সংঘর্ষের দিন ঢাকার অন্তত ১৫টি জায়গায় বাস-অ্যাম্বুলেন্সসহ যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে।
Published : 28 Oct 2023, 07:51 PM
পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের দিন ঢাকার অন্তত ১৫টি জায়গায় বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন জ্বালিয়ে দেওয়ার খবর দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
শনিবার দুপুরের পরপরই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। এর কিছু পরই মালিবাগে ফ্লাইওভারের উপর যাত্রীবোঝাই বলাকা পরিবহনের একটি বাস ভাঙচুরের পর সেটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
বাসটির চালক ও তার সহকারীর অভিযোগ, হামলাকারীদের পিঠে থাকা ব্যাগে পেট্রোলের বোতল নিয়ে এসেছিলেন। গাড়ির ভেতর এক বোতল পেট্রোল ছিটিয়ে দিয়াশলাই মেরে আগুন দেওয়ার পর মোটরসাইকেলে চলে যায় তারা।
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মৌচাক মোড়ে ফ্লাইওভারের উপর পুড়ে যাওয়া বাসটি রামপুরামুখী রাস্তায় আড়াআড়ি করে রাখা অবস্থায় দেখা গেছে। বাসের পাশে বিমর্ষ মুখে দাঁড়ানো তিনজনকে জিজ্ঞাসা করা হলে জানালেন, এই বাসটিতে তারা কর্মরত ছিলেন।
চালক স্বাধীনের ভাষ্য, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে যাত্রী নিয়ে তারা মগবাজার ফ্লাইওভার হয়ে কমলাপুর যাচ্ছিলেন। ফ্লাইওভারের উপর ওঠার পর হঠাৎ দেখেন, দুই-তিনশ লোক হাতে গজারির লাঠি-সোঁটা নিয়ে আসছে। তিনি বিপদ মনে করে বাস ঘুরিয়ে রামপুরার দিকে নিতে চান। কিন্তু ততক্ষণে লাঠিসোঁটা নিয়ে বাসের কাঁচ ভাঙতে শুরু করে ফ্লাইওভারে থাকা লোকজন।
“বাস তখন যাত্রী ভরা। কাঁচ পড়ে যাত্রীদের অনেকেই আহত হন, আমি নিজেও আহত হই। যাত্রীরা হুড়মুড় করে নেমে যায়। এসময় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তদের একজন গাড়ির ভেতরে উঠে পানির বোতল থেকে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।”
আগুনে গাড়ির ভেতরের আসনগুলোসহ অনেক কিছুই পুড়ে গেছে বলে জানালেন চালক স্বাধীন।
চালকের সহকারী আমিনুল ইসলাম বলেন, ভাঙচুরের সময় কাঁচ পড়ে যাত্রীদের অনেকে আহত হন। কয়েকজনের মাথা ফেটে রক্ত ঝরছিল।
“সব যাত্রী নেমে যাওয়ার পর হামলাকারীদের একজন পিঠের ব্যাগ থেকে বোতল বের করে বাসের ভেতর ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।”
বোতলটি বাসের কাছেই পড়ে ছিল, কিছুটা গলে গেছে। সেটি উঠিয়ে নিয়ে আমিনুল শুঁকেও দেখালেন, ভেতরে পেট্রোলের গন্ধ।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কমলাপুরে বিআরটিসির একটি বাসেও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা রাফি আল ফারুক জানান, কাকরাইল মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর রাজধানীর শাহজাহানপুর, শান্তিনগর, মালিবাগ, কমলাপুরসহ অন্তত ১৫টি জায়গায় যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির সমাবেশে যখন নেতাকর্মীরা জড়ো হচ্ছিলেন সেই সময়ে কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড়ে একদল লোক কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে। এসময় কাকরাইল মোড়ে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে এবং আইডিইবি ভবনে রাখা একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, বিকাল সোয়া ৩টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে দুবৃর্ত্তরা আইসিইউ সুবিধাসংবলিত একটি অ্যাম্বুলেন্সসহ চারটি গাড়ি ও ১২টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া ৯টি বিভিন্ন ধরনের গাড়ি ভাংচুর করে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকায় যেসব জায়গায় আগুন দেওয়া হয়েছে, আমাদের টিম পুলিশ প্রোটেকশন নিয়ে সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।
“যেখানে প্রোটেকশন পাচ্ছে না, সেখানে সমস্যা হচ্ছে। আমাদের গাড়িগুলো কাজই করছে, স্টেশনে ব্যাক করতে পারছে না।”