“প্রাকৃতিক উপকরণের শরবত শরীরের জন্য ভালো; কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়েও কাজ করে,” বলেন অধ্যাপক নাজমা শাহীন।
Published : 03 Mar 2025, 05:47 PM
গরমের শুরুতে রোজা পড়ায় ইফতারিতে এবার ভেষজ শরবতের চাহিদা তুঙ্গে।
ইসবগুলের ভুসি, লেবু, তোকমা দানা, তিসি, চিয়া সিড, তিল- এমন বাহারি উপকরণ দিয়ে শরবত তৈরির প্রবণতা বাড়ছে।
সুগন্ধি ও স্বাদে ভিন্নতা আনতে অনেকেই করছেন পুদিনা পাতার ব্যবহার। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার বাজারগুলোতে এ পাতার সরবরাহ বেড়েছে।
গরমের পাকা বেল উঠেছে খানিকটা বাড়তি দামে। কেবল একটি উপকরণ দিয়ে শরবত তৈরিতে যুক্ত হয়েছে বিটরুট; জনপ্রিয় হচ্ছে এর গুঁড়াও। হাতিরপুল বাজার ও কারওয়ান বাজারে বিটরুট ফল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে।
শরবতের উপকরণগুলো শুকনো হওয়ায় দোকানের পাশাপাশি সোশাল মিডিয়াতেও তা বিক্রি হচ্ছে নানা মোড়কে। এ ধরনের শরবতের চাহিদা বাড়ায় রোজার শুরুতেই কিছুটা দাম বেড়েছে এসব উপকরণের।
অন্যতম উপকরণ ইসবগুলের ভুষির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ১০৫০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইসবগুলের দাম কেজিতে ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মত বেড়েছে জানিয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথম দিকেই যা বিক্রি হয়; এক পোটলা (২৫০ গ্রাম) নিলে অনেকের ১৫-২০ দিন চলে যায়।
“তাই কেজিতে দাম বাড়লেও কেউ তো এক কেজি নেয় না, পোষায় নেয়। ৫০, ১০০ টাকার পোটলা বেশি চলে।”
গ্রাহক টানতে ১০০, ২০০ ও ২৫০ গ্রাম ওজনের ইসবগুলের প্যাকেট সারি করে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। স্থায়ী ব্যবসায়ীর সঙ্গে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ফেরি করে বেচছেন ৫০ থেকে ২০০ টাকার প্যাক।
কেবল ইসবগুল নয়, এসব ব্যবসায়ীর কাছেই মিলছে তোকমা দানা, তিসি, চিয়া সিড, তিলের মতো উপকরণ।
ক্রেতারা এসব উপকরণ যেমন আলাদা নিতে পারছেন, আবার চাইলে মিশ্রণও মিলছে।
কারওয়ান বাজারে বেসরকারি একটি অফিসে ১৬ বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন ফাতিমা খাতুন। অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে ৫-৭ ধরনের উপকরণের মিশ্রণের প্যাক প্রায়ই কেনেন তিনি।
“বাসায় গিয়ে এতগুলো মিশিয়ে শরবত তৈরি করার মত সময় তো আমার নাই। আলাদা আলাদা কিনতে গেলে তো টাকা বেশি লাগবে। ১০০ গ্রামের নিচে তো চাওয়াই যায় না।’’
মেশানো প্যাকেট কিনলে বেশি সুবিধা মন্তব্য করে ফাতেমা বলছিলেন, “সবগুলো মেশানো ৩৫০ গ্রামের প্যাকেট কিনলাম ২০০ টাকায়। আমার ১০ দিন চলে যাবে, এরপর আবার কিনব। অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার পথেই পাওয়া যায়।’’
বিক্রেতা আয়নাল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি আগে কিনেছিলাম। তাই কম দামে দিতে পারছি। ১০৫০ টাকায় ইসবগুলের ভুসি কিনেছিলাম। এখন কিনতে গেলে ১৪০০ টাকার মত লাগবে।’’
মান অনুযায়ী খোলা ও প্যাকেট দুই ধরনের ইসবগুলের ভুসি বিক্রি করছেন কারওয়ান বাজারের আরেক ব্যবসায়ী আবুল হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “১০০ গ্রাম ১০০ টাকারও আছে, ৬০ টাকারও আছে। যেমন মান, তেমন দাম।’’
গরমকালে দীর্ঘ সময় পেট খালি থাকায় ভারী ও ভাজা-পোড়া ইফতারিতে পেটের নানা সমস্যা দেখা দেয়। আর সেই কারণে ভেষজ শরবতে জোর দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পুষ্টিবিদ অধ্যাপক নাজমা শাহীন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক উপকরণের শরবত শরীরের জন্য ভালো। কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে কাজ করবে শরবত। পানির চাহিদা তৈরি মেটাতে শরবত ভালো উপাদান।’’
ডায়বেটিক রোগীদের চিনি ছাড়া শরবত খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক নাজমা বলেন, “শরবতে অনেকেই খুব ঠান্ডা পানি ব্যবহার করেন। এটি না করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।’’
অনেকেই পেট ভালো রাখতে ভরসা করেন বেলের শরবতে। মানিকগঞ্জ থেকে দুই ঝাঁপি বেল নিয়ে ঢাকার কারওয়ান বাজারে এসেছেন ইয়াকুব মোল্লা।
বাইরে সবুজ বর্ণের হলেও ভেতরটা পাকা মন্তব্য করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একদম পাকা বেলও আনছি। দু-একদিন রাইখা খেতে পারব, সেই বেলও আছে।”
ইয়াকুব প্রতিটি বেল বেচছেন ৫০ টাকা করে। দুটি সামান্য পাকা ও একটি পুরো পাকা বেল নিয়ে বিক্রেতাকে ১৪০ টাকা দিতে চাইলেন নাজমুল হাসান।
ইয়াকুব টাকা ফেরত দিয়ে বললেন, “১৫০ টাকাই দিতে হবে।”
শেষমেষ ১৫০ টাকায় তিনটি বেল নিলেন নাজমুল হাসান।
হলুদ বর্ণের পাকা বেল আকার ভেদে ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা প্রতিটি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
লেবুর ‘টক’ বেড়েছে
সারা বছর সরবরাহ থাকলেও লেবুর মূল মৌসুম বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস। সেই সময়ের আগে রোজা পড়ায় লেবুর হালি চড়েছে ৬০-১০০ টাকায়।
চাহিদার শীর্ষে থাকা এলাচি লেবুর দাম হালি প্রতি উঠেছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। আগাম জাতের লেবু উৎপাদন হওয়ায় দেড় মাস আগেই বাজারে এসেছে পণ্যটি।
বাজারে লেবুর জোগান থাকলেও চড়া দামের কারণে অনেকেই ফিরছেন মুখ গোমড়া করে।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক মসীহুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুষ্ক মৌসুমে লেবুর ফলন কমই থাকে। এখন যে লেবু বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তাতে রসের পরিমাণও কম।’
“মধ্য এপ্রিলের আগে লেবুর সরবরাহ খুব একটা বাড়বে না এখনকার চেয়ে। যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে লেবুর পরিপক্কতা বাড়বে। রসের পরিমাণ তখন আরেকটু বৃদ্ধি পাবে।’’
রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচা বাজারে দেশি জাতের প্রতি হালি কাগজি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। বড় আকারের এলাচি লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।
বিক্রেতা মোকবুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লেবু তো উঠবে বৈশাখে। এটা বারো মাসি। তখন দাম কমে যাবে। লেবুর চাহিদা বেশি দেখেই তো আড়তে দাম বাড়ায়।’’
এ বাজারেই লেবু কিনতে আসা এলিফেন্ট রোডের বাসিন্দা ইহসান খন্দকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটু টক টক স্বাদের জন্য আমি প্রতিদিনই লেবু কিনি। রাতের খাবারেও খাই।
“দাম বেশি নিচ্ছে, কিন্তু আমার তো লাগবে। তাই আগে এক হালি নিলে এখন দুইটা করে কিনি, প্রতিদিনই কিনি।”