কামাল হোসেন তালুকদার
ঢাকা, অগাস্ট ২৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- চুরি কিংবা ডাকাতি নয়, ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার বলে মনে করছেন তার পরিবারের এক সদস্য।
তিনি দাবি করেছেন, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে নিয়োগ নিয়ে হুমকি পাচ্ছিলেন ওই হাসপাতালের এই চিকিৎসক।
বৃহস্পতিবার ভোররাতে মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আবাসিক ভবনে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পর্ষদের সদস্য ডা. নারায়ণ (৪৮)।
নিহত চিকিৎসকের শ্যালক সুরাস চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।”
হত্যাকাণ্ডে সময় ওই বাড়িতে ডা. নারায়ণ ছাড়া ছিলেন শুধু তার বৃদ্ধ মা মঞ্জু দত্ত। তবে তিনি ছিলেন বাড়ির নিচ তলায়, নারায়ণ খুন হন দোতলায়।
পুলিশ গিয়ে ওই বাড়ির দোতলায় নারায়ণের ঘরে জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় পায়। এ থেকে ডাকাতি বা চুরির ধারণা করছে পুলিশ।
এ বিষয়টি তুলে ধরা হলে সুরাস বলেন, “সব মিথ্যা। এটা একটি সাজানো নাটক। ডাকাতি বা চুরির ঘটনা হলে ডাকাত দল হাত, পা ও মুখ বেঁধে ডাকাতি করত। হত্যা করত না।
“টাকা-সোনা লুট হোক, তবুও বলব- এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকা-।”
হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর নিয়োগ প্রক্রিয়ার চলাকালীন ডা. নারায়ণকে কয়েকবার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে সুরাস জানান।
তিনি বলেন, “দেড় মাস আগে হাসপাতালে তার (নারায়ণ) কক্ষে গিয়েও এক চিকিৎসক ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা হুমকি দিয়েছে।”
তবে হুমকিদাতা চিকিৎসকের নাম বলতে পারেননি সুরাস।
শ্যালক এই দাবি করলেও হুমকি পাওয়ার বিষয়ে নারায়ণ কখানো কিছু বলেননি বলে জানান বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সুপার ডা. বশির আহম্মেদ।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “গত ১ অগাস্ট তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদে ৫৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিতাইয়ের ভাই গৌতম ও গৌতমের স্ত্রীও নিয়োগ পান।”
পুলিশ অবশ্য প্রাথমিকভাবে এটাকে চুরি বা ডাকাতির ঘটনা বলেই মনে করছে।
ঘটনাস্থলে দুটি ছুরি ও শাবল পাওয়া গেছে জানিয়ে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মইনুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “দুর্বৃত্তরা সম্ভবত চুরির উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকেছিল। ডা. নিতাই টের পেয়ে যাওয়ায় তারা তাকে ছুরি মেরে পালিয়ে যায়।”
বাড়ির দোতলার গ্রিল কাটা অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই পথেই দুর্বৃত্তরা ঢুকেছিল বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মইনুল।
বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আবাসিক এলাকার নৈশ প্রহরী আবদুর রউফ সাংবাদিকদের জানান, ভোরে ডা. নারায়ণের মায়ের চিৎকার শুনে ওই বাসার দ্বিতীয় তলায় যান তিনি। সেখানে চিকিৎসককে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান তিনি।
তিনি বলেন, “স্যারের মুখ লুঙ্গি দিয়ে মোড়ানো ছিলো। মুখ থেকে লুঙ্গি সরানোর পর স্যার শুধু বললেন, ‘ডাক্তার আন’। আর কোনো শব্দ করেননি স্যার।”
রক্তাক্ত অবস্থায় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাদের সহকর্মীকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রহরী রউফ জানান, হাসপাতাল এলাকায় ১৭ জন নিরাপত্তাকর্মী থাকলেও রাতে আবাসিক এলাকায় সামনে কেউ ‘ডিউটি’ নিতে চান না। কারণ সন্ত্রাসীরা প্রায়ই নিরাপত্তাকর্মীদের ধাওয়া করে।
হত্যার অভিযোগে নারায়ণের বাবা তড়িৎ কান্তি দত্ত বাদি হয়ে বনানী থানায় মামলা করেছেন। এতে ৫ লাখ টাকা খোয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মইনুল হক জানান।
স্বর্ণালঙ্কার খোয়া যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি কেন জানতে চাইলে- তড়িৎ কান্তি সাংবাদিকদের বলেন, “উল্লেখ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ বলল, কত ভরি খোয়া গেছে, তা নিশ্চিত হয়ে নিতে।”
ডা. নারায়ণের স্ত্রী সরকার সমর্থিত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেত্রী ডা. লাকী চৌধুরী চট্টগ্রামে তার বাড়িতে গিয়েছিলেন। স্বামীর হত্যাকাণ্ডে খবর পেয়ে দুপুরে ফেরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ড. নারায়ণ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/কেটি/এমআই/২১২১ ঘ.