“মানুষ আমাকে যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, আমি এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা তাদের ফিরিয়ে দেব আমার কাজের মধ্য দিয়ে,” বলেন ফেরদৌস।
Published : 07 Jan 2024, 04:15 PM
সকাল সোয়া ৮টা। জিগাতলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফটকের সামনে লোকজনের জটলা। তারা সবাই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ফেরদৌস আহমেদের সমর্থক। অন্য প্রার্থীর সমর্থকদের তখনও দেখা নেই। কেন্দ্রের সামনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পোস্টারও খুব একটা চোখে পড়েনি।
সকাল গড়িয়ে দুপুর এলেও ঢাকা-১০ আসনে অন্তত ১০টির কেন্দ্র ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে। সবখানেই কেবলই নৌকা সমর্থকদের ভিড়। দু-এক জায়গায় লাঙ্গল সমর্থক পাওয়া গেলেও তাদের উপস্থিতি খুবই কম। বেশিরভাগ কেন্দ্রে নৌকা ও লাঙ্গল ছাড়া অন্য প্রার্থীর পোলিং এজেন্টও নেই।
অথচ এই আসনটিতে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা চার, যাদের মধ্যে আছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি’র শামসুল আলম (আম), জাতীয় পার্টির শাহজাহান (লাঙ্গল), সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের শাহরিয়ার ইফতেখার (ছড়ি) এবং ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ’র বাহারানে সুলতান বাহার (টেলিভিশন)।
ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, কলাবাগান, হাজারীবাগ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের- ১৪,১৫,১৬,১৭,১৮ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-১০ আসন।
এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৩৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৭৫জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৫১ হাজার ৬৬১জন এবং হিজড়া ভোটার ৩জন।
দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ কে এম রহমতুল্লাহ। অষ্টম সংসদে বিএনপির আব্দুল মান্নান। সপ্তম সংসদে আওয়ামী লীগের এইচ বি এম ইকবাল। পঞ্চম সংসদে শেখ হাসিনাকে হারিয়ে বিজয়ী হন বিএনপির আব্দুল মান্নান।
দুপুর সাড়ে ১২টায় জিগাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুনসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
ডিবি কর্মকর্তা হারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি কয়েকটা কেন্দ্রে ঘুরেছি। সব জায়গায় সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট হচ্ছে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই। ভোটারদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ রয়েছে।”
একই সময় কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন নৌকা সমর্থিত প্রার্থী ফেরদৌস আহমেদ। রূপালি পর্দার নায়ককে কাছে পেয়ে অনেকেই তার সঙ্গে সেলফিও তুলেন।
এর আগে দুপুর পৌনে ১টায় জিগাতলা মোড়ে ইউল্যাব ভবনের সামনে ফেরদৌস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচনের পরিবেশ খুব ভালো রয়েছে। শীতের দিন হওয়ায় সকালের দিকে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কমছিল। তবে দুপুর থেকে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে শুরু করেছে।
“নৌকার জয় নিয়ে আমি আশাবাদী। মানুষ আমাকে যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, আমি এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা তাদের ফিরিয়ে দেব আমার কাজের মধ্য দিয়ে।”
ভোটার উপস্থিতি কম
জিগাতলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মনেশ্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইন্সটিটিউট অফ লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি, রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, রাজমুশুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঢাকা সিটি কলেজ, কলাবাগানের লেক সার্কাস উচ্চ বিদ্যালয়সহ ১০টির বেশি কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, ভোটার উপস্থিতি কম। তবে বিকেলের দিকে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে আশা করছেন ভোটকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সিটি কলেজের ৩৩ নম্বর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার কেন্দ্রে কেবল নৌকা ও লাঙলের পোলিং এজেন্ট এসেছে, অন্য প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টরা আসেননি।
“এখানে মোট ভোটার ১৩৩৩জন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৯৪ জন ভোট দিয়েছেন, ভোটগ্রহণের হার ৭.০৫। ভোটার উপস্থিতি কম।”
ভোটার উপস্থিতি কিছুটা বেশি দেখা যায় জরিনা সিকদার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে। তবে সেখানেও কেবল নৌকার সমর্থকদেরই ভিড়। দেখা পাওয়া যায়নি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের।
কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অফিসার মো. সানোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে ভোটগ্রহণ ভালোমতোই হচ্ছে। কোনো রকম সমস্যা দেখছি না।”
পাশেই নতুনকুঁড়ি স্কুলের আরেকটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০টা পর্যন্ত ১০৪টা ভোট গ্রহণ হয়েছে। এই কেন্দ্রের মোট ভোটার ২৪৭৭জন।
জিগাতলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হলে এক ঘণ্টায় কেন্দ্রটিতে ৬০/৭০টির মতো ভোটগ্রহণ হয় বলে কেন্দ্রে দায়িত্বরত তিন আনসার সদস্য জানালেন।
কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার রবিউল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল ১০টার মধ্যে ভোটগ্রহণ হয় ৯২টি, ১১টার মধ্যে হয় ১৫৬টি এবং দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২২৩টি ভোটগ্রহণ হয়। কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণের হার ৭.৭৫।”
হাজারীবাগের মনেশ্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটির ভেতরে সকাল সাড়ে ৮টায় দেখা যায়, ভোটারদের জন্য ভেতরে অপেক্ষায় রয়েছেন পোলিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কেন্দ্রে সাংবাদিকের উপস্থিতি দেখে নৌকা সমর্থকদের গোটা দশেক লোক লাইন ধরে দাঁড়ান, তবে তাদের ছবি তুলতে গেলে তারা লাইন থেকে সরে যান।
কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অফিসার রতি রঞ্জন সূত্রধর প্রথম ঘণ্টায় কয়টি ভোটগ্রহণ হয়েছে জানাতে পারেননি। তবে একটি ভোটকক্ষের পোলিং অফিসার নাম প্রকাশ না করে বলেন, তার কক্ষে প্রথম ঘন্টায় ভোটগ্রহণ হয়েছে মাত্র ৪টি।
কেন্দ্রটিতে ভোট দেয়ার পর স্থানীয় ভোটার ষাটার্ধো মোশাররফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সু-নাগরিকের দায়িত্ব পালন করলাম। ভোট দেয়া আমাদের দায়িত্ব। আমার পরিবারে ৯টা ভোট। তারা সবাই ভোট দেবে। আমি সকাল সকাল এসেছি। আমার ছেলে, ছেলের বউ পরে আসবে।”
রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসার জাহিদুর রহমান খান জানান, এই কেন্দ্রটিতে মোট ভোটার ৩ হাজার ২২৮জন, যার মধ্যে মাত্র ৫৮টি ভোটগ্রহণ হয়েছে সকাল ১০টা পর্যন্ত। পাশেই রাজমুশুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৪২৭জন, যার মধ্যে ১০টা পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন মাত্র ৫৬জন।
কলাবাগান লেক সার্কাস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ সামাদ খান জানান, মোট চারটি কেন্দ্র (৭১,৭২,৭৩,৭৪) রয়েছে এই স্কুলটিতে। মোট ভোটার ২১৬৫ জন, দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ ২২০টি।
নির্বাচন কমিশনের ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ অ্যাপে দেখা যায়, ঢাকা ১০ আসনের ১২০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৫টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণের হার ছিল ৩ শতাংশ। দুপুর ১২টা নাগাদ ৫২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয় ৯ শতাংশ। দুপুর ২টা নাগাদ ৫০টি কেন্দ্র ভোটগ্রহণ হয় ১৫ শতাংশ।
প্রথম ভোট ফেরদৌসকে দিলেন নাঈমা
ইডেন কলেজের ছাত্রী নাঈমা বেগ এবারই প্রথম ভোট দিলেন, ভোট দেয়ার উচ্ছ্বাস দেখা যায় তার চোখে মুখে। খালা মরিয়ম খানমের সঙ্গে এসেছেন তিনি। প্রথম ভোট দেয়ার অনুভূতি জানিয়ে নাঈম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবারই প্রথম ভোট দিয়েছি। পারিবারিকভাবে আমরা আওয়ামী লীগের সমর্থক। তবে নায়ক ফেরদৌসকে আগে থেকেই ভালো লাগতো। এজন্যই প্রথম ভোট ফেরদৌসকে দিয়েছি।”
নাঈমার খালা মরিয়ম খানম বলেন, “আমাদের পরিবারের সবাই একসঙ্গেই এসেছি ভোট দিতে। ভোট তো আমাদের নাগরিক অধিকার। সেই অধিকার প্রয়োগ করেছি, ভালো লাগছে।”
ছোট্ট আইজা এসেছিল মায়ের সঙ্গে
ভোট দেয়ার বয়স হয়নি, নির্বাচন কি বোঝে না। তবে নৌকার মার্কার স্লোগান মুখস্ত ছোট্ট আইজার। মায়ের সঙ্গে এসেছিল রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। এসে মায়ের সঙ্গে ছবিও তুলেছে।
আইজার মা রাহিমা খাতুন ঊর্মি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ভোটার। সকালে যখন বের হব, তখন থেকেই মেয়েটা আসার জন্য বায়না ধরেছে। এজন্যই ওকে নিয়ে এসেছি। মাইকে স্লোগান শোনে শোনে, ‘জিতবে এবার নৌকা’ স্লোগানটা ওর মুখস্থ হয়ে গেছে।”
আইজাকে স্লোগান দিতে বলার সঙ্গে সঙ্গে সেও বলতে শুরু করে ‘জয় বাংলা/ জিতবে এবার নৌকা’।