ধর্মীয় সংখ্যালঘু কেন কমছে? কমিশন গঠনের দাবি

“এটা করা প্রয়োজন, বাংলাদেশ যাতে বাংলাদেশ হিসেবেই টিকে থাকতে পারে,” বলেছেন রানা দাশগুপ্ত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2023, 09:31 AM
Updated : 19 May 2023, 09:31 AM

দেশের জনসংখ্যায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অনুপাত কেন ধারাবাহিকভাবে কমছে, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি কমিশন গঠনের দাবি উঠেছে। 

শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক আয়োজনে এই দাবি তোলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। 

বাংলাদেশ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে সেখানে গিয়েছিলেন এই আইনজীবী।  

তিনি বলেন, “১৯৪৭ সালে এই পূর্ব বাংলায় সংখ্যালঘুর হার ছিল ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ। ১৯৭০ সালে তা নেমে এল ১৯ থেকে ২০ ভাগে। কিছুদিন আগেই বিবিএসের রিপোর্ট দেখলাম, সেই ১৯-২০ ভাগ জনগোষ্ঠী…সেই সংখ্যাটি কমে নেমে এসেছে ৯ দশমিক ১ ভাগে। 

“কেন হারিয়ে যাচ্ছে, কোনো সরকারকে তা নিরূপণ করে দেখতে দেখি নাই। কিন্তু কেন হারিয়ে গেছে, তা নিরূপণের জন্য সরকারের উচিত একটা কমিশন গঠন করা। এটা করা প্রয়োজন, বাংলাদেশ যাতে বাংলাদেশ হিসেবেই টিকে থাকতে পারে।”

আমরা শান্তিতে নাই, স্বস্তিতে নাই 

প্রতিক্রিয়াশীল মহল বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘুদের ‘টার্গেট’ করে বলেও মন্তব্য করেন রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, “তার উদাহরণ আমরা বিভিন্ন সময় দেখে আসছি। আজ আমরা শান্তিতে নাই। আমরা স্বস্তিতে নাই।”

তিনি বলেন, “আমাদের সংবিধান এখনও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হতে পারে নাই। অনেক নেতারা আমাদের বলে, ‘আপনারা নিজেদেরকে সংখ্যালঘু ভাবেন কেন?’ আমরা নিজেদেরকে সংখ্যালঘু মনে করি না। আমরা ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু হতে পারি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত হওয়ার জন্য আমরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি নাই।”

বঙ্গবন্ধুর করা ৭২-এর সংবিধান সঠিক থাকলেও জিয়াউর রহমান এবং এরশাদের ‘প্রেতাত্মা’ থেকে সংবিধান এখনও মুক্ত হতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন ঐক্য পরিষদের নেতা।

কাগজে-কলমে আইন থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই অভিযোগ করে সরকারের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের’ অভিযোগ তোলেন তিনি। 

রানা দাশগুপ্ত বলেন, “সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ক্ষমতা গ্রহণের পর তা আর বাস্তবায়িত হয় নাই।” 

কী কী অঙ্গীকার পূরণ হয়নি তার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “পার্বত্য শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন করে নাই। বৈষম্য বিলোপ আইনের বাস্তবায়ন নাই… পার্থক্য হল, আগে মামলা নিত না, এখন মামলা নেয়। মামলা নেওয়ার পর দুই একজনকে ধরে। তারপর ১৫ দিনের মাঝেই তারা বেরিয়ে আসে। মামলার সুরাহা হয় না কোন।”
বাংলাদেশ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুনীল রঞ্জন বিশ্বাস এই আয়োজনে সংগঠনের পক্ষ থেকে ১০টি দাবির তুলে ধরেন। 

তিনি বলেন, “আমরা সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের প্রণয়ন চাই। সংখ্যালঘু জাতীয় কমিশন চাই। সেই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধ করারও জোর দাবি জানাই আমরা।”

আগামী বাজেটে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য আনুপাতিক হারে বরাদ্দ চেয়ে তিনি হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ফাউন্ডেশন গঠনেরও দাবি জানান সুনীল। 

সমতল ও পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর জন্য আলাদা ভূমি কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের দাবিও তুলে ধরেন তিনি। 

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনায় ‘বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি’ চালু আছে মন্তব্য করে এই আইনজীবী বলেন, “সেখানে থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।” 

চাকরিতে ২০ শতাংশ সংরক্ষণ, এবং ‘সমঅধিকার ও সমমর্যাদা’ নিয়ে ‘মানুষের মত মানুষ হিসেবে’ বসবাসের নিশ্চয়তাও উঠে আসে দাবিনামায়।

দাবির প্রতি একমত অ্যাটর্নি জেনারেল 

আইনজীবী ঐক্য পরিষদের এই ১০ দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। 

তিনি বলেন, “আপনি যখন দেশের বাইরে যান, আপনাকে কেউ জিজ্ঞেস করে না আপনি হিন্দু নাকি মুসলমান। জিজ্ঞেস করে আপনার দেশ কোথায়। কে হিন্দু, কে মুসলিম, এই ভেবে আমরা যুদ্ধ করি নাই।” 

ত্রিবার্ষিক এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থত থাকার কথা ছিল আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের। তবে তিনি আসতে পারেননি। 

এ বিষয়ে আয়োজক সংগঠনের নেতা ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া বলেন, “উনার এই না আসা কিন্তু ভুল মেসেজ দিতে পারে। না এলে উনি শুরুতেই বলবেন যে ‘আমি আসব না’। আমরা অন্য অতিথি আনব। 

“আমাদের তো একটা ইন্সটিটিউশনাল পারসোনালিটি আছে। উনার না আসায় আমরা হতাশ হয়েছি। কারণ আমরা আমাদের লড়াইয়ের অংশ হিসেবে উনাকে চেয়েছিলাম আজ।” 

বাংলাদেশ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিভাস চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাবেক সভাপতি নিম চন্দ্র ভৌমিক, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, আইনজীবী প্রশান্ত অ্যালবার্ট বাড়ৈও এ সময় বক্তব্য রাখেন।