আবহাওয়া অফিস বলছে, সন্ধ্যা নাগাদ পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসতে পারে এ ঝড়।
Published : 17 Nov 2023, 12:39 PM
ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে মোংলা-পায়রা উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ শুক্রবার দুপুরে উপকূল স্পর্শ করেছে। আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে সন্ধ্যা নাগাদ পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসতে পারে এ ঝড়।
পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে আগের মতই ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় সংকেত ব্যবস্থায় ৫, ৬ ও ৭ নম্বর বিপদ সংকেত সতর্কতার সমান মাত্রা বোঝায়। ঘূর্ণিঝড় বন্দরের কোন দিক দিয়ে যাবে, তা বোঝাতে সংখ্যায় পার্থক্য করা হয়।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে চলছে ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি ৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা বড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিবড় কোন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে৷
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা লক্ষীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নালাঞ্চ স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে আবহাওয়া অফিস।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই চলছে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে সারা দেশে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআইডব্লিউটিএ।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠানামা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া বেশিরভাগ ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরলেও বরগুনায় ঘাটে ফেরেনি তিন শতাধিক জেলেসহ ২০টি ট্রলার।
চার মৃত্যু
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে অব্যাহত বর্ষণে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় বসতঘরের মাটির দেয়াল চাপায় এক পরিবারের চারজন নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজারের মরিচ্যাঘোনার পানিরছড়া নামক এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।
নিহতরা হলেন- ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পানিরছড়ার ফকির মোহাম্মদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৫০), ছেলে শাহিদুল মোস্তফা (২০), মেয়ে নিলুফা ইয়াছমিন (১৫) ও সাদিয়া বেগম (১১)।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ফকির মোহাম্মদ পাহাড়ের পাদদেশে মাটি দিয়ে বসতঘরটি তৈরি করেছিলেন। রাতে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় ঘরের উপরে ও চারপাশে ত্রিপল দিয়ে ঘুমান সবাই। রাত ৩টার দিকে মাটির দেয়াল ধসে চাপা পড়ে ফকির মোহাম্মদ ছাড়া বাড়ির সবাই মারা যান।
লঘুচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়
পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে গত ১৪ নভেম্বর একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর সেটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ধীরে ধীরে মক্তি সঞ্চয় করে সেই ঘূর্ণিচায়ুর চক্র ১৫ নভেম্বর নিম্নচাপে পরিণত হয়। তারপর বাঁক নিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে বৃহস্পতিবার পরিণত হয় গভীর নিম্নচাপে।
রাতভর শক্তিসঞ্চয়ের পর সেই গভীর নিম্নচাপ শুক্রবার ভোরে পরিণত হয় ঘূর্ণিঝড়ে। তখন এর নাম হয় মিধিলি (Midhili)
আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়। মিধিলি নামটি মালদ্বীপের দেওয়া।
নিম্নচাপের প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই বৃষ্টি চলছিল। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে।
শুক্রবার সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড় মিধিল মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। তখন দেশের চার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়।
এরপর সকাল ৯টায় আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়, মোংলা বন্দরের ২৬৫ কিলোমিটার এবং পায়রা বন্দরের ২৭০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে মিধিলি। তখন হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়।
এর আগে গত ২৪ অক্টোবরে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়’ হামুন। এটি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে। তাতে গাছপালা-ঘরবাড়ির ক্ষতি হয় বেশ, প্রাণ যায় অন্তত চারজনের।
সেই তুলনায় ঘূর্ণিঝড় মিধিল বেশ দুর্বল বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ।