ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ২ কোটি টাকা।
Published : 09 Apr 2023, 08:14 PM
আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যাওয়া বঙ্গবাজারে আগামী বুধবার নাগাদ ব্যবসা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
তিনি বলেছেন, “আমরা আশা করছি যে, আগামী মঙ্গলবারে না হলেও বুধবার নাগাদ যেন তারা (ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা) সেখানে চৌকি বিছিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারে। এজন্য পরিষ্কার করার পরে সেই জায়গাটা সমতল করব। পুরো ব্যবস্থাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপেরেশন করে দেবে। তারপর চৌকি বিছিয়ে তারা সেখানে ব্যবসা শুরু করতে পারবে।"
রোববার বিকালে নগর ভবনে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তাপস বলেন, “পুড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ সোমবার থেকে পূর্ণোদ্যমে চলবে। সন্ধ্যা নাগাদ শেষ করার আশা করছি। তা সরিয়ে ফেলে সেখানে ইট বিছানো হবে। তার উপর ৫ ফিট বাই সাড়ে ৩ ফিট আকারের সাড়ে ১৭ বর্গফুটের চৌকি বসানো হবে।
“একাধিক দোকানের মালিকও একটি করে চৌকি বসাতে পারবে। যাতে তারা অন্তত ঈদের সময়টুকু অন্তত ব্যবসা করতে পারেন।”
রোববার থেকেই সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। ময়লা সরানোর ট্রাক, ময়লা তুলে ট্রাকে ফেলানোর গাড়ি, গ্যাসের মাধ্যমে রড কাটতে কর্মীদের ব্যস্ততা দেখা গেছে।
বঙ্গবাজারের দক্ষিণ পাশের সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একটি অংশ রোববার থেকেই চৌকি বসিয়ে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। ধ্বাংসাবশেষ এলাকায় পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর পাশেই তারা বসিয়েছেন চৌকি।
তাপস বলেন, "আমরা আগামীকাল সকাল থেকে পূর্ণোদ্যমে পরিষ্কার কার্যক্রম আরম্ভ করব, যাতে করে আগামী ১-২ দিনের মধ্যে সেখানে ব্যবসা পরিচালনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এরই মাঝে তালিকা প্রণয়ন শুরু হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করা যায়নি।
“দুটি মার্কেটের তালিকা না আসায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ করা গেছে। সোমবার আশা করছি পুরো তালিকা তৈরি সম্ভব হবে।”
তিনি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের জন্য সকল মহল থেকেই আমরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। এরই মাঝে ২ কোটি টাকা তহবিলে জমা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবারে আমাদের করপোরেশন সভা আছে। সেখানে আমরাও সিদ্ধান্ত নেব। আমরাও এই তহবিলে অংশগ্রহণ করব, যাতে করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পুনর্বাসিত হতে পারে।”
মঙ্গলবার ভোরে দেশের অন্যতম বড় কাপড়ের মার্কেট বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তাতে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগরী ইউনিট, আদর্শ ইউনিট, মহানগর কমপ্লেক্স ভস্মীভূত হওয়া ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এনেক্সকো টাওয়ার, ইসলামিয়া মার্কেট ও বঙ্গ হোমিও মার্কেট।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য তহবিল সংগ্রহে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
সমাজের সব স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে রোববার মেয়র বলেন, “আমরা সকলের কাছে আবেদন করছি- মানবিক দিক বিবেচনা করে, এত সংখ্যক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবনযাপন বিবেচনা করে সকলেই যেন এগিয়ে আসে। এই তহবিলে যেন অংশগ্রহণ করে। এটা যেহেতু রমজান মাস, তাই মানবতার খাতিরে সকলেই যেন এগিয়ে আসে।
“প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত অনুদানের ব্যবস্থা করবেন। আমরা আশাবাদী, যেভাবে আমরা সাড়া পাচ্ছি, তাতে অচিরেই- হয়তোবা এই সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ রূপ আমরা দিতে পারব। সকলে মিলে তহবিল গঠন করব। এতে আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।”
ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও মার্কেট কমিটিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছে। টেম্পোরারি ব্যবস্থা হচ্ছে। তহবিল যেটা হচ্ছে, সবাই আশাবাদী যে এটা একটা বড় আকার ধারণ করবে।
“আর প্রধানমন্ত্রী এর সাথে যখন যুক্ত হবেন তা সবার জন্যই একটি বড় ধরনের সহায়তা হবে বলে আমরা আশা করি।"
অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয় নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, "এখানে সবারই দায়িত্ব রয়েছে। যেমন সরকারের দায়িত্ব রয়েছে, করপোরেশনের দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি যারা মার্কেট পরিচালনা করেন- তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে।
“অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অন্যান্য দায়িত্ব রয়েছে তো বটেই। সেজন্য সচেতনতা হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।"
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, "মেয়রের সাথে কথা বলে আজ আমরা খুবই আনন্দিত। এত দ্রুত সিদ্ধান্ত পাব- আমরা কিন্তু বুঝি নাই।"
কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন, করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, পরিবহন মহাব্যবস্থাপক হায়দর আলী, অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীন, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতন, মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান, মহানগরী ইউনিটের সভাপতি মো. লোকমান খান, মহানগর কমপ্লেক্সের ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মো. শাকিল, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব মো. জহিরুল হক ভূঁইয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন
বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের সহায়তা দিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
ঈদের আগেই বঙ্গবাজারে দোকান বসতে পারবে, আশ্বাস সালমান রহমানের
পুড়ল বঙ্গবাজার: এক আগুনে ছাই হল হাজারো স্বপ্ন
বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড: ঈদের আগে পুড়ে ছাই জীবিকার সম্বল
বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্তদের ‘পর্যাপ্ত অনুদান’ দেবেন প্রধানমন্ত্রী: তাপস