“ঢাকার আদালত চত্বরে বোমাবাজির সঙ্গে জড়িতদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে,” বলেন হারুন।
Published : 21 Nov 2023, 11:02 PM
বিএনপির ডাকে হরতাল-অবরোধ ঘিরে ঢাকায় বাসে আগুন দেওয়ার এক মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ বলছে, মুখে রুমাল বা মাস্ক ব্যবহার করে যাতে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়, সেই নির্দেশনা পেয়ে আসছে অগ্নিসংযোগকারীরা।
তাছাড়া আগুন দেওয়ার ভিডিও লন্ডনে পাঠানোর নির্দেশনাও থাকে বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ।
মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, গাড়িতে আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে দুইজন বিএনপির এবং একজন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। রবি ও সোমবার গ্রেপ্তার হওয়ার পর তারা এখন রিমান্ডে আছে।
এই তিনজন হচ্ছেন- ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের গ্রন্থাগার বিষয়ক সম্পাদক তানভীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন এবং বিএনপি সমর্থক ফারুক হোসেন।
গত ৪ নভেম্বর গাউছিয়া মার্কেটের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ডিবি পুলিশ বলছে, ওই ঘটনায় যে মামলা হয়েছে, তার তদন্ত করতে গিয়ে লালবাগ এলাকা থেকে তানভীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকি দুজনকে সবুজবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, “একটি রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে তারা বিভিন্ন গাড়িতে আগুন লাগানো, ককটেল হামলা চালিয়ে থাকে বলে স্বীকার করেছে। বলেছে- মুখে রুমাল বা মাস্ক বেঁধে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে আগুন লাগিয়ে বা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকা ত্যাগ করার বিষয়ে তাদের নির্দেশনা থাকে।
“পাশাপাশি ওই গাড়িতে যাত্রীবেশে থাকার বিষয়েও সিনিয়র নেতারা নির্দেশ দেন বলে গ্রেপ্তার তানভীর জানিয়েছে।”
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, “তানভীর নিউ মার্কেট থানা এলাকায় আগুন লাগানোর ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে এবং ঘটনার পরপরই তার এক বন্ধুকে চ্যাটে বলেছে, ‘আগুন লাগাই কী হবে? আমরা আগুন লাগিয়ে এই ছবিগুলো পাঠাই, দূরে লন্ডনে তারা তো ভালই আছে- আমরা তো ধরা পড়লে জেল খাটতে হবে।”
আগুনসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
‘বোমাবাজদের শিগগিরই ধরা হবে’
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে সোমবার হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
আদালতের একটি সিসিটিভি ভিডিওর বরাতে মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির শাহ মো. মামুন বলেছিলেন, আদালত ভবনের চারতলা থেকে ককটেল সদৃশ বস্তু নিচে ফেলতে দেখা গেছে। এ সময় সেখানে ছিলেন এক নারী ও এক পুরুষ। পরে তারা দ্রুত আদালত চত্বর ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন বলেন, “যারা প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা চালাতে পারে, তারা তো আদালত চত্বরে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতেই পারে। তবে কারা করেছে- সেটা জানি এবং অনেকের নাম-নম্বরও পাওয়া গেছে। সিসিটিভি ফুটেজ আছে। সবগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে তাদের শিগিগিরই গ্রেপ্তার করা হবে।”
‘কাউকে ডেকে এনে ভাত খাওয়ানো হয় না’
গত ২৯ জুলাই আন্দোলনরত বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে আপ্যায়িত করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপর সেই কার্যালয়ে গিয়ে অনেক তারকাও আপ্যায়িত হয়েছেন।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের শেষের দিকে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের কাছে এক সাংবাদিক প্রশ্ন রাখেন, “আপনার অফিসকে ভাতের হোটেল কেন বলা হয়?”
জবাবে হারুন বলেন, “আমরা হলাম রসবোধ প্রবণজাতি। বাংলা সাহিত্যে রসবোধ আছে। এখানে কাউকে ডেকে এনে খাওয়ানো হয় না। যদি কেউ কাজের জন্য আসে- তার কাজটাও করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং দুপুরের খাওয়ার সময় হলে তাকে দুপুরের খাওয়ার কথা বলা হয়।”
হারুন বলেন, “ডিবি হল একটা আস্থার জায়গা। বাংলাদেশ পুলিশ ব্রিটিশ পুলিশ না। ঔপনিবেশিক পুলিশ না। এখন স্বাধীন দেশের পুলিশ। ডিবি সাধারণ মানুষ কাজের জন্য। কাজ করে দেওয়া একটা দায়িত্ব।”
পুলিশ যদি কাউকে আপ্যায়িত করে থাকে, তাতে ‘খারাপ কিছু’ দেখেন না হারুন অর রশীদ।
“আমরা মানবিক পুলিশ, আর ভাতের হোটেল নিয়ে যারা বলেন, তারা রসবোধ থেকে বলেন। তারা ভালো অর্থে বলেন বলে আমি মনে করি। এটাতে আমরা উৎসাহ পাচ্ছি। মানুষ আসছে, কাজও করে যাচ্ছে, আবার খেয়ে গিয়ে প্রশংসাও করছে। মানবিক পুলিশ হিসাবে আমরা আপ্যায়ন করার চেষ্টা করি।”