“বাস্তবতা বলছে, বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত আমরা থামছি না। আসলে কোনো কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।”
Published : 01 Jan 2024, 11:23 PM
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা আর সমাজের বিভিন্ন অংশের অনুরোধ উপেক্ষা করে এবছরও খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদযাপনে ঢাকা শহর ভেসেছে পটকা, আতশবাজি আর ফানুসে। তবে কারও বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি; কেবল নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দায় সেরেছে পুলিশ।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ফানুস থেকে ঢাকার ধানমন্ডি, কেরাণীগঞ্জের জিঞ্জিরা ও জামালপুরে তিনটি অগ্নিকাণ্ডে দুটি দোকান ও একটি বাসা পুড়েছে।
ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে থার্টি ফার্স্ট উদযাপনের অংশ হিসেবে ফানুস ওড়াতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন তিন কিশোর। তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
মেট্রোরেলের লাইনের তারে আটকে থাকা ৩৮টি ফানুস অপসারণ করার কথা জানিয়েছে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিএমটিসিএল।
পটকার অনবরত শব্দ থেকে নিষ্কৃতি পেতে স্থানীয় থানার পাশাপাশি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করেছেন হাজারো মানুষ।
যদিও খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণের দুই সপ্তাহ আগেই ঢাকায় সব ধরনের আতশবাজি, মশাল মিছিল, পটকা ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ করার কথা জানিয়েছিল ডিএমপি।
জানতে চাইলে ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপ কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, “পটকা ফোটানো বা ফানুস ওড়ানোর ঘটনায় কোনো মামলা বা কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।”
তবে আগের চেয়ে পরিস্থিতির উন্নতি দেখছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
“গ্রাজুয়ালি কমানোর যে চেষ্টা ছিল, তাতে দৃশ্যমান প্রণিধানযোগ্য উন্নতি হয়েছে। গতবার সাত জায়গায় আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এবার সেরকম কোনো আগুনের ঘটনা নেই। মানুষ অনেক কম ফানুস উড়িয়েছে। কিন্তু পটকা ফুটেছে বেশ। তবে আগের সময় বিরামহীন ফুটতেই থাকত, এবার কিন্তু ওরকম হয়নি।”
উপ কমিশনার ফারুক বলেন, “১২টার সময় কিছু পটকা ফুটেছে, পরে আর কন্টিনিউ করেনি। আমরা ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা নিয়েছিলাম, সেটা থেকে আমরা প্রত্যাশা করি জনগণ অনেকটাই সচেতন হয়েছে।”
এসব ঘটনায় ঢাকা মহানগরে কোনো মামলা হয়নি জানিয়ে এই পুুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “তবে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ দুই শতাধিক ফোন গেছে। ফোন যাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ সেখানে পৌঁছে গেছে। পরে পেনাল কোডের পাবলিক নুইসন্স করার অপরাধ সংক্রান্ত যে ধারা আছে, সেটার আলোকে সেখানে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
পটকা ফোটানো, ফানুস ওড়ানোর মতো কর্মকাণ্ড কেন ঠেকানো যাচ্ছে না, এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান বলছেন, “সারাদেশে বিশেষ করে ঢাকাকেন্দ্রিক মানুষের জীবনধারায় ব্যাপক একটা পরিবর্তন এসেছে। খুব সঙ্গোপনে একটা নতুন শ্রেণি তৈরি হচ্ছে। মানুষের হাতে টাকা আছে। এগুলো হচ্ছে তার প্রতিফলন।”
সামাজিকভাবে এসব নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের এই ডিন।
“কারণে বাংলাদেশে সবই খুব অপরিকল্পিত ও বিশৃঙ্খল। আমাদের এই শহরে যেরকম অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন হয়েছে, তাতে আমাদের বিচারিক ব্যবস্থা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পক্ষে যথাযথভাবে আইন প্রয়োগ করা খুবই কঠিন। বাস্তবতা বলছে, বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত আমরা থামছি না। আসলে কোনো কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।”
পুলিশ কেবল নিষেধাজ্ঞা দিয়েই দায় সেরেছে, কাউকে আইনের আওতায় আনেনি; তাতে এমন নিষেধাজ্ঞাকে হালকাভাবে দেখার মানসিকতা মানুষের মধ্যে তৈরি হয় কি? উত্তরে অধ্যাপক জিয়া বলেন, “এভাবে দেখার সুযোগ নেই। আসলে বিজাতীয় চর্চাগুলোর অনেক কিছুই আমাদের সংস্কৃতিতে ঢুকে বসে আছে। এগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা নেই।
“এগুলোর অনেক কিছুই আমাদের পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে না বা সহজে বলতে গেলে এগুলো এখন বদহজম হচ্ছে। মানুষ নিজে থেকে এগুলো বন্ধ না করলে থামানো মুশকিল।”
আরও পড়ুন
ঢাকায় ফানুস উড়ল, বাজিও পুড়ল, শুধু নীরব থাকল টিএসসি