেক সময় চলে যায় বলে এই সময়টা গ্রাহককে বিদ্যুতবিহীন থাকতে হয়। শহর অঞ্চলে আশেপাশেই অফিস থাকে ও ফিডার তারের দূরত্ব কম থাকায় দ্রুত ফল্ট রিমুভ করা সম্ভব হয়ে থাকে।
তাহলে এখন যে কারো পক্ষেই এটা বোঝা অসম্ভব নয় যে, বিদ্যুৎ গেলেই সেটা লোডশেডিং নয়। বরং এর আরো অনেক কারণ হতে পারে। বর্তমান সরকার নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আসছে। কিছুদিনের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নও হয়ে যাবে।
বিল নিয়ে অনেক সময় যারা মন খারাপ করেন থাকেন, তাদর জন্য জানা জরুরি যে, যারা অল্প ইউনিট ব্যাবহার করে থাকেন তারা যে মূল্য পার ইউনিটের জন্য পরিশোধ করেন তা কেনা মূল্য থেকেও কম। আর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে সরকার বরং উল্টো ভর্তুকি দিয়ে আসছে।