আগামী ২৯ অক্টোবর এ মামলায় যুক্তিতর্কের অবশিষ্ট শুনানির তারিখ পড়েছে।
Published : 27 Oct 2023, 08:32 AM
হত্যার ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার শেষ হয়নি ওই সময়ের আলোচিত ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই হত্যাকাণ্ডের; শেষ ধাপ যুক্তিতর্কেই আটকে আছে তা।
এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন এ চিকিৎসকের পরিবারের স্বজনরা। নিহতের ভাইয়ের স্ত্রী মুক্তা দত্ত বলেন, “আমার শাশুড়ি মারা গেছেন দুবছর হল। তিনি আমার ভাসুরের মৃত্যু শোকেই মারা যান। পুত্র শোকে মারা গেছেন আমার শ্বশুর তড়িৎ কান্তি দত্তও।”
২০১২ সালের ২৩ অগাস্ট রাতের এ হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর ২০১৩ সালের ২২ জুলাই অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হয়। এরপর পেরিয়ে গেছে এক দশকের বেশি সময়। পরে ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এতে রাষ্ট্রপক্ষে ১৯ জন ও আসামি পক্ষে পাঁচজন সাফাই সাক্ষ্য দেন।
এরপর ২০২২ সালের ৩০ মে যুক্তিতর্ক গ্রহণ শুরু হলেও আসামিপক্ষে এ মামলার শুনানির জন্য বারবার বিভিন্ন ইস্যুতে সময় আবেদনসহ নানান কারণে বিচার কাজ পিছিয়ে গেছে। সবশেষ গত রোববার এ মামলার শুনানি হয়।
ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ মো. নজরুল ইসলামের আদালতে এ মামলার বিচার হচ্ছে। এ আদালতের পেশকার রবিউল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আগামী ২৯ অক্টোবর এ মামলায় যুক্তিতর্কের অবশিষ্ট শুনানির তারিখ পড়েছে।
মামলার বিলম্বের অন্যসব কারণের মধ্যে আসামি পেদা মাসুম ছাড়া অন্য আসামিদের পক্ষে ৬ জুলাই নতুন ওকালতনামা সহযোগে নতুন আইনজীবী নিয়োগ, আসামি রফিকুল ইসলামের কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহবুবুল আলমের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কারণে রাষ্ট্রপক্ষে নতুন আইনজীবী আজাদ রহমানের নিয়োগের কারণে যুক্তিতর্কের শুনানি পিছিয়ে যায়।
মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, আসামিপক্ষের আইনজীবীর শুনানির প্রস্তুতি না থাকাসহ আরও কিছু কারণে যুক্তিতর্কের শুনানি এখনও শেষ হয়নি। এরমধ্যেই ২০২২ সালের ৩০ মে, ১৪ জুন ও ৬ জুলাই যুক্তিতর্কের আংশিক শুনানি হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আইনজীবী মাহবুবুল হাসান এর আগে শুনানি করেছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর নতুন আইনজীবী হিসেবে নথিপত্র ও সাক্ষ্য ভালো করে পড়তে হওয়ার কারণে সময় আবেদন জমা দিয়েছিলাম। তবে রোববার সময় না চেয়ে শুনানি করা হয়েছে।
মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, এ বছরের ২০ অগাস্ট ও ১৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ শুনানির সময় চেয়েছে।
নিতাইয়ের মেজো ভাই গোপাল কৃষ্ণ দত্ত এর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “বিচারের আশা আমরা ছেড়েই দিয়েছি। মামলার বিষয়ে এর আগে অনেককে বলেছি, বাবাও খুব বলতেন। কিন্তু এখন নিতাইয়ের মৃত্যু দিবসে নিভৃতে চোখের জল ফেলা ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই।”
ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের একজন নেতা। ২০১২ সালের ২৩ অগাস্ট রাতে মহাখালীতে হাসপাতালের আবাসিক এলাকায় নিজের বাসায় খুন হন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের রাতে দোতলা ওই বাড়িতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. নিতাইয়ের সঙ্গে ছিলেন শুধু তার বৃদ্ধা মা। স্ত্রী লাকী চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রামে। হত্যাকাণ্ডের পরদিন নিতাইয়ের বাবা বনানী থানার হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ছয় মাসের তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গাজী আতাউর রহমান ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি চুরি, চোরাই মাল গ্রহণ ও হত্যার অভিযোগ এনে ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।
সেখানে বলা হয়, চুরির সময় দেখে ফেলায় ওই চিকিৎসককে হত্যা করা হয়। আসামিরা তার বাড়ি থেকে পাঁচ লাখ টাকা আর দুটি স্বর্ণের বালা নিয়ে যায়।
এ মামলার আসামিদের মধ্যে পাঁচজন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলাতেও গ্রেপ্তার আছেন। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডেরও কোনও সুরাহা এখনও করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশের দাবি, নিতাই হত্যার আসামিরা ‘পেশাদার চোর’। গ্রেপ্তার আরেকজন অরুণ ছিলেন নিহত চিকিৎসক নিতাইয়ের গাড়িচালক।
২০১৩ সালের ২২ জুলাই অভিযোগ গঠনের পর ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি নিতাইয়ের বাবা তড়িৎ কান্তির সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু করে ঢাকার ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালত। পরে তিন বিচারকের হাত ঘুরে বতর্মানে মামলাটি রয়েছে ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ মো. নজরুল ইসলামের আদালতে।
রাষ্ট্রপক্ষের ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে নিতাইয়ের স্ত্রী ডা. লাকী চৌধুরী, ভাই
গৌতম দত্ত, আত্মীয় সুদত্ত চৌধুরী, শাশুড়ি ডলি চৌধুরীসহ মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য এ পর্যন্ত আদালত শুনেছে। এর মধ্যে মামলার বাদী তড়িৎ কান্তি ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি মারা গেছেন। মা মনজু রানীও মারা গেছেন। নিতাই-লাকীর কোনো সন্তান ছিল না।
মামলার আসামিরা হলেন- রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, সাঈদ ব্যাপারী ওরফে আবু সাঈদ, মো. হোসেন মিজি, ফয়সাল, মাসুম ওরফে পেদা মাসুম, মো. আবুল কালাম ওরফে পিচ্চি কামাল ও সাইদুল। তারা সবাই কারাগারে রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রথম পাঁচজন সাগর-রুনি হত্যা মামলাতেও গ্রেপ্তার আছেন।
আরও পড়ুন
বিচারের আশা ছেড়েই দিয়েছি: ডা. নিতাইয়ের ভাই
মাঝপথে আটকে ডা. নিতাই হত্যার বিচার
‘ডা. নারায়ণ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার’