“একই পদে দুই ধরনের বেতন থাকাটা কখনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না,” বলছেন আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র।
Published : 15 Sep 2024, 07:00 PM
বেতন গ্রেড উন্নয়নের দাবি বাস্তবায়নে অর্থসচিব গড়িমসি করছেন অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগ চেয়েছেন আন্দোলনরত অডিটররা।
রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানানো হয়।
পরে বিকালে সেগুনবাগিচায় হিসাব ভবনের সামনে থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেখানে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র আহমেদুর রহমান ডালিম বলেন, বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করার দাবি পূরণে মঙ্গলবার থেকে তারা অফিস চলাকালে অনশন পালন করবেন।
মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি), হিসাব মহানিয়ন্ত্রক (সিজিএ) ও কন্ট্রোলার জেনারেল অব ডিফেন্স ফাইন্যান্স (সিজিডিএফ) কার্যালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তরের ১১তম গ্রেডের প্রায় ৭ হাজার কর্মকর্তা ২৫ অগাস্ট থেকে কর্মবিরতিতে আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আহমেদুর রহমান ডালিম বলেন, “বর্তমান অর্থসচিব দেশের অডিট অ্যান্ড এক্যাউন্টস বিভাগকে অকার্যকর করার মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর অর্থ সচিবের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করছি।
“বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য অর্থ সচিব দায়ী এবং এর দায় তাকেই নিতে হবে। কারণ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠির ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের অডিটর পদটি ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত না করার জন্য বিভিন্ন ধরনের তালবাহানা করছেন।”
অভিযোগের বিষয়ে অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদারের বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
বছর কয়েক আগে রিট মামলার মাধ্যমে ৬১ জন অডিটরের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত হয়। পরে অন্যরাও একই পথ অনুসরণ করে গ্রেড উন্নয়নের পক্ষে রায় পান।
কিন্তু অর্থ বিভাগের একটি ‘দুষ্টু চক্রের’ কারণে আর কেউ দশম গ্রেডে উন্নীত হতে পারেনি বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। তারা জানান, বিষয়টি সুরাহা করতে গত ১২ আগস্ট অর্থ বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি দেন অতিরিক্ত উপ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (পার্সোনেল)। পরের দিন অর্থ বিভাগ চিঠি দিয়ে আইন ও বিচার বিভাগের মতামত জানতে চায়।
অডিটর পদের বেতন গ্রেড দশমে উন্নীত করা যেতে পারে বলে গত ২০ অগাস্ট মতামত জানায় আইন ও বিচার বিভাগ। এরপর আর অগ্রগতি না হওয়ায় ২৫ অগাস্ট থেকে তারা কর্মবিরতি শুরু করেন।
আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র ডালিম বলেন, “একই পদে দুই ধরনের বেতন থাকাটা কখনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এমন বিষয় কর্তৃপক্ষকেই নৈতিকভাবে এবং দায়িত্বশীল হয়ে সমাধান করতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা কোনো আন্দোলন চাই না, আন্দোলন আমাদের কাজ না। আমরা আমাদের কর্মে ফিরে যেতে চাই। আমরা আমাদের অধিকার আদালতের সিদ্ধান্তে অতি দ্রুত অডিটর পদটি ১০ম গ্রেডে বাস্তবায়ন চাই।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছিলেন সিজিএ কার্যালয়ের অডিটর মনিরুজ্জামান, মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, আব্দুল আজিজ, আল আমিন, মনজুরুল ইসলাম।
অনশন কর্মসূচি
বিকালে সেগুনবাগিচায় হিসাব ভবনের সামনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন মুখপাত্র ডালিম।
তিনি বলেন, “আমাদের এই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ১০ম গ্রেড (উন্নীতকরণ) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষকে শান্ত প্রিয়ভাবে আহ্বান করা হলেও তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। ফলে এ নিয়ে অডিট অ্যান্ড একাউন্টস বিভাগের অডিটরদের মধ্যে চরম হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
“মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে প্রতিদিন বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত আমরা অনশন কর্মসূচি পালন করব। পাশাপাশি জিরো ওয়ার্ক যে কর্মসূচিতে আমরা আছি, সেটা চলমান থাকবে। কোনো দাপ্তরিক কাজ চলবে না।”
দেশের সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় নিরীক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত এই অডিটরদের আন্দোলনের কারণে ওই সব প্রতিষ্ঠানের বিল পাস হচ্ছে না।