গ্রাফিতি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং এনসিটিবি চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানিয়েছেন বিবৃতি দেওয়া ব্যক্তিরা।
Published : 19 Jan 2025, 08:56 PM
আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দেশ-বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশের ১৮৩ নাগরিক।
রোববার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত চিত্রকর্ম সরানো এবং এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামা ছাত্র-জনতার ওপর হামলার নিন্দাও জানিয়েছেন।
‘নেটওয়ার্ক ফর ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ’ ব্যানারে এই বিবৃতি দেওয়া হয়। বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন বিবৃতিতে সই করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “সম্প্রতি ঢাকায় স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি নামের একটি ভুঁইফোড় উগ্র জাতিবাদী সংগঠনের আবির্ভাব দেখা যায়। তারা পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দসংবলিত গ্রাফিতি সরিয়ে ফেলার দাবি জানায়।
“প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) গ্রাফিতিটি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে এনসিটিবি চেয়ারম্যান গণমাধ্যমে বলেন, ‘বইয়ের কোথাও আদিবাসী শব্দ নেই।’ বাস্তবেই ২০২৫ শিক্ষাবছরের পাঠ্যপুস্তকের কোথাও ‘আদিবাসী’ শব্দ নেই।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “পাঠ্যপুস্তকে ভয়ানকভাবে আদিবাসীদের অপরায়ণ ও বিমানবিকীকরণ করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকের এই অপরায়ণ, বৈষম্যের মূলে রয়েছে ১৯৭২ সালে প্রণীত ও ১৭ বার সংশোধিত জাতিবাদী সংবিধান। যেখানে আদিবাসীদের জাতিসত্তার কোনো স্বীকৃতি নেই।”
বিবৃতিতে কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘আদিবাসীদের’ সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া, এনসিটিবির সামনে আদিবাসীদের সমাবেশে হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের ব্যবস্থা করা এবং মিছিলে হামলাকারী পুলিশসহ নির্দেশদাতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
পাঠ্যপুস্তক থেকে আদিবাসী শব্দসংবলিত চিত্রকর্ম সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং এনসিটিবি চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানিয়েছেন বিবৃতি দেওয়া ব্যক্তিরা।
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত একটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। সেখানে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় লেখা ছিল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী; পাশে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ ব্যানারে গত ১২ জানুয়ারি এনসিটিবি ঘেরাও করার পর রাতে ওই বইয়ের অনলাইন সংস্করণ থেকে চিত্রকর্মটি সরিয়ে ফেলা হয়।
এর প্রতিবাদে গত বুধবার বেলা ১১টায় পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতা’ নামে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। পরে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ও একইসময়ে পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাও করার ঘোষণা দেয়। নিজ নিজ কর্মসূচি পালনে উভয়পক্ষ বুধবার পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে পৌঁছালে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় ৩৩ জন আহত হয়েছেন বলে দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।