বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলায় অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে।
বুধবার এ মামলার প্রতিবেদন জমার তারিখ ছিল। কিন্তু তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিআইডির পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন তা জমা দিতে না পারায় আদালতের কাছে সময় চান।
সেই আবেদন মঞ্জুর করে ঢাকা মহানগর হাকিম শান্ত ইসলাম মল্লিক আগামী ২১ জুন প্রতিবেদন জমার নতুন তারিখ রাখেন।
মামলার বাদী ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দিন দশেক আগে তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তাকে বলেছি ৪ নভেম্বর ঘটনার দিনে বিকাল ৫টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করলে আসল ঘটনা অর্থাৎ অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িতরা চিহ্নিত হবে।"
গত ১৬ এপ্রিল গোয়েন্দা পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আপত্তি জানিয়ে ফারদিনের বাবা কাজী নুরউদ্দিন রানার ‘নারাজি’ আবেদন গ্রহণ করে ঢাকা মহানগর হাকিম শান্ত ইসলাম মল্লিক মামলাটি সিআইডিকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।
এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদলে যায়। গত ৩ মে ঊর্ধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির পরিদর্শক বেলায়েত হোসেনকে।
ফারদিনের লাশ উদ্ধার ও মামলা
বুয়েটের পুরকৌশলের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফারদিন (২৪) বিতার্কিক ছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বরে স্পেনের এক অনুষ্ঠানে তার যাওয়ার কথা ছিল।
তার এক মাস আগে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার ডেমরার কোনাপাড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন ফারদিন। বাবা-মার বড় ছেলে ফারদিন কোনাপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
ফারদিন বেরিয়ে যাওয়ার সময় মাকে বলে গিয়েছিলেন, পরদিন তার পরীক্ষা রয়েছে বলে রাতে বুয়েটের হলেই থাকবেন। পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরবেন।
কিন্তু পরদিন পরীক্ষায় তার অনুপস্থিত থাকার খবর জেনে খোঁজাখুজি করেও ছেলেকে না পেয়ে থানায় জিডি করেন নূরউদ্দিন রানা। তিন দিন পর ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ফারদিনের লাশ পাওয়া যায়।
এরপর ১০ নভেম্বর নূরউদ্দিন রানা হত্যা মামলা করেন। তাতে আসামি করেন বুশরাকে, যার সঙ্গে ফারদিন দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত ছিলেন। তখন পুলিশ বুশাকে গ্রেপ্তার করে, হেফাজতে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে।
ফারদিন ‘আত্মহত্যা’ করেছেন জানিয়ে পুলিশ এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর বুশরাকে জামিন দেয় আদালত।
পরে বুশরার পক্ষ থেকে স্থায়ী জামিনের আবেদন করা হলে আদালত তার জামিন স্থায়ী করেন।
ডিবির প্রতিবেদন কী ছিল?
আগের তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন গত ৬ ফেব্রুয়ারি।
সেখানে বলা হয়, নানা কারণে হতাশা থেকে ফারদিন আত্মহত্যা করেন। তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশও করা হয় সেখানে।
তবে ফারদিনের বাবা কাজী নুরউদ্দিন রানার ধারণা, তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। সেজন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে আদালতে আপত্তি জানানোর কথা তিনি শুরু থেকেই বলে আসছিলেন।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, “স্পেনে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় যাওয়ার বিমান ভাড়া সংগ্রহ করতে না পারা, ছোট দুই ভাইকে টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ জোগানোয় সংগ্রাম করতে হওয়াসহ নানা কারণে হতাশা থেকে ফারদিন আত্মহত্যা করেন।”
তাতে আপত্তি জানিয়ে মামলার বাদী কাজী নুরউদ্দিন রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে বলেছে বলে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তা কোনোভাবে বিশ্বাসযোগ্য নয়, গ্রহণযোগ্য নয়, ভিত্তিহীন। সেই প্রেক্ষিতে আমি আজ নারাজি দিয়েছি। আমার ছেলের সামাজিক, পারিবারিক এবং অর্থনৈতিক কোনোভাবেই কোনো রকম অসঙ্গতি ছিল না, প্রচ্ছন্ন একটা জীবনযাত্রা ছিল তার। সেক্ষেত্রে আত্মহত্যা করার কথা না।
“এ তদন্তে যা করেনি, সেটা হচ্ছে যে, সে বাসা থেকে বের হওয়ার পর যেসব এলাকায় বিরচণ করেছে, সেসব এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজগুলো যদি নিয়ে আসা হত, বিশেষ করে রাত ১০টার পর সে কীভাবে ছিল, তাহলে দেখা যেত তাকে অপরহণকারীরা তুলে নিয়ে গেছে এবং যাত্রাবাড়ীতে ছেড়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা তাকে যাত্রাবাড়ী থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে। সুতরাং পূর্ণাঙ্গ সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সামনে আনা ছাড়া হত্যার রহস্য বের করা সম্ভব না।”
মামলার বাদীর ভাষ্য, “আশা করি সিআইডি এই জায়গাটিতে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকবে।