ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই হত্যা মামলার বিচার আট বছরেও শেষ না হওয়ায় হতাশা বাড়ছে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে।
Published : 23 Aug 2020, 07:30 PM
নিতাইয়ের মেজো ভাই গোপাল কৃষ্ণ দত্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “বিচারের আশা আমরা ছেড়েই দিয়েছি। মামলার বিষয়ে এর আগে অনেককে বলেছি, বাবাও খুব বলতেন। কিন্তু এখন নিতাইয়ের মৃত্যু দিবসে নিভৃতে চোখের জল ফেলা ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই।
ডা. নিতাই ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের একজন নেতা। ২০১২ সালের ২৩ অগাস্ট রাতে রাজধানীর মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আবাসিক এলাকায় নিজের বাসায় খুন হন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের রাতে দোতলা ওই বাড়িতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. নিতাইয়ের সঙ্গে ছিলেন কেবল তার বৃদ্ধা মা। আর স্ত্রী লাকী চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রামে। হত্যাকাণ্ডের পরদিন নিতাইয়ের বাবা বনানী থানার হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ছয় মাসের তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গাজী আতাউর রহমান ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি চুরি, চোরাই মাল গ্রহণ ও হত্যার অভিযোগ এনে ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।
সেখানে বলা হয়, চুরির সময় দেখে ফেলায় ওই চিকিৎসককে হত্যা করা হয়। আসামিরা তার বাড়ি থেকে পাঁচ লাখ টাকা আর দুটি স্বর্ণের বালা নিয়ে যায়।
এ মামলার আসামিদের মধ্যে পাঁচজন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলাতেও গ্রেপ্তার আছেন। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের কোনও সুরাহা এখনও করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নিতাই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দশজনের মধ্যে চারজন, ফাইল ছবি
২০১৩ সালের ২২ জুলাই অভিযোগ গঠনের পর ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি নিতাইয়ের বাবা তড়িৎ কান্তি দত্তের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু করে ঢাকার ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালত।
নথিপত্রে দেখা যায়, তিন বিচারকের হাত ঘুরে বতর্মানে মামলাটি রয়েছে ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ মো. নজরুল ইসলামের আদালতে।
রাষ্ট্রপক্ষের ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে নিতাইয়ের স্ত্রী ডা. লাকী চৌধুরী, ভাই গৌতম দত্ত, আত্মীয় সুদত্ত চৌধুরী, শাশুড়ি ডলি চৌধুরীসহ মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য এ পর্যন্ত আদালত শুনেছে। ১৬৪ ধারার আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণকারী হাকিম কেশব রায় চৌধুরী, শাহরিয়ার মাহমুদ আদনানও এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন।
এর মধ্যে মামলার বাদী তড়িৎ কান্তি দত্ত ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি মারা গেছেন। মা মনজু রানী দত্ত ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামের কদমতলীর বাসায় শয্যাশায়ী। তার স্মৃতিও লোপ পাচ্ছে।
গোপাল কৃষ্ণ দত্ত বলেন, বিছানায় পড়ে যাওয়ার আগে তার মা ‘নিতাই নিতাই’ বলে হাহুতাশ করতেন। কিন্তু এখন মনে করিয়ে দিলে বুঝতে পারেন, আবার ভুলে যান।
নিতাইয়ের স্ত্রী ডা. লাকী চৌধুরী হাটহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করছেন। এখন তিনি চট্টগ্রামে নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকেন। নিতাই-লাকীর কোনো সন্তান ছিল না।
ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের পেশকার মো. শাহ আলম জানান, গত ৬ জানুয়ারি এ মামলায় সর্বশেষ সাক্ষ্য দেন এ মামলার প্রথম তদন্ত কমকর্তা পুলিশ পরিদর্শক এমদাদুল ইসলাম তৈয়ব।
এরপর দ্বিতীয় তদন্ত কমকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গাজী আতাউর রহমানের সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি দিন রেখেছিলেন বিচারক। কিন্তু তিনি আদালতে হাজির না হওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।
শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাক্ষ্যের জন্য পুলিশ সদরদপ্তদরের মাধ্যমে আতাউর রহমানকে সমন পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু মহামারীর কারণে এরপর আদালত বন্ধ হয়ে যায়। আদালত খোলার পর এখন এ মামলার তারিখ পড়েছে আগামী ১ সেপ্টেম্বর।
মামলার আসামিরা হলেন- রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, সাঈদ ব্যাপারী ওরফে আবু সাঈদ মো. হোসেন মিজি, ফয়সাল, মাসুম ওরফে পেদা মাসুম, মো. আবুল কালাম ওরফে পিচ্চি কামাল ও সাইদুল।
তারা সবাই কারাগারে রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রথম পাঁচজন সাগর-রুনি হত্যা মামলাতেও গ্রেপ্তার আছেন।
সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুব আলম রাষ্ট্রপক্ষে নিতাই হত্যা মামলার আইনজীবী হিসাবে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন।