অর্থপাচারে ‘সহায়ক’ হবে এবারের বাজেট: টিআইবি

“সামাজিক কর্মসূচির ভাতার পরিমাণও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামমাত্র বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও বাস্তবে তা কোনোভাবেই অর্থবহ হবে না।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2023, 02:40 PM
Updated : 2 June 2023, 02:40 PM

নতুন অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে দুর্নীতি ও অর্থপাচার ঠেকানোর কার্যকর কোনো নীতি দেখতে পাচ্ছে না ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, "সরকারের অজানা নয় যে, বাংলাদেশে যদি মধ্যম মাত্রায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হত, তাহলে জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি কমপক্ষে ২-৩ শতাংশ বেশি হত ও জনগণের জন্য অর্থবহ হত। অন্যদিকে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য প্রাক্কলন অনুযায়ী বছর গড়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে কমপক্ষে ১২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ।

“দুর্নীতি ও অর্থপাচারের বিশাল দুষ্টচক্রকে নিয়ন্ত্রণের দিকনির্দেশনাহীন বাজেট যে আরও দুর্নীতি ও অর্থপাচার সহায়ক হবে, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।”

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। পরদিন শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিজেদের মূল্যায়নের কথা জানিয়েছে টিআইবি।

সংস্থাটি মনে করে, চলমান অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান আয়-বৈষম্য ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার মূল কারণ ‘লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থপাচার’।

বিবৃতিতে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় ডলার সংকট মোকাবেলা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনের জন্য আমদানিতে কঠোরতা, ঋণপত্রে নজরদারি অব্যাহত রাখা এবং একাধিক মুদ্রা বিনিময় হার থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের পাশাপাশি দেশের সার্বিক অর্থনীতির অন্তর্নিহিত মরণব্যাধি দুর্নীতি ও অব্যাহত মুদ্রাপাচারের বিষয়টিকে নির্বিকার এড়িয়ে গেলেন।”

পাচার করা অর্থ বিনা প্রশ্নে ফেরত আনার সুযোগ না রাখাকে সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হিসেবে বর্ণনা করছে টিআইবি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, "আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, বার বার সুযোগ দিয়েও দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ করে দিয়ে কোনো সরকারই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজস্ব আদায় করতে পারেনি।

“বরং এর মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ কালো টাকার মালিকদেরই শুধু সুরক্ষা দেওয়া গেছে এবং বাস্তবে দুর্নীতির গভীরতার বিস্তারে অবদান রেখেছে; সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের নৈতিক ভিত্তি দুর্বলতর হয়েছে।"

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ প্রসঙ্গে টিআইবির মূল্যায়ন, “আয়হীন ও নিম্ন আয়ের মানুষ যতটা চাপে রয়েছে, সে তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বা সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়েনি। ভাতার পরিমাণও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামমাত্র বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও বাস্তবে তা কোনোভাবেই অর্থবহ হবে না।

“আবার সরকার বাজেটে সাড়ে চুরাশি হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি ও প্রণোদনা ব্যয়ের যে প্রস্তাব রেখেছে, সেখানে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকাই রাখা হয়েছে জনপ্রশাসনের জন্য। সামাজিক নিরাপত্তায় ভর্তুকি ও প্রণোদনা মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা।"