যুদ্ধ-সংকটের সমাধান সংলাপ ও আলোচনায়: শেখ হাসিনা

“আমরা চাই না কোনো মানুষ শরণার্থীর জীবন পাক, কারণ আমারও এ ধরনের অভিজ্ঞতা রয়েছে,” বলেন শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2022, 06:25 AM
Updated : 28 Nov 2022, 06:25 AM

সংলাপ ও রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো যুদ্ধ ও সংকটময় পরিস্থিতির সমাধান হতে পারে মন্তব্য করে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ব নেতাদের তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে ইন্টারন্যাশনাল উইমেন পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি সেমিনারে তার এ আহ্বান আসে। 

তিনি বলেন, “আমি বিশ্ব নেতাসহ সবার কাছে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাই। কোনো দেশের মধ্যে কোনো ধরনের সংকট থাকলে সেটা সংলাপ, রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। কিন্তু যুদ্ধ না, আমরা কোন যুদ্ধ চাই না।

“আমরা চাই না কোনো মানুষ শরণার্থীর জীবন পাক, কারণ আমারও এ ধরনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।”

রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা মানবিক কারণে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমাদেরও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে একই ধরনের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। তাই আমরা তাদের (রোহিঙ্গা) দুর্দশা বুঝতে পারি।

“আমি জেনে আনন্দিত যে সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমি আশা করছি অংশগ্রহণকরীরা যুদ্ধ ও সংঘাতের শিকার হওয়া মানুষদের যন্ত্রণা ও সমস্যা বোঝার জন্য অধিবেশন থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে।“

সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো সংঘাত ও দুর্যোগে নারীর দুর্দশা বেড়ে যায় বহুগুণ।

“এটা প্রশ্নাতীত যে নারীরা সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশ, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। তারা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা, অপুষ্টি, অশিক্ষার শিকার। “

নারীদের শান্তি ও নিরাপত্তা সংকটের সমাধানে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব গ্রহণ করায় প্রশংসা করে তিনি বলেন, “জতিসংঘ ‘নারী শান্তি ও নিরাপত্তা’ এজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করেছে। সেই রেজুলেশন প্রণয়নে অংশ নিতে পেরে বাংলাদেশ গর্বিত।”

শেখ হাসিনা বলেন, “ক্ষমতায়ন ছাড়া সমাজে নারীদের অবস্থার কোনো উন্নতি হত না। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ জাতীয় জীবনের সব পর্যায়ে নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

“আমার সরকার নারী নীতি ২০১১ প্রণয়ন করেছে। এই নীতির অধীনে আমরা মূলধারার আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে নারীদের সার্বিক উন্নয়ন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং তাদের ক্ষমতায়নের সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করার ব্যবস্থা নিয়েছি।“

রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, ব্যবসা, খেলাধুলা, সশস্ত্র বাহিনীসহ নানা খাতে নারীদের অংশগ্রহণ ও অবদান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক দৃশ্যপটকে বদলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

শান্তিরক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে নারীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে তিনি ‘রোল মডেল’ হিসেবে বর্ণানা করেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, “আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অধিকতর অংশগ্রহণের কারণে বাংলাদেশে জেন্ডার সমতা সব ক্ষেত্রেই উন্নত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে লিঙ্গ সমতায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।“

নারীর কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের রাষ্ট্র গঠনের শুরুতেই লিঙ্গ সমতার সারমর্মটি সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। এবং দেশের প্রথম সংবিধান নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করা হয়।”

তিনি জানান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় প্রথমবারের মত নারীরা সশস্ত্র বাহিনীতে আসেন। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর মোট ৭০৪ জন নারী শান্তিরক্ষী এ পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়েছেন। আর বর্তমানে ৩৭৩ জন নারী সদস্য বিভিন্ন শান্তি মিশনে নিয়োজিত আছেন।

বাংলাদেশ পুলিশের মোট ১ হাজার ৬২৪ জন নারী পুলিশ কর্মকর্তাও শানিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন এবং বর্তামানে কাজ করছেন দেড়শ জন।

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে সরকারি চাকরির উচ্চ পদ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদে নারীদের দায়িত্ব পালনের কথাও বলেন শেখ হাসিনা।