পল্টনের মুক্তি ভবনের সামনে থেকে ৭০ থেকে ৮০ জন চা শ্রমিক বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিজয়নগর শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নেয়।
Published : 30 Jul 2023, 04:43 PM
দৈনিক ন্যূনতম ৫০০ টাকা মজুরি এবং বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে ঢাকায় শ্রম ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন চা শ্রমিকরা।রোববার বেলা ১১টায় পল্টনের মুক্তি ভবনের সামনে থেকে ৭০ থেকে ৮০ জন চা শ্রমিক বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিজয়নগর শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নেন। বেলা ১টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান নিয়ে নানা দাবি তুলে ধরেন চা শ্রমিকরা।
চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক সবুজ তাঁতী বলেন, “১১ হাজার টাকা বকেয়া মজুরি পরিশোধের সিদ্ধান্ত চা-শ্রমিকরা মেনে নেননি। সাত মাস পার হলেও ২০২৩-২৪ সালের নতুন মজুরিসহ অন্যান্য বিষয়ে চুক্তির কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। “
ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে দাবি-দাওয়া নিয়ে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ের ভেতরে যান বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির একটি প্রতিনিধি দল।ফিরে এসে সবুজ তাঁতী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহাপরিচালক ছিলেন না। তবে অন্য কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি আমাদেরকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে যেতে বলেছেন।“
১২০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে চা শ্রমিকরা গত বছরের অগাস্ট মাসে টানা ১৯ দিন ধর্মঘট পালন করেন। সে সময় হবিগঞ্জের ২৪টি চা-বাগানসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চা-বাগানগুলোতে কর্মবিরতি চলে। পরে রাজপথে অবরোধের মত কর্মসূচিতে যান চা শ্রমিকরা।
ওই আন্দোলনের মাঝামাঝি সময়ে শ্রম অধিদপ্তর ও মালিকপক্ষ ১২০ টাকা মজুরির জায়গায় ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা দিতে সম্মতি জানালেও চা-শ্রমিকরা তা প্রত্যাখান করে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। পরে প্রধানমন্ত্রী তাদের নতুন মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দেন। যা মেনে নিয়ে কাজে ফিরেছিলেন চা শ্রমিকেরা।
এরপর চলতি বছরের ১ মার্চ শ্রম অধিদপ্তর প্রজ্ঞাপন করে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি থোক বরাদ্দ হিসেবে ১১ হাজার টাকা তিন কিস্তিতে পরিশোধের ঘোষণা দেয়।
সবুজ তাঁতী বলেন, “হিসাব অনুযায়ী প্রত্যেক চা শ্রমিক ৩০ হাজার টাকার বেশি বকেয়া মজুরি পাবেন। কিন্তু চা-শ্রমিকের শ্রমে আর ঘামে অর্জিত সম্পূর্ণ বকেয়া মজুরি কেন দেওয়া হবে না, সে বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি প্রজ্ঞাপনে।“
চা শ্রমিকদের এক নেতা সত্যজিৎ উরাং বলেন, “এখন আমাদের ১৭০ টাকা দৈনিক মজুরি দিচ্ছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতিতে এই টাকায় কী হয় আপনারই বলুন। তাই ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি চাই।“
ছুটির ক্ষেত্রে বাগানে বাগানে তারতম্য আছে জানিয়ে, চা শ্রমিকদের নেতা সন্ধ্যা রানী বলেন, “আমাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি কোনো কোনো চা বাগানে দুই মাস, কোনো বাগানে তিন মাস আবার কোনো বাগানে চার মাস। কিন্তু কোনো বাগানে ছয় মাস নেই কেন? আমাদেরকে এত ছোট করে দেখা হচ্ছে কেন? তাহলে কেন এত পার্থক্য।“
শাহবাগে সংহতি সমাবেশ
শ্রম ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালনের পর বিকালে ঢাকার শাহবাগে চা শ্রমিকদের নিয়ে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশ নেয়।
সমাবেশে চা শ্রমিক নেতা পুরান হুরান বলেন, “এই চা-শ্রমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে বলেই এই আন্দোলন। একটা স্বাধীন রাষ্ট্রে চা বাগানে আলাদা রাষ্ট্রের মতো জিম্মি করে রাখা হয়েছে, যেখানে মানবিক জীবন ধারণের কোনো সুযোগ সুবিধা নাই। নিজেদের অস্তিত্বের টানে আমরা আজকে রাস্তায় নেমে এসেছি।”
সমাবেশে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “আমি একটি তদন্ত কমিশন গঠন করার কথা বলব। যাতে করে চা বাগান মালিকরা বিদেশে গিয়ে কত টাকা খরচ করে, তা প্রকাশ করা হয়৷ এ সমস্ত টাকা এসেছে চা শ্রমিকের পরিশ্রমে। আজকে তারা দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা ও ভূমির অধিকারের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু করেছেন, তা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, "আজকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২০০০ টাকা৷ কিন্তু একজন চা শ্রমিক এখন দৈনিক মজুরি পায় ১৭০ টাকা৷ তাহলে বাকি টাকা গেল কোথায়? তাদের টাকা গেল চা বাগান মালিক, মন্ত্রী-এমপিদের পকেটে, যারা বন দখল করে৷
"দেশের শ্রমিকদের মাঝে চা শ্রমিকদের অবস্থা সবচেয় খারাপ। চা বাগানে প্রাইমারি স্কুল দিতে হবে, এটা কোনো দাবি হতে পারে? এটা তো এমনিতেই হওয়ার কথা। শ্রমিকদের এই ৫০০ টাকার দাবিটাও অনেক কম।”
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতনের সভাপতিত্বে সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশও বক্তব্য দেন। সমাবেশ বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, ঐক্য ন্যাপ, বাসদ (মার্কসবাদী), ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্টের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: