উগ্রবাদীদের দমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে ‘নেতৃত্বের অবস্থানে’ রয়েছে বলেও দাবি করেছেন মোমেন।
Published : 17 Jan 2023, 07:45 PM
আগে কিছু ‘উল্টাপাল্টা’ করলেও এখন র্যাবের জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লুর সফরে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় ওঠার মধ্যে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এই দাবি করেন।
মোমেন বলেন, “র্যাবের উপরে নিষেধাজ্ঞা হয়েছে, র্যাবও তো কিছু উল্টাপাল্টা কাজ করেছে। এটাই বাস্তবতা, অস্বীকার করতে পারবেন না তো।
“এখন অনেক ম্যাচিউরড, আগে প্রথমদিকে র্যাব অনেক লোকজনকে খামোখা কী করে ফেলেছে, কিন্তু বিষয়গুলো পরিবর্তন হয়েছে। র্যাবের জবাবদিহিতা অনেক উন্নতি করেছে।”
বিএনপির শাসনকালে ২০০৪ সালে র্যাব গঠনের শুরুর দিকে এ ধরনের অভিযোগ বেশি ছিল বলে দাবি করেন মোমেন।
র্যাবের জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে উন্নতি হওয়ার কথা বলতে গিয়ে প্রায় তিনশ’ কর্মকর্তার পদাবনতি বা চাকরিচ্যুতির উদাহরণ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবসহ এই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা বলা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি।
তবে ডনাল্ড লু ঢাকা সফরে এসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমানোর ক্ষেত্রে র্যাবের কাজের প্রশংসা করেন। তবে তিনি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সময়সীমার কোনো ইঙ্গিত দেননি বলে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যা কমাতে র্যাবের কাজে উন্নতি দেখছেন ডনাল্ড লু
র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা উঠবে অচিরেই, আশায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সময়সীমার ইঙ্গিত দেননি লু: যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস
জিহাদি ও উগ্রবাদীদের দমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে ‘নেতৃত্বের অবস্থানে’ রয়েছে বলেও দাবি করেন মোমেন।
তিনি বলেন, “আমরা এটাতে খুব সফল। ২০১৭ সালের পরে তো কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম বাংলাদেশে হয় নাই।
“আমেরিকাতেও সন্ত্রাসী হয়, তারা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরাও নিয়েছি। এটা এমন বিষয়, যা আমাদের প্রায় মিলে যায়।”
দুদেশের সম্পর্কের উন্নতি ও শক্তিশালী করতে ডনাল্ড লু ঢাকা সফরে এসেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “উনি এসেছেন, আমাদের সম্পর্কের উন্নতিতে সহযোগিতা করার জন্য। দুদেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার জন্য।
“যে সমস্ত জিনিসে এটা উন্নতি করবে, সেই জিনিসই তিনি চেষ্টা করেছেন। আর আমরাও বলেছি যে, আমাদের কিছু কিছু দুর্বলতা আছে, উনিও স্বীকার করেছেন যে, আমেরিকাতেও আমাদের অনেক দুর্বলতা আছে, এটা পারফেক্ট নয়। সুতরাং আমরা একই রকম অবস্থানে।”
লুর সঙ্গে ‘খুব ভালো’, ‘খুব ইতিবাচক’ ও ‘খুব গঠনমূলক’ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “প্রেসিডেন্ট বাইডেন চাচ্ছেন, আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কটা যেন অত্যন্ত উন্নত হয়। আর আমরা বড় ইকোনমি হয়ে যাচ্ছি, ৩৫ নম্বর ইকোনমি।
“সুতরাং, তারা চায় আমাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে এবং আমেরিকার মূল্যবোধ, নীতি আমাদের সাথেতো এক… তারা গণতন্ত্র চায়, আমরাও চাই, আমরা গণতন্ত্রের জন্য রক্ত দিয়েছি। তারা মানবাধিকার চায়, আমরাও চাই। কিছু কিছু ব্যত্যয় ঘটে… তোমাদের যদি কোনো সমস্যা থাকে, শুধু আমাদের জানাও।”
সম্পর্ক উন্নয়নে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ভূমিকায় ‘খুশি’ হওয়ার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কারণ, তিনি অর্থনৈতিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। আমরা অর্থনৈতিক মুক্তি চাই, এখানে তিনি খুব ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন।”
বাংলাদেশের যেসব দুর্বলতা আছে, সেগুলো দূর করার চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের একটি সমস্যা আছে, শ্রম ইউনিয়ন নিয়ে। আমাদের ওটাতে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বেতন, সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আইনে কিছু গ্যাপ আছে, আমরা সেটা মেটানোর চেষ্টা করতেছি।”
এ ধরনের সফরে সাধারণত বিএনপির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়ে থাকলেও, লুর এবারের সফরে তার ব্যতিক্রম ঘটার বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ওটা ওদের (যুক্তরাষ্ট্র) জিজ্ঞেস করুন। আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন?”