নজরুলের গান নিয়ে রক অ্যালবাম বের করা এবং কনসার্ট আয়োজনের ব্যাপারে নজরুল ইন্সটিটিউট কাজ করছে বলে জানান উপদেষ্টা।
Published : 19 Feb 2025, 05:09 PM
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা জুলাই অভ্যুত্থানেও প্রেরণা যুগিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
তিনি বলেছেন, “জাতীয় কবি হিসেবে এতদিন তার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছিল না। এবার এটি করা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতে লেখা থাকুক বা না থাকুক, কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের সবার মাঝেই জাতীয় কবি হয়ে হিসেবে ছিলেন। এখন এটা আনুষ্ঠানিকতা তৈরি হল।”
নজরুলের গান নিয়ে রক অ্যালবাম বের করা এবং কনসার্ট আয়োজনের ব্যাপারে নজরুল ইন্সটিটিউট কাজ করছে বলে জানান উপদেষ্টা।
কাজী নজরুল ইসলামকে ‘বাংলাদেশে জাতীয় কবি’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির গেজেট প্রকাশ উদযাপন উপলক্ষে বুধবার ‘নজরুল র্যালি’তে অংশ নিয়ে কথা বলছিলেন উপদেষ্টা।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটের আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে নজরুলের সমাধিতে গিয়ে শেষ হয় শোভাযাত্রা।
এ সময় নজরুলের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি হামদ ও নাত পরিবেশন করা হয়।
নজরুলের গান, কবিতাকে আরও বেশি ছড়িয়ে দিতে নজরুল ইন্সটিটিউট কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা ফারুকী।
নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, “আমি এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেওয়ার পর যখন প্রথম নজরুলের সমাধিতে আসি, তখনই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম- এই কাজটি আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করব। আমার দায়িত্বকালীন সময়ে কাজটি করতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে।”
আয়োজনে নজরুলের হামদ ও নাত পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা, নাশিদ কামাল, ইয়াকুব আলী খান ও সালাউদ্দিন আহমেদ। সবশেষে কবির আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়।
বাংলাদেশের মানুষ কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে জানলেও তার কোনো দালিলিক স্বীকৃতি ছিল না। গত ২৪ ডিসেম্বর ‘জাতীয় কবি’ স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে সরকার।
১৯৭২ সালের ৪ মে যে-দিন কাজী নজরুল ইসলাম দেশে ফেরেন, গেজেটে সেদিন থেকে তাকে জাতীয় কবির স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম।
বৈচিত্র্যময় জীবনের অধিকারী নজরুল ছেলেবেলায় পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘দুখু মিয়া’ নামে।
১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় নজরুলের বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী'। ব্রিটিশ রাজের ভিত কেঁপে উঠেছিল তার অগ্নিগর্ভ কবিতার বজ্রনির্ঘোষে। ব্রিটিশবিরোধী লেখার জন্য বেশ কয়েকবার কারারুদ্ধ হতে হয় তাকে।
একে একে প্রকাশিত হতে থাকে তার গ্রন্থ অগ্নিবীণা, প্রলয়োল্লাস, আগমনী, খেয়াপারের তরণী, ছায়ানট, বিষের বাঁশি, বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী, ব্যথার দান, ঘুমের ঘোরে, মৃত্যুক্ষুধা।
নজরুল প্রতিভার আরেকটি দিক প্রভা ছড়িয়েছে সংগীতে। শ্যামা সংগীত ও ইসলামী গজল- দুই ধারাতেই সমান দখল দেখানো নজরুলের লেখা গানের সংখ্যা চার হাজারের বেশি।
নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
১৯৪২ সালে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্রমশ বাকশক্তি হারান নজরুল। স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসুস্থ কবিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।
১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে ভূষিত করা হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে।
ওই বছর ২৯ অগাস্ট (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র) ঢাকায় মারা যান কবি এই বিদ্রোহী কবি। তাকে সমাহিত করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের উত্তর পাশে।
রেওয়াজ অনুযায়ী বাংলা পঞ্জিকার তারিখ মেনে তার জন্মদিন ও মৃত্যুদিন পালন করে বাংলাদেশ।
আগের খবর
অবশেষে রাষ্ট্রের দলিলে কাজী নজরুলকে জাতীয় কবির স্বীকৃতি
অবশেষে জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন কাজী নজরুল
সরকারি গেজেটে জাতীয় কবির স্বীকৃতির দাবি নজরুল পরিবারের
জাতীয় কবিকে নিয়ে আর গেজেটের প্রয়োজন নেই: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী