ইউনূসসহ চার আসামির সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা জরিমানা চেয়েছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী।
Published : 25 Dec 2023, 12:33 AM
গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার কর্মকর্তা বাংলাদেশের শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছেন কি না, তা জানা যাবে নতুন বছরের প্রথম দিন।
গ্রামীণ টেলিকমের ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করা, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেয়ার অভিযোগে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হবে কি না, সেদিন সেই সিদ্ধান্ত দেবেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা।
রোববার দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে তিনি আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করে দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হয়াদার আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিফেন্সে ব্যাড কনডাক্ট হয়েছে। তারা সাফাই সাক্ষ্য দিয়ে বলতে পারতেন যুক্তিতর্কে যা বলেছেন সেগুলো। তাহলে তাদের কথাগুলো দলিল প্রদশর্নী হিসাবে রায়ে মূল্যায়িত হত। কিন্তু তা তারা করেননি।
“এমনকি তারা আত্মপক্ষ সমর্থন এ ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার জবানবন্দিতেও এই সব বিষয়ে মৌখিকভাবে তুলে ধরেননি। আসামিপক্ষ শুধু আমাদের রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের বক্তবব্যের বিরোধিতা করে যুক্তি দিয়েছেন যুক্তিতর্কের শুনানির সময়। আমরা আশা করছি, আমাদের পক্ষেই রায় আসবে। অভিযুক্তরা সাজা পাবেন।”
যুক্তিতর্কের শুনানিতে ইউনূসসহ চার আসামির সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা চান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, তার মক্কেলরা এ মামলা থেকে খালাস পাবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ইউনূস নিজেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমি বা আমরা কোনো অন্যায় করিনি, তাই আশা করি; সত্যই প্রমাণিত হবে। শিগগিরই এই মামলা থেকে খালাস চাই; কারণ আমাদের নির্দোষ প্রমাণ করার কিছু নেই। আমাদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ আনা হয়েছে- সব মিথ্যা।”
শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস ছাড়াও গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান এবং দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান এ মামলার আসামি। তারা চারজনই যুক্তিতর্কের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘ শুনানির শেষভাগে ইউনূসকে এজলাসে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। এজলাসে উপস্থিত আইনজীবী ও ইউনূসের পক্ষে এজলাসে যারা ছিলেন, তারাও ছিলেন ক্লান্ত।
রোববার বেলা সাড়ে এগারোটায় শুরু হয় শুনানি, চলে রাত সোয়া ৮টা পর্যন্ত। মাঝে এক ঘণ্টা দুপুরের খাবার এবং মাগরিবের নামাজের জন্য বিরতি দেওয়া হয় ১৫ মিনিট। শ্রম আদালতে এত দীর্ঘ সময় ধরে কোনো মামলার শুনানির ঘটনা এটিই প্রথম।
মামলা বৃত্তান্ত
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।
শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
এ মামলা বাতিলের আবেদন নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতেও গিয়েছিলেন ইউনূস। কিন্তু গত মে মাসে তার আবেদন আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে গেলে মামলা চালানোর বাধা দূর হয়।
এরপর চলতি বছরের ৬ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা।
গত ২২ অগাস্ট থেকে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বাদীসহ চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ৮ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেন আসামিরা।
৩৪২ ধারার আত্মপক্ষ সমর্থনে ইউনূস বলেছিলেন, “আমি তো নিজে এ প্রতিষ্ঠানের মালিক নই। আমার আদর্শ কর্মসূচিতে কোনো ত্রুটি ছিল না। এত বড় কাজ করতে গেলে কিছু ভুল হতে পারে। আমরা তো ফেরেশতা নই। কিন্তু ভুল হলে তা ইচ্ছাকৃত নয়।”
যুক্তিতর্ক শুনানিতে যা হল
রোববার চলে দুইপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্কের আইনি বাহাস। ইতি টানা হয় ১১ কার্যদিবসের শুনানির, যা শুরু হয়েছিল ২১ নভেম্বর।
আদালতে ইউনূসের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। অন্যদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও সৈয়দ হায়দার আলী।
ইউনূসের আইনজীবীর দাবি, ‘হয়রানির জন্যই’ জালজালিয়াতির মাধ্যমে কাগজ তৈরি করে মামলা করা হয়েছে। তিনি চার আসামির সবার খালাস চান।
অন্যদিকে ইউনূসসহ আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা চেয়ে যুক্তিতর্ক শেষ করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী।
ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন পরে সাংবাদিকদের বলেন, “এ মামলায় যে অপরাধের কথা বলা হচ্ছে, তাতে ইউনূসসহ অন্য আসামিদের সংশ্লিষ্টতার কথা সাক্ষীদের বর্ণনায় আসেনি। তাদের বিরুদ্ধে কোনো নথিও নেই। মামলার আর্জিতে কোথাও আসামিরা অপরাধী এমন কোনো অভিযোগ উল্লেখ নেই।”
তিনি বলেন, “কোম্পানি আইন অনুযায়ী অপরাধ কোম্পানির হবে। কিন্তু এখানে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এ কারণে এ মামলা চলতে পারে না।”
পুরনো খবর: