দণ্ডিত সাত আসামির মধ্যে তিনজন কারাগারে আছেন, বাকিরা পলাতক।
Published : 30 Nov 2023, 11:11 AM
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাগেরহাটে হত্যা, ধর্ষণের মত যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল ২৯৩ পৃষ্ঠার এ রায় ঘোষণা করে।
ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।
রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে ছিলেন প্রধান প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, রানা দাশগুপ্ত ও রেজিয়া সুলতানা। আসামিপক্ষে ছিলেন গাজী এম এইচ তামিম।
দণ্ডিতরা হলেন খান আকরাম হোসেন (৬০), শেখ মোহম্মদ উকিল উদ্দিন (৬২), মো. মকবুল মোল্লা (৭৯), খান আশরাফ আলী (৬৫), রুস্তম আলী মোল্লা (৭০), শেখ ইদ্রিস আলী (৬১) ও শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল (৬৪)।
এদের মধ্যে প্রথম তিনজন রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অপর চারজন পলাতক রয়েছেন।
এ মামলার ১২ আসামির মধ্যে চারজন বিচার চলাকালে মারা যান। আরেক আসামি আজাহার আলী সিকদার মারা যান গত ১৭ অক্টোবর।
আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়, যেগুলো ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত হয়।
২৯৩ পৃষ্ঠার রায়ের সারাংশকে তিন ভাগ করে প্রথম ভাগ পড়ে শোনান বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম। দ্বিতীয় অংশ পড়েন বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার। সবশেষে দণ্ডাদেশ পড়েন বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলাম।
দণ্ডিতদের বিরুদ্ধে আনা সাতটি অভিযোগের সবগুলোই প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে দণ্ডিতরা আপিল করতে পারবেন। তবে যারা পলাতক, আপিল করার জন্য তাদের আত্মসমর্পণ করতে হবে।
১ নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ২৬ মে ১৫/২০ জন রাজাকার ও ২৫/৩০ জন পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যসহ বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানাধীন চাপড়ী ও তেলিগাতীতে নিরীহ নিরস্ত্র মুক্তিকামী মানুষদের ওপর হামলা চালিয়ে ৪০/৫০টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করে, বাড়িঘর অগ্নিসংযোগে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে, দুইজন নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম করে এবং ১০ জন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে গুলি করে হত্যা করে।
২ নম্বর অভিযোগ: ৭ জুলাই আসামিরা বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার হাজরাখালী ও বৈখালী রামনগরে হামলা চালিয়ে অবৈধভাবে নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের চারজন লোককে আটক ও অপহরণ করে আবাদের খালের ব্রিজে হত্যা করে মরদেহ খালে ফেলে দেয়।
৩ নম্বর অভিযোগ: ১৩ নভেম্বর বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ উপজেলার ঢুলিগাতী গ্রামে হামলা চালিয়ে দুইজন নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে আটক ও নির্যাতন শেষে গুলি করে হত্যা করে।
৪ নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর জেলার কচুয়া উপজেলার বিলকুল ও বিছট গ্রামে হামলা চালিয়ে চারজন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের লোককে আটক ও অপহরণ করে কাঁঠালতলা ব্রিজে এনে নির্যাতন করে; পরে গুলি করে হত্যার পর মরদেহ নদীতে ফেলে দেয়।
৫ নম্বর অভিযোগ: ৩০ নভেম্বর কচুয়ার বিলকুল গ্রাম থেকে নিরস্ত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী নকীবকে আটক ও অপহরণ করে মোড়লগঞ্জ থানার দৈবজ্ঞহাটির গরুর হাঁটির ব্রিজের ওপরে নিয়ে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করে।
৬ নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৬ অক্টোবর কচুয়ার উদানখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র উকিল উদ্দিন মাঝিকে হত্যা করে এবং তার মেয়েকে আটক ও অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশেপাশের রাজাকার ক্যাম্পে দীর্ঘদিন ওই মেয়েসহ চারজনকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ দখলদার মুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্প তল্লাশি করে ভিকটিম তাসলিমাকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেন।
৭ নম্বর অভিযোগ: কচুয়ার গজালিয়া বাজারে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরীহ নিরস্ত্র শ্রীধাম কর্মকার ও তার স্ত্রীকে আটক ও নির্যাতন শুরু করে। পরে শ্রীধাম কর্মকারকে হত্যা করে স্ত্রীকে অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আটকে রেখে উল্লিখিত আসামিসহ কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশেপাশের রাজাকার ক্যাম্পে ওই নারীসহ চারজনকে ধর্ষণ করে। প্রায় এক মাস শারীরিক নির্যাতনের পর শ্রীধামের স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান।