মামলার বাদী ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা জানান, বুধবার তদন্তভার পেয়েই তাকে ফোন করেছিলেন সিআইডির নতুন তদন্ত কর্মকর্তা।
Published : 04 May 2023, 01:03 PM
বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর ঘটনায় রামপুরা থানার হত্যা মামলাটির অধিকতর তদন্তের দfয়িত্ব পেয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বেলায়েত বলেছেন, বুধবার তিনি মামলাটি তদন্তের জন্য উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেয়েছেন। আগামী সপ্তাহে আদালতে লিখিত আবেদন করবেন মামলার নথিপত্র নেওয়ার অনুমতির জন্য।
মামলার বাদী ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা জানান, বুধবার তদন্তভার পেয়েই তাকে ফোন করেছিলেন নতুন তদন্ত কর্মকর্তা বেলায়েত।
ফোনে তিনি নূরউদ্দিন রানার পরিচয় ও পেশা জানতে চান। বলেন, মামলাটির ভালোভাবে তদন্ত করার সাধ্যমত চেষ্টা করবেন তিনি।
এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ বলেছিল, ফারদিন খুন হননি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আদালতে নারাজি আবেদন করেন ফারদিনের বাবা। তার আবেদন গ্রহণ করে গত ১৬ এপ্রিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম মো. শান্ত ইসলাম মল্লিক।
এ মামলায় অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সিআইডিকে ২৪ মে পর্যন্ত সময় দিয়েছেন বিচারক।
আগের তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন গত ৬ ফেব্রুয়ারি।
সেখানে বলা হয়, নানা কারণে হতাশা থেকে ফারদিন আত্মহত্যা করেন। তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশও করা হয় সেখানে।
তবে ফারদিনের বাবা কাজী নুরউদ্দিন রানার ধারণা, তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। সেজন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে আদালতে আপত্তি জানানোর কথা তিনি শুরু থেকেই বলে আসছিলেন।
বুয়েটের পুরকৌশলের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফারদিন (২৪) বিতার্কিক ছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বরে স্পেনের এক অনুষ্ঠানে তার যাওয়ার কথা ছিল।
তার এক মাস আগে গত বছরের ৪ নভেম্বর দুপুরে ঢাকার ডেমরার কোনাপাড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন ফারদিন। বাবা-মার বড় ছেলে ফারদিন কোনাপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
ফারদিন বেরিয়ে যাওয়ার সময় মাকে বলে গিয়েছিলেন, পরদিন তার পরীক্ষা রয়েছে বলে রাতে বুয়েটের হলেই থাকবেন। পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরবেন।
কিন্তু পরদিন পরীক্ষায় তার অনুপস্থিত থাকার খবর জেনে খোঁজাখুজি করেও ছেলেকে না পেয়ে থানায় জিডি করেন নূরউদ্দিন রানা। তিন দিন পর ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ফারদিনের লাশ পাওয়া যায়।
এরপর ১০ নভেম্বর নূরউদ্দিন রানা হত্যা মামলা করেন। তাতে আসামি করেন বুশরাকে, যার সঙ্গে ফারদিন দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত ছিলেন। তখন পুলিশ বুশাকে গ্রেপ্তার করে, হেফাজতে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে।
ফারদিন ‘আত্মহত্যা’ করেছেন জানিয়ে পুলিশ এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে বুশরাকে জামিন দেয় আদালত।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, “স্পেনে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় যাওয়ার বিমান ভাড়া সংগ্রহ করতে না পারা, ছোট দুই ভাইকে টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ জোগানোয় সংগ্রাম করতে হওয়াসহ নানা কারণে হতাশা থেকে ফারদিন আত্মহত্যা করেন।”
মামলার বাদী কাজী নুরউদ্দিন রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ছেলের সামাজিক, পারিবারিক এবং অর্থনৈতিক কোনোভাবেই কোনো রকম অসঙ্গতি ছিল না, প্রচ্ছন্ন একটা জীবনযাত্রা ছিল তার। সেক্ষেত্রে আত্মহত্যা করার কথা না।
“এ তদন্তে যা করেনি, সেটা হচ্ছে যে, সে বাসা থেকে বের হওয়ার পর যেসব এলাকায় বিরচণ করেছে, সেসব এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজগুলো যদি নিয়ে আসা হত, বিশেষ করে রাত ১০টার পর সে কীভাবে ছিল, তাহলে দেখা যেত তাকে অপরহণকারীরা তুলে নিয়ে গেছে এবং যাত্রাবাড়ীতে ছেড়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা তাকে যাত্রাবাড়ী থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে। সুতরাং পূর্ণাঙ্গ সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সামনে আনা ছাড়া হত্যার রহস্য বের করা সম্ভব না।”
মামলার বাদী বলেন, “আশা করি সিআইডি এই জায়গাটিতে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকবে।”
পুরনো খবর
ফারদিনের মৃত্যু: সিআইডিকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ
ফারদিন হত্যা মামলা: ‘নারাজি’ দিতে সময়ের আবেদন বাবার
আত্মহত্যা করেন ফারদিন- উল্লেখ করে হত্যা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা
সেই রাতে ৪ স্থানে ঘোরেন ফারদিন, যাত্রাবাড়ী থেকে ওঠেন লেগুনায়: ডিবি
ফারদিন খুন হননি, আত্মহত্যা: ডিবি-র্যাব
ফারদিনের ‘আত্মহত্যা’: র্যাব পুলিশ ভালোভাবে বুঝেই বলেছে, বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী