ভিসা আবেদন: ‘পরামর্শকদের’ বিষয়ে সতর্ক করল মার্কিন দূতাবাস

জমে থাকা ভিসা আবেদন যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে জানান ঢাকায় দূতাবাসের কনসাল জেনারেল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2022, 12:58 PM
Updated : 14 Dec 2022, 12:58 PM

যুক্তরাষ্ট্রে যেতে ভিসা আবেদন ও কাগজপত্র তৈরির সময় পরামর্শক বা দালালদের কাছ থেকে সহায়তা নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস।

বুধবার ঢাকায় এক ব্রিফিংয়ে ভিসা আবেদন ও ভিসা দেওয়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে গিয়ে এমন পরামর্শ দেন দূতাবাসের কনসাল জেনারেল নাথান ফ্লুক।

তিনি বলেন, “কিছু ভিসা আবেদনকারী তাদের সাক্ষাৎকারের সময় নেওয়ার আগে ভিসা পরামর্শকদের কাছে যান। ভিসা সাক্ষাৎকারের দিন-সময় ঠিক করার জন্য ভিসা পরামর্শকের প্রয়োজন নেই। তারা প্রায়ই বাড়তি ফি নিয়ে থাকেন এবং নকল কাগজপত্র তৈরির মত অসঙ্গত পরামর্শ দেন।

“ভিসা আবেদনকারীদের জন্য সেরা নির্দেশনা হল আমাদের ওয়েবসাইটের তথ্যগুলো ভালোমত খতিয়ে দেখা, সহায়ক কাগজপত্র নিয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুত থাকা এবং ভিসা প্রক্রিয়াকরণ এবং সাক্ষাৎকারের সময় সঠিক ও সত্য উত্তর দেওয়া।

“আমরা সম্ভাব্য আবেদনকারীদের সতর্ক করতে চাই মিথ্যা তথ্য ও কাগজপত্রের ফলে শুধু ভিসা প্রত্যাখ্যানই নয়, ভবিষ্যতেও তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে।”

ভিসা সাক্ষাৎকারের জন্য ট্রাভেল এজেন্সি বা পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ারও কোনো প্রয়োজন নেই জানিয়ে নাথান ফ্লুক বলেন, “আপনি সরাসরি আমাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করতে পারেন। এজন্য কোনো বাড়তি খরচ নেই; সব কিছু আবেদন ফি এর মধ্যেই অন্তর্ভূক্ত থাকে।

“যেমনটি বললাম, আবেদনকারীদের অন্যান্য পরামর্শক সেবার বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিৎ, যেমন মুখস্ত উত্তর দেওয়া এবং এসব সেবা আবেদনকারীর ভিসা প্রক্রিয়ায় যেসব অসুবিধা তৈরি করবে সে বিষয়েও সতর্ক থাকা উচিৎ।”

করোনাভাইরাসের কারণে ভিসা সাক্ষাৎকার বন্ধ থাকায় প্রচুর আবেদন আটকে থাকায় এখনও সাক্ষাৎকারের সময় পেতে দেরি হচ্ছে আবেদনকারীদের।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভিসা সাক্ষাৎকারের সময় পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দুই বছরও।

এমন অবস্থায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে সময় কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে কনসাল জেনারেল বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা এবং আমাদের কনসুলার ওয়েটিং রুমের মত উন্মুক্ত পরিসরে বিধিনিষেধের ফলে ভিসা আবেদনকারীদের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাতের পরিমাণ কমে এসেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, অনেক আবেদনকারীকেই সশরীরে হাজির থাকতে হয় বলে এসব সীমাবদ্ধতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সংখ্যা কমে গিয়েছিল।

“কার্যক্রমের সক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে যেসব জটিলতা তৈরি হয়েছে আমরা সেগুলো বিবেচনায় নিচ্ছি এবং এসব জমে থাকা ভিসা আবেদন যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করার অঙ্গীকার করছি। একইসঙ্গে আমাদের কর্মী ও আবেদনকারীদের সুরক্ষা এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বদ্ধপরিকর।”

ভিসা সাক্ষাৎকারের অপেক্ষার সময় কমানোর জন্য উদ্ভাবনী উপায় বের করতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “গত ছয় মাসে, আমাদের কনসুলার সদস্যরা সপ্তাহান্তেও কাজ করেছেন এবং অভিবাসী ও অনভিবাসী ভিসা আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিশেষ কর্মদিবসে, যেটিকে আমরা ডাকি ‘সুপার ফ্রাইডে' বলে।

“এই সুপার ফ্রাইডেগুলোতে আমরা শিক্ষার্থী ও পর্যটকসহ ৩,৪০০ এর বেশি অনভিবাসী এবং প্রায় ৬০০ অভিবাসী ভিসা আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছি, অপেক্ষার সময় কমানোর জন্য।”

শিক্ষার্থী ভিসার ক্ষেত্রে বিশেষ পরামর্শ

ভিসার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বিশেষ পরামর্শ দিয়ে নাথান ফ্লুক জানান, ২০২২ সালে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ৭,৪০০ এফ ১ শিক্ষার্থী ভিসা দিয়েছে, যা গত দশকে অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি।

সম্ভাব্য শিক্ষার্থীরা যেন নির্ধারিত সময়ে তাদের শিক্ষাক্রম শুরু করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থী ও এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ভিসা সাক্ষাৎকারকে অগ্রাধিকার দেয় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, বলেন তিনি।

“আমরা যত বেশি সম্ভব যোগ্য শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কাজটি চালিয়ে যাব, একইসঙ্গে বি১/বি২ পর্যটক ও বাণিজ্য ভিসার মত অন্যান্য বিভাগের ভিসার জন্য অপেক্ষার সময় কমানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাব,” যোগ করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের ভিসা সাক্ষাৎকারের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সম্ভাব্য শিক্ষার্থীদের উচিৎ যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যত দ্রুত সম্ভব আই ২০ ফর্ম পাওয়ার অনুরোধ করা এবং যত দ্রুত সম্ভব ভিসা সাক্ষাৎকারের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা। শিক্ষার্থী ভিসার সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের জন্য আই ২০ ফর্ম বা এক্সচেঞ্জ ভিজিটরদের জন্য ডিএস ২০১৯ ফর্ম ছাড়াও সব শিক্ষার্থী ভিসায় আবেদনকারীদের এটিও দেখাতে হবে যে তারা শিক্ষাগত দিক থেকে যোগ্য এবং তাদের টিউশনসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সব ব্যয় বহনের মত পর্যাপ্ত তহবিল আছে।

“আমাদের অগ্রাধিকার থাকবে প্রথমবারের মত শিক্ষার্থী ভিসার আবেদন করা ব্যক্তিদের জন্য যত বেশি সম্ভব অ্যাপয়েন্টমেন্ট আয়োজন করা যায়। আগে যারা ভিসার আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন, তাদেরকে এমন কিছু তথ্য দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে, যা তাদের মূল সাক্ষাৎকারে ছিল না, অথবা দেখাতে হবে যে আগের আবেদনের পর থেকে তাদের পরিস্থিতি কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।”

শিক্ষার্থীকে পুনরায় আবেদনের সময় অবশ্যই নতুন আবেদনপত্র ও ছবি জমা দেওয়ার পাশাপাশি পুনরায় আবেদনের ফি প্রদান করতে হবে। তাদের নতুন করে সাক্ষাৎকারের দিন-সময় নিতে হবে বলেও জানান কনসাল জেনারেল।