মেলার অব্যবস্থাপনা নিয়েও অভিযোগ করেছেন অনেকে। তৃতীয় দিনে এসেও টয়লেট নিয়ে সন্তুষ্ট নন দর্শনার্থীরা। বিশেষ করে নারীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বেশি।
Published : 03 Feb 2024, 08:00 PM
উদ্বোধনের পরদিন থেকেই জমে উঠেছে এবারের অমর একুশে বইমেলা। প্রথম দিন স্টলগুলো অগোছালো থাকলেও তৃতীয় দিন শনিবার দেখা যায়, প্রায় সব স্টলই গোছানো।
শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় গেল দুদিন মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যাও ছিল বেশি।
অন্যপ্রকাশের স্টলের সামনে দেখা যায়, লেখক সাদাত হোসাইনকে ঘিরে ভক্তদের জটলা। কেউ অটোগ্রাফ নিচ্ছেন, কেউবা ছবি তুলছেন।
তবে মেলার অব্যবস্থাপনা নিয়েও অভিযোগ করেছেন অনেকে। তৃতীয় দিনে এসেও টয়লেট নিয়ে সন্তুষ্ট নন দর্শনার্থীরা। বিশেষ করে নারীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বেশি।
ধানমন্ডি থেকে আসা শিরিন সুলতানা বলেন, “মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মুক্তমঞ্চের টয়েলেটে গিয়ে দেখি বন্ধ। পরে মাঠের পূর্ব পাশের টয়লেটে গিয়েছি। সেটার পরিবেশ ভালো না। পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি।”
লিটলম্যাগ চত্বরে এবার অনেক চাপাচাপি করে স্টল নির্মাণ করা হয়েছে বলে একাধিক লিটলম্যাগকর্মী অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, অন্তত ৬টি স্টল গাছের আড়ালে পড়ে গেছে। স্টলের সামনে দাঁড়ানোর জায়গাও নেই।
এছাড়া বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তথ্যকেন্দ্রের পাশে নতুন বইয়ের একটি প্রদর্শন কেন্দ্র থাকার কথা থাকলেও সেটি তৃতীয় দিনেও চালু হয়নি। মেলা মাঠের যত্রতত্র পড়ে আছে আবর্জনা।
সেগুনবাগিচা থেকে হুইল চেয়ার নিয়ে মেলায় এসেছিলেন মুশতাক আহমেদ। নরম বালু মাটিতে তার হুইল চেয়ারের চাকা বার বার আটকে যাচ্ছিল। লোকজনের ভিড় বেশি থাকায় তিনি মেলা থেকে বেরিয়ে যান।
মুশতাক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার হুইল চেয়ারটি গাড়ির মতো চালানো যায়। কিন্তু মাঠ অনেক উঁচুনিচু, আর বালুমাটি। ফলে চাকা আটকে যায়। পরে বিকেলের দিকে ফাঁকা সময়ে আবার আসব।”
হুইলচেয়ার নিয়ে যেন আসা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে মেলা কমিটির প্রতি অনুরোধও জানান তিনি।
এ বিষয়ে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে তিনটি টয়লেট রয়েছে। এর মধ্যে একটির কাজ একটু বাকি আছে, সেটি রাতের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে।
লিটলম্যাগ চত্বরের প্রশ্নে কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম গতবারের জায়গাতেই লিটলম্যাগ চত্বরকে রাখতে। লিটলম্যাগকর্মীদের কেউ কেউ এই জায়গাটি চেয়েছেন। এখানে যেটুকু জায়গা আছে, সেখানে স্টল বিন্যাস করা হয়েছে। ৩৪টা স্টল যে গাছের আড়ালে পড়েছে, সেটি কি করা যায় চিন্তা করব।”
শনিবার মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন সকালে ছিল শিশুপ্রহর। সকাল থেকে লোক সমাগম কম থাকলেও সন্ধ্যায় ছিল অনেক ভিড়। সেই সঙ্গে ছিল ধুলার বিড়ম্বনাও।
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, শনিবার মেলায় নতুন বই এসেছে ৭৪টি। ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক সালেহা চৌধুরী, লালন গবেষক আবু ইসহাক হোসেন এবং কবি ও প্রাবন্ধিক মামুন মুস্তাফা।
‘ঐতিহ্য’ স্বাধীনতা ও সংগ্রামী ফিলিস্তিনবাসীর প্রতি সংহতি জানিয়ে বাংলা কবিতার সংকলন ‘ফিলিস্তিন আমার বারুদের ফুল’ প্রকাশ করেছে। এছাড়া তৃতীয় মেলায় এসেছে সরদার আবদুর রহমান সংকলিত ও সম্পাদিত ‘অর্ধশত সাক্ষাৎকারে আল মাহমুদ’, মুসা আল হাফিজের দর্শন গ্রন্থ 'উত্তরাধুনিক শরাব', মহিউদ্দিন আহমদের 'তেহাত্তরের নির্বাচন'।
মূলমঞ্চ
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘দ্বিশতজন্মবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি: মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিকউল্লাহ খান। আলোচনায় অংশ নেন খসরু পারভেজ ও হোসনে আরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুহম্মদ নূরুল হুদা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি নাসির আহমেদ, তারিক সুজাত, শাহনাজ মুন্নী ও নাহার মনিকা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন মিলন কান্তি দে, শাহাদাৎ হোসেন নিপু ও আফরোজা কণা।
এছাড়া ছিল ঝর্ণা আলমগীরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’ এবং হাওলাদারের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শেখ রাসেল ললিতকলা একাডেমি’র পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, লাইসা আহমেদ লিসা, অনুরাধা মন্ডল, আব্দুর রশীদ, সঞ্চিতা রাখি ও পাপড়ি বড়ুয়া। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ সরকার (তবলা), দেবা পাল (কী-বোর্ড), নাজমুল আলম খান (মন্দিরা) এবং অসিত বিশ্বাস (এসরাজ)।
রোববার যা থাকবে
রোববার চতুর্থ দিন মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ: কাঙাল হরিনাথ মজুমদার’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন তপন মজুমদার। আলোচনায় অংশ নেবেন জাফর ওয়াজেদ ও আমিনুর রহমান সুলতান। সভাপতিত্ব করবেন মুনতাসীর মামুন।