বইমেলার দ্বিতীয় দিনেও স্টলে হাতুড়ির ঠুকঠুক

শুক্রবার ছুটির দিনে মেলা জমে ওঠার আশা করা হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2023, 05:07 PM
Updated : 2 Feb 2023, 05:07 PM

মেলার মাঠে এখনও চলছে ঠোকাঠুকি, যার মানে স্টলের কাজ এখনও শেষ হয়নি; যদিও মেলার দুই দিন শেষ হয়েছে।

বুধবার শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা, তবে বৃহস্পতিবার মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে গিয়ে কিছু স্টলে হাতুড়ির ঠুকঠুক আওয়া পাওয়া গেছে। যে কোনো সময় যে কারও দুর্ঘটনার পড়ার ঝুঁকি নিয়ে যত্রতত্র পড়ে আছে লোহা, পেরেক, কাঠের টুকরা।

যে স্টলগুলো এখনও নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি, সেখানে আলোও জ্বলেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহসান মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বইমেলা শুরুর আগেই স্টল নির্মাণের কাজ শেষ করা উচিৎ। কিছু স্টলে এখনও কাজ চলছে। এতে মেলার মাঠে অনেক পেরেক পড়ে থাকছে। যে কোনো সময় কারও পায়ে ঢুকে আহত হতে পারেন।”

আহসান মামুনের সঙ্গে ছিলেন জয়িতা আফরিন, সাদিক সুমন। মেলায় ঘুরতে ঘুরতে তাদের চোখে দৃষ্টিকটূ ঠেকেঠে চানাচুর বিক্রেতার অবাধ বিচরণ।

জয়িতা বলেন, “গেটে তো সবাইকে চেক করে নিরাপত্তাকর্মীরা ভেতরে ঢোকাচ্ছেন। তাহলে চানাচুর বিক্রেতারা কীভাবে ভেতরে প্রবেশ করে?”

তবে প্রথম দিনের অপ্রস্তুতি ছাপিয়ে দ্বিতীয় দিনে বইমেলা অনেকটাই স্বরূপে ফিরেছে বলে মনে করছেন নাট্যশিল্পী হুমায়ূন আজম রেওয়াজ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যদিও বেশ কিছু স্টলে এখনও বাতি জ্বলে ওঠেনি কিংবা সাজসজ্জার কাজ চলছে। লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণ এবার নতুন জায়গায়, সেখানে আলো জ্বলতে আর জমায়েত জমে উঠতে হয়ত লেগে যাবে আরও কিছুদিন।”

দ্বিতীয় দিন মেলায় ঘুরে উল্লেখযোগ্য লোকসমাগম আর নতুন বইয়ের আগমন ছিল চোখে পড়ার মতো। শুক্রবার ছুটির দিনে এ জমায়েত বহুগুণ হবে সে আশাতেই প্রস্তুতির তোড়জোড় চলছে প্রায় সব স্টলেই।

আগামী, অন্যপ্রকাশ, বাংলা একাডেমিসহ বেশ কিছু প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মী জানান, এখন মূলত স্টল গুছিয়ে নিতেই ব্যস্ত তারা। ফাঁকে ফাঁকে কিছু বইও বিক্রি হচ্ছে।

বাতিঘরেরর স্টলের সামনে দেখা গেল নতুন বইয়ের লেখক ও অটোগ্রাফশিকারীদের ভিড় জমে গেছে অনেকটা। মুজিবপিডিয়ার প্যাভিলিয়নেও আড্ডার আয়োজন নজরে পড়ে।

হুমায়ূন বলেন, “মেলা শুরুর দিনগুলোতে পাঠকরা সাধারণত বইয়ের খোঁজ নিতেই ব্যস্ত থাকেন বেশি, কেনাকাটা অতটা প্রাধান্য পায় না। শুক্রবার ছুটির দিনে বইপ্রেমীদের অনেক বেশি লোক সমাগম হবে। তবে বই বিক্রি শুরু হবে দ্বিতীয় সপ্তাহের পর থেকে।”

মেলার বিন্যাস নিয়ে তিনি বলেন, “গতানুগতিক। বিগত কয়েক বছরের নান্দনিক এবং থিমভিত্তিক বিন্যাস এবার অনুপস্থিত। মেলা প্রাঙ্গণে দর্শকের সাময়িক বিশ্রামের জন্য আসনের ব্যবস্থা ছিল গত বছরে, এবার তার দেখা পাওয়া গেল না।”

নতুন বই, মঞ্চের আয়োজন

বৃহস্পতিবার মেলায় নতুন বই এসেছে ২১টি। এদিন বিকাল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলা লোকসাহিত্যে হাটুরে কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিলু কবীর। আলোচনায় অংশ নেন বেলাল হায়দার পারভেজ, আহমেদ মাওলা ও তানভীর আহমদ সিডনী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ।

প্রবন্ধে বলা হয়, হাটুরে কবিতা যে কোনো বিবেচনায় উত্তীর্ণ মানের এক ধরনের লোককবিতা। হাটুরে কবিতার প্রচলন এখন নেই তবে তাকে নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ এর ভেতর আমাদের অতীত মূল্যবোধ এবং সমাজচিত্র অবলোকন করা সম্ভব। তাই লোকমানুষ, সমাজ এবং রাষ্ট্রকল্যাণের স্বার্থে হাটুরে কবিতার দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।

“হাটুরে কবিতা মূলধারার সাহিত্য কিংবা সংস্কৃতিতে মূল্য না পেলেও এর ঐতিহাসিক ও সামাজিক মূল্য অনেক। সমষ্টি-মানুষের চিন্তাধারার প্রকাশ যে সমস্ত বঙ্গীয় লোক-উপাদানে ঘটেছে, হাটুরে কবিতা তাদের অন্যতম। তাই বাংলার সামগ্রিক ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতে গেলে হাটুরে কবিতাকে অবশ্যই আলোচনায় রাখতে হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, “লোক উপাদান নিয়ে আলোচনায় হাটুরে কবিতার প্রসঙ্গ এলেও আমাদের মূল ধারার সাহিত্যালোচনায় এ বিষয়ক আলোচনা সমালোচনার পরিসর তেমন একটা নেই। তবে হাটুরে কবিতা যেহেতু তৃণমূলের লোকমানসের কাব্যিক প্রকাশ, তাই অতীতের লোক-মনস্তত্ত্ব অনুধাবনে হাটুরে কবিতা নিয়ে গবেষণার প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে।”

এদিন মূল মঞ্চের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আসাদ মান্নান, নাসির আহমেদ, মাহবুব আজিজ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম, লায়লা আফরোজ ও ফয়জুল্লাহ সাঈদ।

পুঁথিপাঠ (হাটুরে কবিতা) করেন পাবনার শিল্পী ফকির আবুল হোসেন। সংগীত পরিবেশন করেন মহিউজ্জামান চৌধুরী, তিমির নন্দী, রুমানা ইসলাম, তানজিনা করিম স্বরলিপি ও আজমা সুরাইয়া শিল্পী। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ সরকার (তবলা), আনোয়ার সাহদাত রবিন (কী-বোর্ড), রিচার্ড কিশোর (গীটার) এবং মো. ফারুক (প্যাড)।

মেলার দ্বিতীয় দিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন আখতার হোসেন, মুহাম্মদ শামসুল হক, ফারুক মাহমুদ এবং পারভেজ হোসেন।

শুক্রবার যা থাকবে মেলায়

ছুটির দিন শুক্রবার বইমেলার ফটক খুলবে সকাল ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন শিশুপ্রহর থাকবে সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত।

এছাড়া বইমেলার মূলমঞ্চে বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : আবুল মাল আবদুল মুহিত শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কুতুব আজাদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, জালাল ফিরোজ ও এম আবদুল আলীম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন নূহ-উল আলম লেনিন।