বিচারবহির্ভূত হত্যা কমাতে র‌্যাবের কাজে উন্নতি দেখছেন ডনাল্ড লু

“এটা অসাধারণ কাজ। এটা দেখিয়েছে যে, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান রেখেও র‌্যাব সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করতে সক্ষম।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2023, 11:09 AM
Updated : 15 Jan 2023, 11:09 AM

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বছর বাদে বিচারবহির্ভূত হত্যা কমাতে র‌্যাবের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড ‍লু।

রোববার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে আলোচনা এবং দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবকে নিয়ে প্রশংসা ঝরে লুর কণ্ঠে।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাবসহ এই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা বলা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। লুর সঙ্গে বৈঠকেও বিষয়টি তুলবেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন মোমেন।

র‌্যাবের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে লু বলেন, “আপনারা যদি চলতি সপ্তাহে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন দেখে থাকেন, র‌্যাবের দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমানোর অসামান্য অগ্রগতির বিষয়টি সেখানে উঠে এসেছে, আমরাও তা দেখছি।

“এটা অসাধারণ কাজ। এটা দেখিয়েছে যে, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান রেখেও র‌্যাব সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করতে সক্ষম।”

Also Read: র‌্যাব ও সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

Also Read: র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার জটিল, জানাল যুক্তরাষ্ট্র

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের আগে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন লু, এরপর আসেন সংবাদ সম্মেলনে।

মোমেন, শাহরিয়ার, মাসুদ তিনজনই বলেন, লুর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে ‘খোলামেলা’ আলোচনা হয়েছে।

ডনাল্ড লুও বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যদের সঙ্গে ‘খুব আন্তরিক ও খোলামেলা’ আলোচনা তিনি করেছেন।

“যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে যে, কোনো সমস্যা দেখলে আমরা বলব ও কোথাও পরামর্শ দেওয়ার থাকলে আমরা দেব; কথা বলার স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে আমরা দাঁড়াব। এবং আমরা বাংলাদেশে আমাদের অংশদীরদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে চাই।”

নিজের বক্তব্যের শুরুতে ডনাল্ড লু বাংলায় সালাম দিয়ে বলেন, “মনোমুগ্ধকর নদী বা সৈকত এবং অতিথিপরায়ণ মানুষের দেশ বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরে আমি আনন্দিত।

“আমি এখানে এসেছি আমাদের দুদেশের বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করতে, যখন বর্তমান বিশ্ব শান্তি এবং নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম জন্য করে চলেছে।”

দুপক্ষের মধ্যে ‘খুব গঠনমূলক’ আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “আমরা খুশি যে, আমরা মোটামুটি ঐকমত্যে আছি। এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো দিনের প্রতীক্ষায় আছি।

“আমাদের যে সম্পৃক্ততা এটা খুব কাজের। এবং এর ফলে আমাদের মধ্যে যদি কোনো ধরনের কোনো প্রশ্ন থাকে, সেগুলো আমরা আলোচনার মধ্যে সমাধান করব।”

কোনো ধরনের পরামর্শ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সরকারের আগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সাজেশন পেলে অবশ্যই আমরা গ্রহণ করি, আমরা তার নমুনাও দেখিয়েছি, আমাদের কোথাও যদি কোনো দুর্বলতা থাকে, নিশ্চিতভাবে আমরা সেগুলো আমলে নেব এবং সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করব।

“কারণ, আমরা চাই দেশের মঙ্গল, মানুষের মঙ্গল এবং আমরা চাই আমাদের দেশবাসী অবস্থান যে আরও আরও উন্নত হয়। সুতরাং কেউ যদি আমাকে ভালো সাজেশন দেয়, অবশ্যই আমরা সেটা গ্রহণ করব।”

সরকার অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমার দল আওয়ামী লীগ সবসময় গণতান্ত্রিক মাধ্যমে সরকারে এসেছে। ব্যালটের মাধ্যমে সরকারে এসেছে, কখনও বুলেটের মাধ্যমে আসেনি এবং আমরা এটা বিশ্বাস করি।

“আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের জনগণের প্রতি আর আমরা চাই বিশ্বশান্তি। আমরা চাই, সব জায়গাতে যেন শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়, সেজন্য আমরা একটি অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করি।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা অনেকগুলো ইস্যুতে ভালো আলোচনা করেছি, যতগুলো আমাদের পার্টিনেন্ট ইস্যু, সেগুলো নিয়ে আমরা আলাপ করি খোলামেলা।

“যেহেতু তারা আমাদের ভালো বন্ধু, বন্ধুদের মধ্যে আমরা ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারি খোলামেলাভাবে এবং কোনো ধরনের সংকোচ ছাড়া আর সেটাই আমরা করেছি তাদের সফরে।”

জিএসপি, শ্রম অধিকার প্রসঙ্গ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহুমাত্রিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, নানা বিষয়েই আলোচনা হয়েছে ডনাল্ড লুর সঙ্গে।

“তার সাথে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুস্পষ্ট ও খোলামেলা আলোচনা করেছি বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিনিয়োগ, শ্রম অধিকার, নিষেধাজ্ঞা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র থেকে উন্নয়নের পাশাপাশি ইন্দো-প্যাসিফিকের বিষয়ে আমাদের মত নিয়ে।”

লু বলেন, বাংলাদেশে শ্রম অধিকার পরিস্থিতির উন্নতিতে তার দেশ সহযোগিতা করতে পারে। এক্ষেত্রে উন্নতির সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের বাজার সুবিধা নিয়ে তিনি বলেন, জিএসপি অনুমোদনের জন্য এখনও কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে তার সরকার।

তবে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে সহকারী মন্ত্রী লু বলেন, “আমরা এটা নিয়ে নিবিড়িভাবে কাজ করছি। যখন এটা অনুমোদন পাবে, তখন বাংলাদেশই তালিকায় প্রথম স্থানে থাকবে।”

 ওয়াশিংটন প্রণীত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল (আইপিএস) নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়ে লু বলেন, “আইপিএস নিয়ে চমৎকার আলোচনা হয়েছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশল কার্যত চীনকে এই অঞ্চলে কোনঠাসা করার একটা চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা নিয়ে বেইজিং প্রতিক্রিয়াও জানাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটা আসলে একটা কৌশল, কোনো ক্লাব নয়। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সম্পদ আহরণ ও মনযোগ বাড়াতে চায় এবং সেটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও।”