বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের সদিচ্ছার প্রতিদান দিচ্ছে না বলে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে বক্তব্য তুলে ধরেছে সরকার।
সোমবার জেনিভায় মানবাধিকার পরিষদের বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইউনিভার্সাল পেরিওডিক রিভিউতে (ইউপিআর) এ বক্তব্য তুলে ধরা হয়।
রিভিউতে জাতিসংঘের ১১১টি সদস্য দেশ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
রিভিউ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর জেনিভা থেকে ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। ঢাকা প্রান্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
এক প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, রেসিপ্রোকেট করার যে বিষয়টা… আপনারা নিজেরাই দেখছেন যে, বিএনপি-জামায়াত তারা কী করছে।
“তো, সেক্ষেত্রে আমার এটা বলা মনে করেছি সরকারের পক্ষ থেকে ন্যায্য এবং যুক্তিসঙ্গত যে, তারা আমাদের যে পরিষ্কার অবস্থান এবং আমাদের যে সাংবিধানিক অবস্থায় আমাদের অবস্থান, সেটা তারা রেসিপ্রোকেট করছে না।”
তিনি বলেন, দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি।
“এজন্য নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতার পাশাপাশি কমিশনকে শক্তিশালীকরণের জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেছি। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আইনি ব্যাখা আমি সভায় উপস্থাপন করেছি।”
বাংলাদেশের রিভিউ উপলক্ষে কয়েকটি দেশ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন করে বলে জানান আইনমন্ত্রী।
এসব বিষয়ের মধ্যে আছে- শ্রমিক অধিকার, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, মানবাধিকার সম্পর্কিত কিছু ইন্সট্রুমেন্টে সম্ভাব্য র্যাটিফিকেশন, মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিভিন্ন স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার/মেকানিজমের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার, বৃদ্ধ ব্যক্তির অধিকার রক্ষা।
আনিসুল হক বলেন, “আমি যথাযথভাবে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছি। বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সুশাসন, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার কাজ করে যাবে বলে আমি কাউন্সিলকে অবহিত করেছি।”
বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়ার বিষয়েও অবস্থান সেখানে তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি কিন্তু খালেদা জিয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত জোরালোভাবে আমাদের অবস্থান এবং যেটা বাস্তব এবং সত্য অবস্থান, সেটাকে আমি বলেছি।
“এবং এটাও আমি বলেছি, এখন তাদের এই মিথ্যাকে পরিহার করে সত্যের দিকে যেতে হবে। তারপরও কিন্তু তারা কোনো প্রশ্ন তোলে নাই। তারা গ্রহণ করেছে বা গ্রহণ করে নাই, সেটা যদি আমি জোর দিয়ে নাও বলি, কিন্তু আমার মনে হয় এই ব্যাপারে তাদের কোনো প্রশ্ন নাই, সেজন্যই প্রশ্ন করে নাই।”
আরেক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “গুম, হত্যা সম্পর্কে আমাদের কী অবস্থান এবং আমরা কী কাজ করেছি, সেটা আমরা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছি এবং সেই উল্লেখ করার পরে তারা কিন্তু আমাদের কোনো প্রশ্ন করে নাই।”
তিনি বলেন, “কয়েকটা দেশ নির্বাচন সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল যে- তারা অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়, যেমন যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম…সেক্ষেত্রে আমি নির্বাচনের ব্যাপারে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি।”
উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের প্রশংসা কুড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলেন, যুক্তরাজ্যের কথা বলেন, বেলজিয়ামের কথা বলেন, এরা সকলে কিন্তু আমাদের যে অগ্রগতি হয়েছে সেটার প্রশংসা করেছে।
“এবং কিছু কিছু এরিয়ায়, যেমন নির্বাচন সম্পর্কে তারা বক্তব্য দিয়েছে এবং তারা বলেছে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা। এখানে কিন্তু তারা জোরালোভাবে সমালোচনা করে নাই।”
আইনমন্ত্রী বলেন, “দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে; যেখানে প্রত্যেক নাগরিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পূর্ণরূপে উপভোগ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছি।
আরও পড়ুন: