নিখোঁজ এ দুইজনকে আগুন লাগার প্রায় সাত ঘণ্টা পর ভবনের ভেতরে অচেতন অবস্থায় খুঁজে পান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এর আগে এক নারী নামতে গিয়ে উপর থেকে পড়ে মারা যান।
Published : 27 Oct 2023, 12:57 AM
মহাখালীর খাজা টাওয়ারের আগুনে ওই ভবনের দুটি কোম্পানিতে কর্মরত এক প্রকৌশলী ও এক নারী কর্মীর মৃত্যু হয়েছে; যারা অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন।
বৃহস্পতিবার বিকালের এ আগুন লাগার প্রায় সাত ঘণ্টা পর ষাটোর্ধ্ব ওই প্রকৌশলী এবং ওই নারীকে অচেতন অবস্থায় খুঁজে পান ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
পরে তাদের উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে জানান। এ নিয়ে এ ঘটনায় তিনজনের প্রাণহানি হল।
সবশেষ নিহত দুইজন হলেন রফিকুল ইসলাম (৬২) ও আকলিমা রহমান।
এর আগে ওই ভবনে থাকা রেইস অনলাইন নামে একটি কোম্পানিতে কর্মরত হাসনা হেনা (২৭) নামে এক নারী বারান্দা দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে নিহত হন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, রাত ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রফিকুল ইসলামকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আকলিমার লাশ ১১ তলা থেকে বডি ব্যাগে করে নামিয়ে আনা হয়েছে।
আকলিমার ভাই রিয়াসাত রহমান বলেন, আগুন লাগার পর তার বোন আরেক আত্মীয়কে ফোন করে বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছিলেন। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি নবম তলায় রেইস অনলাইনে কাজ করতেন।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে লাশ বহনের ‘বডি ব্যাগের’ ভেতরে ঢোকানো অবস্থায় নিখোঁজ আকলিমাকে ভবনের ভেতর থেকে বের করে আনেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। পরে বডি ব্যাগটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আধা ঘণ্টা আগে আগুন লাগার প্রায় সাত ঘণ্টা পর রাত ১১টা ৩৬ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ৬৫ বছর বয়সী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে অচেতন অবস্থায় নামিয়ে আনেন। তখন পর্যন্ত নবম তলায় কর্মরত আকলিমা রহমানের কোনো খোঁজ মিলছিল না বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছিলেন।
প্রকৌশলী রফিকুল কাজ করতেন সাইফ পাওয়াটেক কোম্পানিতে। মহাখালীর খাজা টাওয়ারের ১৪ তলায় ছিল তার কর্মস্থল। আগুন লাগার পর সর্বশেষ সাড়ে ৫টায় বড় ছেলের সঙ্গে কথা হয় তার। এরপর আর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ফোনও ধরছিলেন না।
খাজা টাওয়ারের নিচে মহাখালী এলাকায় একবার ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাছে আরেকবার ভবনের লোকজনের কাছে ছোটাছুটি করছিলেন রফিকুলের ছোট ছেলে সামিউল।
তিনি বলেন, বাবা সাড়ে ৫টার দিকে ভাইয়াকে ফোন করে বলেছিলেন পানি নিয়ে যেতে। এরপর থেকে আর যোগাযোগ হয়নি।
পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রফিকুলকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। উদ্ধারের পর তার ছেলে সামিউল বলেন, “বাবাকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে ১৪তলা এ ভবনে লাগা এ আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তায় সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর সদসরাও কাজ করছেন।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তার বলছেন, রাত ৯টা পর্যন্ত তারা ভবনটি থেকে আটজনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন।
ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, তাদের দুইটি ল্যাডারসহ টিটিএল (সিঁড়িযুক্ত উদ্ধারকারী গাড়ী) দিয়ে কাজ করছে। ভবনের গ্লাস ভাঙা হচ্ছে, ভেতরে কেউ আটকে আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে, সেই সঙ্গে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে মহাখালি আমতলী সংলগ্ন খাজা টাওয়ারে ১৪ তলা ভবনের ১৩ তলায় আগুন লাগে।