বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ মার্কিন নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ।
Published : 30 Oct 2023, 12:17 AM
মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘উপদেষ্টা’ পরিচয় দিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা মিঞা জাহিদুল ইসলাম আরেফীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
রোববার পল্টন থানায় মামলাটি করেন মহিউদ্দিন শিকদার নামের এক ব্যক্তি। গোপালগঞ্জের ছেলে মহিউদ্দিন নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে বন্ধুত্ব সম্পর্ক- তার অবনতি ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের নাম ব্যবহার করে সরকারবিরোধী শক্তিকে উসকে দিতে এবং সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করার অভিপ্রায়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”
পল্টন থানার ওসি সালাহউদ্দীন মিয়া জানান, দণ্ডবিধির ৪১৯ ও ১০৯ ধারায় এই মামলা করা হয়। মামলায় অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকেও আসামি করা হয়েছে।
শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষের পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আরেফী। তিনি নিজের পরিচয় দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘উপদেষ্টা’ হিসেবে। মামলায় তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া লেখ হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সংবাদ সম্মেলনের ভিডিওতে দেখা যায়, মিঞা আরেফী ইংরেজিতে বক্তব্য দিচ্ছেন, তার হাতের ডানদিকে বসে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইশরাক হোসেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, শনিবার রাতে হাসান সারওয়ার্দী ও ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে সংবাদমাধ্যমের সামনে আরাফী নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের উপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
আরেফি দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে তার দিনে ১০-১৫ বার যোগাযোগ হয় এবং মার্কিন সরকারের সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে।
মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করার কথা আরেফী দাবি করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাকে ‘মিথ্যা বক্তৃতা দিতে সহযোগিতা করে’ সারওয়ার্দী ও ইশরাক বিএনপি নেতাকর্মীদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে উসকানি দেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এও বলা হয়েছে, আরেফীর বক্তব্য শুনে ও ভিডিও দেখে দেশের আইন-শৃখলায় ব্যাপক অবনতি ঘটে।
বাইডেনের ‘ভুয়া উপদেষ্টা’ আরেফী আটক
বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়া সেই ব্যক্তি ইসরায়েলের এজেন্ট: তথ্যমন্ত্রী
আরেফীর সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কোনো প্রতিনিধি নয়াপল্টনে গিয়েছিলেন কি না, এমন প্রশ্নে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি বলেন, ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কেউ নন। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে কারও যাওয়ার তথ্য পুরোপুরি ‘মিথ্যা’।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যে ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন, তার সম্পর্কে বিএনপির কাছে কোনো তথ্য নেই।
বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি কীভাবে বিএনপির প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে ‘গোপন বৈঠক’ করেছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
ওই ব্যক্তি পররাষ্ট্র নীতি-নৈতিকতা কতখানি লংঘন করেছেন, সেই প্রশ্ন তুলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখছে।
আর তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ওই মার্কিন নাগরিককে ইসরায়েলের এজেন্ট হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আরেফীর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে সিদ্ধান্ত: হারুন
রোববার দুপুরের পর দেশের বাইরে যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশন পুলিশ আরেফীকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) কে এন রায় তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।”
পরে রাতে গোয়েন্দা কার্যালয়ের ফটকে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, “আরেফী বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ১৯৮৪ সালে আমেরিকা চলে যান। ১৯৮৬ সালে আবার দেশে আসেন। পরে ২০২২ সালে দেশে এসে খুলনার এক নারীকে বিয়ে করেন। ছয় মাস বারিধারায় তিনি বসবাস করেছেন।
“ওই সময় হাঁটাচলা করতে গিয়ে সারওয়ার্দীর সাথে পরিচয় হয়। তারপর তাদের মধ্যে কথাবার্তা এবং একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে।”
পুলিশ কর্মকর্তা হারুন বলেন, “আরেফী আমেরিকা চলে গেলে সোহরাওয়ার্দী তাকে বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির একটি সমাবেশ আছে, আপনি একটু আগে আসেন। তিনি (আরেফী) এক মাস আগে বাংলাদেশে আসেন। আবার চলে যান এবং ২৬ অক্টোবর আবার দেশে আসেন।
“তাকে বিএনপি'র বড় র্যালি আছে এটা বলে নিয়ে যায় পার্টি অফিসে।”
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, “উনি বলেছেন, সারওয়ার্দী ও বিএনপি নেতা অ্যাভোকেট বেলাল ও ইশরাক উনাকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, এটা সত্য না। তারা মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করেছেন।
“জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন বাসা থেকে আনার সময় উনারা তাকে শিখিয়েছেন যে, ‘র্যাব স্যাংশান দিতে সহায়তা করেছি, এখন পুলিশ আর আনসারকে দিব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও দিব। এই কথাগুলি বললে দেখবেন যে, বাংলাদেশের পুলিশও মানুষ ডি-মোরালাইজড হবে’।”
হারুন অর রশিদ বলেন, “এখন আমরা উনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, ওনার স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করব। তারপরে ওনার বিষয় আমরা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেব।”
অর্থের বিনিময়ে আরেফী মিথ্যাচার করেছেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ কর্মকর্তা হারুন বলেন, “সেটা আমরা জিজ্ঞাসাবাদে বের করব যে- উনি কেন এ সমস্ত বক্তব্য দিয়েছেন, কিসের বিনিময়ে দিয়েছেন?”