মকবুলের ধারণা হয়েছিল, তাওহীদের বাবা প্রবাসী হওয়ায় তাকে অপহরণ করলে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করা যাবে।
Published : 12 Feb 2024, 03:15 PM
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাবের-১০ এর সদস্যরা রোববার কেরাণীগঞ্জের পোস্তগোলার একটি আবাসিক হোটেল থেকে মো. মকবুল হোসেন নামের ৩৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।
এ বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলছেন, গ্রেপ্তারের সময় মকবুলের কাছ থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়, যা তিনি মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করেছিলেন।
সোমবার কারওয়ানবাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন বলেন, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার, রসুলপুর জামিআ ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগের ১০ বছর বয়সী ছাত্র মো. তাওহীদ ইসলাম নিখোঁজ হয় শনিবার রাতে।
অপহণের পর তাওহীদকে হত্যা করে তার লাশ সেপটিক ট্যাংকে গুমের কথা মকবুল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ‘স্বীকার করেছেন’ বলে র্যাবের ভাষ্য।
কমান্ডার মঈন বলেন, মকবুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাওহীদের পরিবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের যে এলাকায় থাকে, সেখানেই থাকতেন মকবুল।
তাওহীদের বাবা বিদেশে থাকেন। কিছুদিন আগে তাদের বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন মকবুল। কাজ করার সময় মকবুল সবার চোখ এড়িয়ে একটি মোবাইল তাওহীদের বাসায় রেখে আসে। পরে তাওহীদকে অপহরণ করে ওই মোবাইলে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করেন।
র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, “মাদ্রাসা থেকে বাড়ি না ফেরায় তাওহীদের বাড়ির লোকজন অনেক জায়গায় তাকে খোঁজাখুঁজি করে। এরপর ওই রাতেই অপরিচিত এক নম্বর থেকে মকবুলের ফেলা যাওয়া মোবাইলে তাওহীদকে অপহর করার ফোন আসে, দাবি করা হয় তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ। টাকা না পেলে তাওহীদকে খুনের হুমকি দেওয়া হয় ফোনে।“
এরপর তাওহীদের মা দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন।
কমান্ডার মঈন বলেন, “তাওহীদ সকালে মাদ্রাসার যাওয়ার জন্য বাসা হতে বের হত এবং বাসায় ফিরতে ছেলেটির বেশিরভাগ সময় সন্ধ্যা হয়ে যেত। মকবুলের ধারণা হয়েছিল, তাওহীদের বাবা প্রবাসী হওয়ায় তাকে অপহরণ করলে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করা যাবে।
“এই লোভে মকবুল ৬ মাস ধরে তাওহীদকে অপহরণের পরিকল্পনা আঁটে। সে অনুযায়ী গত ১০ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফেরার রাস্তা থেকে তাওহীদকে অপহরণ করে ওই এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তার হাত-পা-মুখ বেঁধে রাখে। এরপর তাওহীদের বাসায় রেখে আসা মোবাইল ফোনে মকবুল মু্ক্তিপণের জন্য ৩ লাখ টাকা চেয়ে ফোন করে।“
মকবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, “ওই রাতে তাওহীদের মুখের বাঁধন খুলে যাওয়ায় ছেলেটি চিৎকার শুরু করে। সে সময় মকবুল তাওহীদের গলায় মাফলার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। পরে ওই পরিত্যক্ত বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে লাশ গুম করে পালিয়ে যায়। “
এর মধ্যে মকবুলের কথা মত তাওহীদের মামা দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের ফুটব্রিজের ওপরে ৪ নম্বর পিলারের গোড়ায় ৩ লাখ টাকা রেখে আসেন।
পরে ওই টাকা সংগ্রহ করে মকবুল চলে যান পোস্তগোলার একটি আবাসিক হোটেলে। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় পরে র্যাব সদস্যরা মকবুলের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করে বলে কমান্ডার মঈন জানান।