Published : 19 Feb 2023, 10:00 PM
বৈশ্বিক সংকটে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনার যে আহ্বান জানিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নিজের সরকারি বাসভবন গণভবনের অব্যবহৃত জমিকে কাজে লাগিয়ে নিজেই সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
গণভবনের বিশাল আঙ্গিনায় হাঁস-মুরগী, কবুতর, গরু পালনের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ধরনের ধান, শাক-সবজি, ফুল-ফল, মধু ও মাছ চাষ করছেন বলে জানিয়েছেন সেখানকার কর্মকর্তারা। পাশাপাশি তিল-সরিষার মতো পেঁয়াজও চাষ করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
গণভবনের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রোববার মোট চাষের প্রায় অর্ধেক জায়গার পেঁয়াজ কাটা হয়েছে। এতে ফলন পাওয়া গেছে ৪৬ মণ। বাকি জমিতে আরও ৫০ মণের বেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাবে।
দেশি পেঁয়াজের বর্তমান বাজার দর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ হিসাবে গণভবনে ফলন পাওয়া ৪৬ মণ পেয়াজের দাম আসে ৬৫ হাজার থেকে ৭৩ হাজার টাকা।
পাঁচজনের একটি পরিবারে মাসে পাঁচ কেজি পেঁয়াজের প্রয়োজন ধরলে গণভবনে উৎপাদিত প্রায় ১০০ মন পেঁয়াজে ৭-৮’শ পরিবারের এক মাসের চাহিদা পূরণ হবে।
ব্যয় সাশ্রয়ে এবং নিজেদের ফসল উৎপাদনে স্বাবলম্বী হতে কোভিড মহামারীর মধ্যেই ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সংকটে পতিত জমিতেও চাষাবাদের আহ্বান জানিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে তিনি নিজেই সেই কাজে যুক্ত হয়েছেন বলে খবর মিলল।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবেলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজে গণভবন আঙ্গিনার পতিত প্রতি ইঞ্চি জমিকে উৎপাদনের আওতায় এনেছেন এবং জনগণের প্রতি করা নিজের আহ্বানকে বাস্তবে রূপদান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
“এদেশের আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত। দেশের মাটি-মানুষ, কৃষির সঙ্গে মিশে আছে তার প্রাণ। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ফসলি উঠোনে নানা ধরনের ফসলের আবাদ তারই ছোট্ট একটা দৃষ্টান্ত।”
সরকারপ্রধানের প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার বিষয়টি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের সবুজ বিপ্লবের ডাক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে করছেন বলে জানিয়েছেন ইহসানুল করিম।
গণভবন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণভবন আঙ্গিনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঁশফুল, পোলাও চাল, লাল চালসহ বিভিন্ন জাতের ধান; ফুলকপি, পাতাকপি, লালশাক, পালং শাক, ধনেপাতা, গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় বতুয়া শাক, ব্রকলি, টমেটো, লাউ, সিমসহ প্রায় সব ধরনের শীতকালীন শাক-সবজি চাষ করছেন।
এছাড়া তিল, সরিষা, সরিষা ক্ষেতে মৌচাক পালনের মাধ্যমে মধু আহরণ; হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, তেজপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের মশলা; আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, বরই, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল; গোলাপ, সূর্যমুখী, গাঁদা, কৃষ্ণচূড়া সহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ করছেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান অবসর পেলেই এসব তদারকিও করেন উল্লেখ করে গণভবনের কর্মকর্তারা জানান, এসব ফসল ফলাতে ব্যবহার করা হয় গণভবনে গরুর খামারের গোবর থেকে উৎপাদিত জৈব সার।
গণভবনের আঙ্গিনায় প্রধানমন্ত্রী আলাদা করে গরুর খামার, দেশি হাঁস-মুরগী, তিথির, চীনা হাস, রাজহাঁস, কবুতরের খামার করেছেন।
একইসঙ্গে পুকুরে চাষ করছেন রুই-কাতলা, তেলাপিয়া, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। পুকুরে মুক্তার চাষও করছেন শেখ হাসিনা। অবসর সময়ে গণভবনের লেকে মাছও ধরেন তিনি।
উৎপাদিত এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রধানমন্ত্রী নিজের জন্য সামান্য রেখে গণভবন কর্মচারী এবং দরিদ্র-অসহায় মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন বলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।