গান-কবিতায় শাহবাগে 'স্বাধীনতা সমাবেশ'

“আমরা প্রতিদিন ভয় নিয়ে বসবাস করছি। কিন্তু আশার আলো দেখি, যখন তরুণরা কথা বলার অধিকারের জন্য গান করছে, কবিতা লিখছে,” বলেন সাংস্কৃতিক কর্মী আরিফ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2023, 02:02 PM
Updated : 26 Feb 2023, 02:02 PM

গান-কবিতার মধ্য দিয়ে 'স্বাধীনতা সমাবেশ' করে চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাইলেন লেখক-ব্লগার ও শিল্পীরা।

মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যার অষ্টম বার্ষিকীতে রোববার শাহবাগে এ আয়োজন থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি তোলা হয়। পাশাপাশি লেখক-প্রকাশক-ব্লগার এবং ভিন্নচিন্তা ও বৈশিষ্ট্যের সব মানুষ হত্যার দ্রুত বিচারের দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে ওয়াসিম আহমেদ ও তাহমিদ চৌধুরী পরিবেশন করেন 'বাস্কিং' শিরোনামে পরিবেশনা। 'ওরা আমার মুখে ভাষা কাইড়্যা নিতে চায়' কবিতার সাথে বিভিন্ন কবিতার কোলাজের মাধ্যমে তাদের পরিবেশনাটিতে কথা বলার অধিকারের দাবি জানানো হয়।

ওয়াসিম আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা গান এবং কথার মধ্য দিয়ে একটা কোলাজ পরিবেশন করেছি। এটি মূলত এক ধরনেরর বাস্কিং।

“এই বাস্কিংয়ে বলতে চেয়েছি মানুষই কথা বলতে পারে। ফলে মানুষের কথার সাথে দ্বিমত থাকবে, তাই বলে হত্যা করা যাবে না। কথা বলার জন্য মানুষ হত্যা যারা করে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।"

সমাবেশে গানের মধ্য দিয়ে সংহতি জানায় নাট্যসংগঠন বাতিঘরসহ বিভিন্ন সংগঠন। এছাড়া কবিতা পরিবেশন করেন কামরুজ্জামানসহ অনেকে।

ব্লগার কৌশিক আহমেদ সমাবেশে বলেন, "আমাকে এখানে দুটো কথা বলার জন্য ডাকা হয়েছে। আমি দুটি কথাই বলব। কারণ তিনটি কথা বললেই আমাদের ভয়ে থাকতে হয়। কথা বলার জন্য মানুষ মারা যায়, সেই মৃত্যুর তালিকায় হয়ত আমার নামও যুক্ত হয়ে যাবে। এমন এক পরিস্থিতিতে আমরা বাস করছি।

"রাষ্ট্রের সকল মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব। তাকে যারা ভোট দেন, কিংবা যারা ভোট দেন না। তাদের কথা বলার অধিকার নিশ্চিত করাটা উনার দায়িত্ব। তাই মতপ্রকাশের জন্য যাদের হত্যা করা হয়েছে। তাদের হত্যার বিচার করতে হবে।”

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের উত্তাল আন্দোলনের মধ্যে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার পর ধারাবাহিকভাবে জঙ্গি হামলার শিকার হতে থাকেন লেখক, ব্লগার, প্রকাশক, সমকামী অধিকারকর্মীরা।

মুক্তমনা ব্লগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অভিজিত রায় নিয়মিত বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখিতে যুক্ত ছিলেন। উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই প্রকৌশলীকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল জঙ্গিবাদীরা।

২০১৫ সালের একুশের বইমেলায় দুটি বই প্রকাশ হয় অভিজিতের, সে কারণেই স্ত্রী বন্যাকে সঙ্গে নিয়ে ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে তিনি দেশে আসেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলায় এক অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে হামলার শিকার হন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে প্রকাশ্যে অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। চাপাতির আঘাতে আঙুল হারান তার স্ত্রী। সেই ঘটনা পুরো বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন সৃষ্টি করে।

লেখক অভিজিৎ রায়সহ বিভিন্ন সময় যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের ছবি স্থান পায় শাহবাগের সমাবেশ ব্যানারে। এছাড়া স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র, কথা বলার অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল কর- শিরোনামের বিভিন্ন ফেস্টুন সমাবেশে দেখানো হয়।

উদীচীর কর্মী আরিফ নূর সমাবেশে বলেন, “আমরা প্রতিদিন ভয় নিয়ে বসবাস করছি। কিন্তু আশার আলো দেখি, যখন তরুণরা কথা বলার অধিকারের জন্য গান করছে, কবিতা লিখছে। তখন আমি সাহসী হই।

"আপনার চিন্তার সাথে আমার হয়ত দ্বিমত থাকবে। কিন্তু আপনার মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এই লড়াইয়ে আমি থাকব। মানুষকে তার মুক্ত চিন্তা, মুক্তভাবে কথা বলার অধিকার দিতে হবে। এই ব্যানারে যাদের ছবি দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের জন্য হত্যা করা হয়েছে। এই তালিকায় আমরা আর কোনো নতুন নাম দেখতে চাই না। আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই।"