ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে ‘পেটানোর’ হুমকি দিয়ে চট্টগ্রামের এক আওয়ামী লীগ নেতার দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর।
পররাষ্ট্র দপ্তরের বুধবারের ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ক এক প্রশ্নে মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, “বিষয়টিকে বিস্তৃত দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরব আমি। সেটি হচ্ছে, আমাদের কূটনীতিক ও কূটনৈতিক স্থাপনার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি এ ধরনের উগ্র বক্তব্য অতিশয় অসহযোগিতামূলক।”
বিফ্রিংয়ে তিনি বাংলাদেশের নির্বাচন এবং কোনো দলকে সমর্থন করার বিষয়ে তার দেশের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।
গত সোমবার বিএনপির হরতাল-অবরোধ বিরোধী এক সভায় দেওয়া বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত হাসকে পেটানোর হুমকি দেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মুজিবুল হক চৌধুরী।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় দেওয়া ওই বক্তব্যে তিনি বলেন, “পিটার হাস বলছেন, এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। পিটার হাস আমরা আপনাকে ভয় পাই না। আমরা মোটা চালের ভাত খাই। আপনি বিএনপির ভগবান। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ ঈমান বেচি না। আপনাকে এমন মারা মারব, বাঙালি কত দুষ্টু তখন বুঝতে পারবেন।”
রাষ্ট্রদূত হাসের নিরাপত্তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্বেগ প্রকাশের মধ্যে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা ওই বক্তব্য দেন।
এর আগে গত বছরের মধ্য ডিসেম্বরে ঢাকার শাহীনবাগে ‘মায়ের ডাক’ নামের একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে গিয়ে ‘মায়ের কান্না’ নামে আরেকটি সংগঠনের তোপের মুখে পড়েন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
হট্টগোলের মধ্যে অনুষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রদূত।
এরপর চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদেরকে চলতি পথে দেওয়া অতিরিক্ত পুলিশি নিরাপত্তা সরিয়ে নেয় সরকার।
পুলিশ সদস্যদের অন্যত্র কাজে লাগাতে এবং অন্যান্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে একই রকমের সুবিধার চাহিদা বাড়তে থাকায়, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছিল সরকার।
এর মধ্যে সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, “আমি শুধু আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত নই। সেই সঙ্গে দূতাবাসসহ যারা সেখানে কাজ করেন তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।”
সবশেষ আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্যের সূত্র ধরে করা প্রশ্নে রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তার বিষয়ে এর আগে দেওয়া প্রতিক্রিয়ার অনেকটা পুনরাবৃত্তিই বুধবার করলো পররাষ্ট্র দপ্তর।
এ বিষয়ে উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল আরও বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করি ভিয়েনা কনভেনশন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুযায়ী প্রত্যেক দেশের সরকার আমাদের কর্মকর্তা ও আমাদের স্থাপনার নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।”
বাংলাদেশে নির্বাচনের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণের জন্য যেটা চাই, আমরা মনে করি বাংলাদেশের জনগণও নিজেদের জন্য সেটাই চায়। তা হচ্ছে, শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।
“এবং বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে একযোগে কাজ করার আহ্বান নিয়ে আমরা সরকার, বিরোধী প্রার্থী, নাগরিক সমাজ ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি এবং অব্যাহত রাখব।”
আরেক প্রশ্নে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, বাংলাদেশে কোনো দলকে সমর্থন করে না যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে যাতে শান্তিপূর্ণ উপায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে, শুধু সেজন্যই সরকারের পাশাপাশি বিরোধীদল এবং অন্যদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে।