মাঝপথে থেমে আছে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক স্বাচিপ নেতা ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই হত্যা মামলার বিচার, যার আসামিদের কয়েকজন সাগর-রুনি হত্যামামলায়ও গ্রেপ্তার রয়েছেন।
Published : 12 Feb 2015, 06:21 PM
সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের ছয় মাসের মধ্যে ২০১২ সালের ২৩ অগাস্ট রাতে রাজধানীর মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আবাসিক এলাকায় নিজের বাড়িতে খুন হন সরকার সমর্থক চিকিৎসকদের নেতা নিতাই।
চুরির সময় দেখে ফেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থক চিকিৎসকদের এই নেতাকে হত্যা করা হয় বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মামলার আসামি রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ ও সাঈদ ব্যাপারী ওরফে আবু সাঈদকে সাগর-রুনি হত্যা মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অরুণ নিহত চিকিৎসক নিতাইয়ের গাড়িচালক ছিলেন।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের কোনও সুরাহা এখনও করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নিতাই হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার পাঁচজনকে ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সাংবাদিক দম্পতি হত্যামামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরা পেশাদার চোর বলে পুলিশের দাবি।
ডা. নিতাই হত্যাকাণ্ডে ২০১৩ সালের ২২ জুলাই অভিযোগ গঠনের পর ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি বাদী নিহতের বাবা তড়িৎ কান্তি দত্তের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়।
চুরি, চোরাই মাল গ্রহণ ও হত্যার অভিযোগ এনে ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গাজী আতাউর রহমান।
অন্য আসামিরা হলেন- মো. হোসেন মিজি, ফয়সাল, মাসুম ওরফে পেদা মাসুম, মো. আবুল কালাম ওরফে পিচ্চি কামাল ও সাইদুল। তারা সবাই কারাগারে রয়েছেন।
ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে চলছে নিতাই হত্যামামলার বিচার। কিন্তু গত দুটি ধার্য তারিখে কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। সেই সঙ্গে আদালত পরিবর্তনের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।
আদালত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামিন না পাওয়ায় এজলাসে আসামিদের অশোভন আচরণের পর বিচারক এই মামলার শুনানি নিতে অনাগ্রহী। ফলে পরিবর্তিত হতে পারে আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আবু নাসের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষে ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত বাদীসহ ১৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত দুটি তারিখে সাক্ষ্য নেওয়া যায়নি।”
হত্যাকাণ্ডের আসামিরা
গত বছরের ১৫ অক্টোবর অরুণের নেতৃত্বে আসামিরা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারকের উদ্দেশে অশোভন আচরণ, অভব্য কথা বলেন। আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে অরুণ বিশ্রি ভাষায় উষ্মা প্রকাশ করতে থাকেন।
আদালতের পেশকার ইমরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর আগেও অরুণ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে এ রকম আচরণ করেছিলেন।
“সে কারণে মামলাটিতে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য দিন ধার্য থাকলেও মামলার নথিপত্র বিচারের জন্য অন্য আদালতে স্থানান্তরের সম্ভাবনা রয়েছে।”
গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর নিতাইয়ের স্ত্রী ডা. লাকী চৌধুরী, ভাই গৌতম দত্ত, ১৫ অক্টোবর আত্মীয় সুদত্ত চৌধুরী, শ্বাশুড়ি ডলি চৌধুরী সাক্ষ্য দেন।
আসামিদের ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তি জবানবন্দি গ্রহণকারী হাকিম কেশব রায় চৌধুরী, শাহরিয়ার মাহমুদ আদনানও ইতোমধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পর্ষদের সদস্য ছিলেন ডা. নিতাই। হত্যাকাণ্ডের রাতে দোতলা ওই বাড়িতে শুধু তিনি আর তার বৃদ্ধা মা ছিলেন। তার স্ত্রী ছিলেন চট্টগ্রামে।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন ডা. নিতাইয়ের বাবা বনানী থানার হত্যা মামলা করেন।
পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, চুরির সময় দেখে ফেলায় ডা. নিতাইকে হত্যা করা হয়। আসামিরা নগদ ৫ লাখ টাকা ও ২টি স্বর্ণের বালা নিয়ে যায়।