Published : 23 Aug 2018, 11:27 AM
ডা. নিতাই ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের একজন নেতা। ২০১২ সালের ২৩ অগাস্ট রাতে রাজধানীর মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আবাসিক এলাকায় নিজের বাসায় খুন হন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের রাতে দোতলা ওই বাড়িতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. নিতাইয়ের সঙ্গে ছিলেন কেবল তার বৃদ্ধা মা। আর স্ত্রী ছিলেন চট্টগ্রামে। হত্যাকাণ্ডের পরদিন নিতাইয়ের বাবা বনানী থানার হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ছয় মাসের তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গাজী আতাউর রহমান ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি চুরি, চোরাই মাল গ্রহণ ও হত্যার অভিযোগ এনে ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।
সেখানে বলা হয়, চুরির সময় দেখে ফেলায় ওই চিকিৎসককে হত্যা করা হয়। আসামিরা তার বাড়ি থেকে পাঁচ লাখ টাকা আর দুটি স্বর্ণের বালা নিয়ে যায়।
এ মামলার আসামিদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ ও সাঈদ ব্যাপারী ওরফে আবু সাঈদ সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলাতেও গ্রেপ্তার আছেন।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের কোনও সুরাহা এখনও করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশের দাবি, নিতাই হত্যার আসামিরা ‘পেশাদার চোর’। আর অরুণ ছিলেন নিহত চিকিৎসক নিতাইয়ের গাড়িচালক।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মো. হোসেন মিজি, ফয়সাল, মাসুম ওরফে পেদা মাসুম, মো. আবুল কালাম ওরফে পিচ্চি কামাল ও সাইদুল। তারা সবাই কারাগারে রয়েছেন।
হত্যাকাণ্ডের আসামিরা (ফাইল ছবি)
রাষ্ট্রপক্ষের ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে নিতাইয়ের স্ত্রী ডা. লাকী চৌধুরী, ভাই গৌতম দত্ত, আত্মীয় সুদত্ত চৌধুরী, শাশুড়ি ডলি চৌধুরীসহ মোট ১৬ জনের সাক্ষ্য এ পর্যন্ত আদালত শুনেছে।
সর্বশেষ গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর নিতাইয়ের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর আরও কাউকে আদালতে হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ১৩ অগাস্ট ১০ নম্বর বিশেষ জজের এজলাসে গিয়ে মামলার নথিপত্রে দেখা যায় অবহেলা ও অযত্নের চিহ্ন। সেখানে সাক্ষীদের কয়েকজনের নামে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ থাকলেও তা কাযর্কর করা হয়নি। থানায় বা সাক্ষীদের ঠিকানায় পরোয়নাও পাঠানো হয়নি।
এ আদালতের পেশকার মো. শাহ আলম জানান, ১৬৪ ধারায় আসামিদের জবানবন্দি গ্রহণকারী হাকিম কেশব রায় চৌধুরী ও শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান ইতোমধ্যে এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। এছাড়া জবানবন্দি গ্রহণকারী আরেক হাকিম এরফানউল্লাহকে (বর্তমানে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ) সাক্ষ্য দিতে সমন পাঠানো হয়েছে।
ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আতাবুল্লাহ আগামী ২৮ অগাস্ট এ মামলায় তারিখ রেখেছেন।
নথিপত্র ঘাটতে গিয়ে দেখা যায় অভিযোগপত্র ছিঁড়ে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী পুলিশের কাছে বিকল্প অভিযোগপত্র থাকার কথা। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগপত্র প্রতিস্থাপন করছে না।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে পেশকার শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাক্ষীর তালিকা অস্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় সাক্ষীদের নোটিশ, পরোয়ানা পাঠানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ঈদের ছুটির পর আমরা তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে অভিযোগপত্রের অনুলিপি সংগ্রহ করে নথিতে সন্নিবেশ করব।”
ডা. নিতাইয়ের বাবা মামলার বাদী তড়িৎ কান্তি দত্ত এরই মধ্যে মারা গেছেন। নিতাইয়ের মা মঞ্জু রাণী দত্তও শয্যাশায়ী।
বিচার আটকে থাকায় হতাশা প্রকাশ করে নিতাইয়ের ভাই গোপাল কৃষ্ণ দত্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “বড় হতাশা নিয়ে বাবা চলে গেছেন। নিতাই খুন হওয়ায় মনোবেদনায় তার শরীর ভেঙে পড়েছিল।”
বিষয়টি নিয়ে এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবু নাসের স্বপনের সঙ্গে কথা বলতে বেশ কয়েকবার এজলাসে গেলেও তাকে কখনোই পাওয়া যায়নি।
পরে টেলিফোনে তিনি বলেন, “আমি অনেক চেষ্টা করেছি, মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছি অবশিষ্ট সব সাক্ষীকে আদালতে নিয়ে আসতে।”