জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরস্বতী পূজার আয়োজন রয়েছে।
Published : 13 Feb 2024, 10:29 PM
বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর কৃপা-লাভের আশায় ৭২টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল।
বুধবার সকাল থেকে জগন্নাথ হলের মাঠে বাণী অর্চনা, আরতি ও ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলিতে সরস্বতীর আরাধনা করবেন শিক্ষার্থীরা। সকাল ৯টায় বাণী বন্দনা এবং ১০টা ১ মিনিটে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হবে।
এবারও হলের খেলার মাঠের চারিদিক দিয়ে বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা পূজার আয়োজন করেছে। ৭২টি মণ্ডপের বেশির ভাগই বিভিন্ন বিভাগের 'থিমের' আদলে গড়া।
অন্য বছরের মত এবারও এ হলের পুকুরের মাঝে বসানোর জন্য দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা তৈরি করেছে চারুকলা অনুষদ।
ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল এ পূজার মূল কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
এ হলের প্রাধ্যক্ষ ও পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সর্বমোট ৭২টি মণ্ডপে এবার সরস্বতীর বন্দনা করা হবে। এর মধ্যে হলের খেলার মাঠে প্রতিমা তৈরি করেছে ৬৯টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট। চারুকলা অনুষদের একটি মণ্ডপ জগন্নাথ হল পুকুরে, একটি কেন্দ্রীয় মন্দিরে; আরেকটি মণ্ডপ শিশুদের জন্য করা হয়েছে কর্মচারী কল্যাণ সমিতিতে।
জগন্নাথ হল ছাড়াও ছাত্রীদের জন্য রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, সুফিয়া কামাল হল, কুয়েত মৈত্রী হলে বীণাপাণির আরাধনায় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান প্রাধ্যক্ষ।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ভগবানের জ্ঞান ও বিদ্যার রূপ হলেন দেবী সরস্বতী। প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যাদেবীর পূজা হয়। হাতে বীণা থাকে বলে সরস্বতীকে বীণাপাণিও বলা হয়।
সাদা রাজহাঁস এ দেবীর বাহন। ঐতিহ্য অনুযায়ী এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পুরোহিতের মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে বিদ্যাদেবীর মন্দিরে সন্তানদের প্রথম বিদ্যার পাঠের হাতেখড়ির আয়োজন করেন।
জবিতে আয়োজন ৩৬টি মণ্ডপে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ৩৬টি মণ্ডপের পাশাপাশি পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজেও পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ সংলগ্ন মাঠ, কলা ভবনের সামনে, শান্ত চত্বর, নতুন একাডেমিক ভবনের নিচতলায়, সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের সামনে বিভিন্ন বিভাগের মণ্ডপ বসানো হয়েছে। আলপনা ও বর্ণিল আলোকসজ্জায় ফুটে উঠেছে ক্যাম্পাস।
বেশ কয়েকদিন থেকেই পূজার জন্য আনুষঙ্গিক কাজ করা হলেও শেষ দিন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মত।
পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী দীপ্ত বণিক বলেন, “বেশ কয়েকদিন থেকেই পূজার জন্য সার্বিক কাজ করছি। আমরা এবার ব্যতিক্রমভাবে পূজা উদযাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি, সুন্দরভাবেই পূজা উদযাপন করতে পারব।”
গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রাণেশ মজুমদার বলেন, “আমরা পুরোদমে পূজার মণ্ডপ তৈরিতে কাজ করছি। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আমাদের বিভাগের মণ্ডপটি অন্য সবার চেয়ে ব্যতিক্রম ও আকর্ষণীয় হয়।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, “৩৩টি বিভাগ, দুটি ইনস্টিটিউট ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের মণ্ডপে সরস্বতী পূজা উদযাপন করা হবে।
“ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে পূজা হচ্ছে না। চারুকলা অনুষদের তিনটি বিভাগ মিলে একটি পূজা মণ্ডপের আয়োজন করেছে।”
ঢাকায় অন্যান্য স্থানে সরস্বতী পূজা
এবারও সারাদেশে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিদ্যা ও শিল্পকলার দেবী সরস্বতীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় জগন্নাথ হল ছাড়াও ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী মণ্ডপ নির্মাণ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এ পূজার আয়োজন করেন।
মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমেন মন্ডল জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় প্রতিমা স্থাপনের পরে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা শুরু হবে সকাল ৯টায়, অঞ্জলি প্রদান হবে সকাল ১০টায়। দুপুর ১২টায় হবে প্রসাদ বিতরণ। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় হবে সন্ধ্যা আরতি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “সরস্বতী শান্তির বার্তাবহ। এই দিনের তাৎপর্য ও চেতনা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারলে কোথাও হিংসা, বিদ্বেষ ও বৈষম্যের অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। বাগদেবীর আরাধনা জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার পথ সুগম করুক, মনের অন্ধকার দূর করুক, এই কামনা করি।
“সবার পূজার আয়োজন সুন্দর হোক, সার্থক হোক। সরস্বতী পূজায় প্রার্থনা হোক, আমরা সবাই যেন আলোকিত পথে এগিয়ে যেতে পারি।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবেও স্বরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় পূজা শুরু হবে। সকাল ১০টায় অঞ্জলি প্রদানের পরে প্রসাদ বিতরণ শুরু হবে বেলা ১১টায়।