“একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য কিংবা কী উদ্দেশ্যে করেছে সেটা জানার প্রয়োজন রয়েছে, সেটি জানার চেষ্টা করছি,” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
Published : 18 Jul 2023, 06:15 PM
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোটের শেষ দিকে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার পেছনে কাদের ‘ইন্ধন’ ছিল, হামলার পেছনে উদ্দেশ্যে কী, সেসব তথ্যের সন্ধান করছে সরকার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, “যারা হামলা করেছেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে।”
পুলিশ এ ঘটনায় সাত জনকে গ্রেপ্তারের কথা বললেও সংখ্যাটি আট বলে তথ্য দেন মন্ত্রী।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার নিজের দপ্তরে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি জন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, গোয়েন লুইসও হামলার ওই ঘটনা নিয়ে জানতে চেয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “নির্বাচনে একদল জিতবে একদল হারবে। নেপথ্যে কারা এই কাজটি (হিরো আলমের ওপর হামলা) করেছে, একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য কিংবা কী উদ্দেশ্যে করেছে সেটা জানার প্রয়োজন রয়েছে, সেটি জানার চেষ্টা করছি। যাদেরকে ধরেছি, তাদের জবানবন্দি নেব। আমরা সবকিছুই মিলিয়ে দেখব।”
পুলিশের সামনেই নৌকার ব্যাজ পরে হামলা হয়েছে, সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, “পুলিশের গাফিলতি থাকলে সেটি তো পুলিশ জবাব দেবে। আমরা সেটি দেখবই। যাতে কোনো রকম গণ্ডগোল না হয়, কোনো কেন্দ্রে কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য পুলিশ ওখানে ছিল।
“পুলিশের যদি কোনো গাফিলতি থাকে অবশ্যই আমরা সেটি দেখব। অলরেডি পুলিশকে আমরা বলেছি, তোমাদের কোনো অবজারভেশন আছে কিনা, সেটিও তোমরা জানাবা, আমরা মূল ঘটনাটি কি সেটি জানতে চাই।”
কী হয়েছিল ভোটের দিন
সোমবার ভোট শেষ হওয়ার আগে সোয়া ৩টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে হামলার শিকার হন হিরো আলম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দিতে স্কুলের মাঠে কয়েকজনের সঙ্গে সেলফি তোলেন হিরো আলম। তখন হামলাকারীদের কয়েকজন এসে তাকে ঘিরে ধরেন এবং বলেন, ‘এটা টিকটক ভিডিও বানানোর জায়গা না।’
এরপর তারা হিরো আলমকে ধাওয়া শুরু করেন। তখন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা হিরো আলমকে ঘিরে ধরে স্কুলের গেইটের দিকে নিয়া যান।
ভিডিওতে দেখা গেছে, স্কুলের থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ সদস্যরা কেন্দ্রে ফিরে যায়, আর এই সুযোগে ধাওয়াকারীরা হিরো আলমকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের ওপর ফেলে দেন।
এরপর একতারা প্রতীকের প্রার্থীর ওপর লাথি, কিলঘুষি, ধস্তাধস্তি চলে। নৌকার ব্যাজ পরা হামলাকারীদের কয়েকজনের হাতে লাঠিসোঁটাও ছিল। মারধরের মুখে দৌড়ে পালান হিরো আলম।
এজাহারে বলা হয়, “সোমবার নির্বাচনের দিন বিকেলে হিরো আলম, তার ব্যক্তিগত সহকারী পরান সরকার, প্রতিনিধি রাজীব খন্দকার, রনি ও আল আমিনসহ বনানী বিদ্যা নিকেতন কেন্দ্রে যান।
হিরো আলমের ওপর হামলায় জাতিসংঘের উদ্বেগ
“বেলা পৌনে ৪টার দিকে কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে বের হয়ে আসার সময় অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জন ব্যক্তি হত্যার উদ্দেশ্যে হিরো আলমের ওপর হামলা চালায়।
“তারা আলমকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি লাথি মারতে থাকে। এ সময় দুজন আলমের কলার ধরে তার শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে, অপর একজন এসে আলমের তলপেটে লাথি দিলে তিনি রাস্তায় পড়ে যান। রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পরেও তারা আলমকে মারধর ও টানাহেঁচড়া করে।”
হামলার পর রামপুরার বেটার লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন হিরো আলম। সেখান থেকে ফিরে রাতে জানান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আর নির্বাচন করবেন না তিনি।
এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া এসেছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং বিএনপির পক্ষ থেকেও। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে নিন্দাও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত।
জাতিসংঘের কর্মকর্তার সঙ্গে কী কথা
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তিনি (গোয়েন লুইস) জানতে চেয়েছিলেন হিরো আলম কীভাবে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে? আমরা বললাম, এটা কেন হয়েছে এখনও বলতে পারব না।
“সরকার পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থাই ছিল যেন একটা শান্তিময় পরিবেশ থাকে। আমরা যেটুকু দেখেছি নির্বাচনের শেষের দিকে কয়েকজনের সঙ্গে বাদানুবাদের লিপ্ত হন এবং লিপ্ত হয়েই দেখা গেল কয়েকজন যুবক তার ওপর অ্যাটাক করে।”
“আমরা তাকে জানিয়েছি, ইতোমধ্যে আমরা আটজনকে গ্রেপ্তার করেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে যারা (হিরো আলমের ওপর হামলায়) অংশগ্রহণ করেছেন সবাইকে অ্যারেস্ট করব। এবং এটা তদন্ত করে বের করতে চেষ্টা করব এ রকম একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কার দ্বারা এই ঘটনা ঘটানো হল। এগুলো আমরা বের করব”, বলেন মন্ত্রী।
হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার টুইট করে উদ্বেগ জানান গোয়েন লুইস। তিনি লিখেন, “ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলমের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের বাংলাদেশ কার্যালয় উদ্বিগ্ন। সহিংসতা ছাড়াই প্রত্যেকের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মৌলিক মানবাধিকার অবশ্যই নিশ্চিত ও সুরক্ষিত করতে হবে।”
বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে এই নির্বাচনকে আলোচনায় আনেন ইউটিউবার হিরো আলম। এর আগে বগুড়া থেকে নির্বাচন করা এই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন একতারা প্রতীক নিয়ে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে কী বার্তা দিল ঢাকা-১৭
জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকায় একটি উপনির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকল না, এটি কী কোনো বার্তা দিল? একজন সাংবাদিক এ প্রশ্ন ছুড়ে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচনে কে হারল, কে জিতল সেটি বড় কথা নয়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্ন হয়েছে, সেটিই হচ্ছে কথা। আমি মনে করি এখানে নিশ্চয়ই কোনো ইন্ধন ছিল হিরো আলমকে নিয়ে, আমরা সেটিই বের করতে চেষ্টা করেছি। কেন এই ঘটনাটি ঘটল সেটি আমরা তদন্ত করে দেখছি, তদন্তের পর আমরা বলতে পারব।”
প্রশ্নের জবাব মেলেনি জানিয়ে সেটি আবার করা হলে মন্ত্রী বলেন, “মেসেজ এল, আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।”